আফগানিস্তানের বাগরাম ঘাঁটি ফিরে পেতে ট্রাম্প মরিয়া কেন

আল-জাজিরার এক্সপ্লেইনার

প্রকাশ : ০১ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আফগানিস্তানে থাকা বাগরাম সামরিক ঘাঁটি আবারও নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার দাবি তুলেছেন। ২০২০ সালে তালেবানের সঙ্গে একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করার পর যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেয়। পাঁচ বছর পর সেই ঘাঁটি আবারও চাচ্ছেন ট্রাম্প। গত ১৮ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, আমরা সেটা (বাগরাম) ফেরত চাই। আমরা তাদের (তালেবান) কোনো কিছু ছাড়াই দিয়ে দিয়েছিলাম।

এর দুদিন পর, ২০ সেপ্টেম্বর ট্রাম্প তার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে হুঁশিয়ারি দিয়ে লেখেন, যদি আফগানিস্তান বাগরাম ঘাঁটি আমাদের ফেরত না দেয়, তাহলে খারাপ কিছু ঘটবে। তবে তালেবান এ দাবি সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে।

বাগরাম আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৫০-এর দশকে এটি তৈরি করে, পরে এটি তালেবান, উত্তর জোট এবং সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে যায়। ২০০১ সালের পর যুক্তরাষ্ট্র এই ঘাঁটি তাদের যুদ্ধ অভিযানের প্রধান কেন্দ্র বানায়। ঘাঁটিতে ছিল দুটি রানওয়ে। হাজারো মার্কিন সেনা, একটি হাসপাতাল, কয়েদিদের জন্য জেলখানা এমনকি পিৎজা হাট ও সাবওয়ের মতো চেইন রেস্টুরেন্টও ছিল। ২০২১ সালের আগস্টে যুক্তরাষ্ট্র হঠাৎ করে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেয় এবং ঘাঁটি ফেলে চলে যায়। এরপর তালেবান বাগরাম দখল করে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের দাবি শুধু সামরিক সরঞ্জামের জন্য নয়, বরং এর প্রতীকী ও কৌশলগত মূল্য অনেক বেশি। ক্রাইসিস গ্রুপের বিশ্লেষক ইব্রাহীম বাহিস বলেন, এ ঘাঁটি ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি সোভিয়েত ইউনিয়ন তৈরি করেছিল। এছাড়া এর অবস্থান খুবই কৌশলগত।

বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের কারণে আফগানিস্তানে অবস্থান আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বাগরাম ঘাঁটি চীনা সীমান্ত থেকে মাত্র ৮০০ কিলোমিটার দূরে। ট্রাম্প দাবি করেন, বাগরাম চীনের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কেন্দ্র থেকে মাত্র এক ঘণ্টার দূরত্বে।

তালেবান পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে যে, তারা ঘাঁটি ফিরিয়ে দেবে না। ২১ সেপ্টেম্বর তালেবানের মুখপাত্র হামদুল্লাহ ফিত্রাত বলেন, দোহা চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে তারা আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাস্তবে এ ঘাঁটি ফিরে পাওয়া সহজ হবে না। এটি যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বঘোষিত ‘আফগানিস্তানে যুদ্ধ সমাপ্তি’ নীতিরও পরিপন্থি হবে। এছাড়া তালেবান ঘাঁটি দিয়ে দিলে তাদের ‘বিদেশি দখলদারবিরোধী’ অবস্থানও প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

তবে কিছু বিশ্লেষকের মতে, এটি হয়তো ট্রাম্প প্রশাসনের দরকষাকষির কৌশল হতে পারে। হয়তো তারা বড় কিছু দাবি করে ছোট কিছু (যেমন অস্ত্র বা সরঞ্জাম ফেরত) আদায় করতে চায়। বিশ্লেষক ইব্রাহীম বাহিস বলেন, সবকিছু নির্ভর করছে তালেবান কী দিচ্ছে তার ওপর তা কি খনিজ সম্পদ, বেসরকারি বিনিয়োগ, না কি সামরিক ঘাঁটি বাগরাম?