ক্ষমা চাইলেন নেতানিয়াহু ইসরায়েলে ব্যাপক বিক্ষোভ
দুর্নীতির মামলা
প্রকাশ : ০২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক

গত কয়েক বছর ধরে চলমান দুর্নীতির মামলা থেকে রেহাই পেতে প্রেসিডেন্ট ইসাক হেরজগের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। এক ভিডিওবার্তায় তিনি নিজেই এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গত রোববার এক সংক্ষিপ্ত ভিডিওবার্তায় নেতানিয়াহু নিজেই এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ভিডিওবার্তায় তিনি বলেছেন, ‘আমি মামলা থেকে অব্যাহতি পেতে মাননীয় প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে চিঠি লিখেছি। আমার আইনজীবীরা এরইমধ্যে সেই চিঠি প্রেসিডেন্টের দপ্তরে পৌঁছে দিয়েছেন। আমি আশা করছি যারা দেশের ভালো চান, তাদের সবাই এ পদক্ষেপ সমর্থন করবেন।
ইসরায়েলের প্রেসিডেন্টের দপ্তর থেকে নেতানিয়াহুর চিঠির প্রাপ্তিস্বীকার করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট হেরজগ এই চিঠিকে ‘বিস্ময়কর’ উল্লেখ করে বলেছেন, ‘এটি এমন একটি বিস্ময়কর অনুরোধ— যার গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্য আছে। এ ইস্যুর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যাবতীয় তথ্য ও মতামত গ্রহণের পর প্রেসিডেন্ট এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।’
এদিকে, নেতানিয়াহুর ভিডিওবার্তা প্রকাশের পরপরই ইসরায়েলের বাণিজ্যিক রাজধানী তেল আবিবে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্টের বাসভবনের সামনেও মিছিল-সমাবেশ করেছেন। জনগণের বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেটের এমপিরাও। বিরোধীদলীয় এমপি নামা লাজিমি গত রোববার বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন। প্রেসিডেন্টের বাসভবনের সামনের সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন তিনি। সেখানে তিনি বলেন, ‘যদি প্রেসিডেন্ট এই অনুরোধে সাড়া দিয়ে ক্ষমা ঘোষণা করেন, তাহলে ইসরায়েল পুরোপুরি একটা বানানা রিপাবলিকে পরিণত হবে।’ এসময় বিক্ষোভকারীরা স্লোগান ধরেন, ‘ক্ষমার মানে বানানা রিপাবলিক’।
মিছিল সমাবেশে বিক্ষোভকারীরা নেতানিয়াহুর ব্যঙ্গাত্মক বিভিন্ন কুশপুতুল নিয়ে এসেছিলেন। ইসরায়েলের বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মী শিকমা ব্রেসলারও ছিলেন সেই সমাবেশে। নিজ বক্তব্যে তিনি বলেন, তিনি এই দেশকে ছিন্নভিন্ন করে ফেলেছেন। তার কোনো মূল্য না দিয়ে, কোনো দায়িত্ব না নিয়ে এখন তিনি বিচার থেকে অব্যহতি চাইছেন। ইসরায়েলের সাধারণ জনগণ এটা কখনও মেনে নেবে না। এর সঙ্গে আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ জড়িত। এক বার্তায় ইসরায়েলের প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা ইয়াইর লাপিদ বলেছেন, নেতানিয়াহু এখন পর্যন্ত প্রকাশ্যে নিজের অপরাধ স্বীকার করেননি, অনুতাপ প্রকাশ করেননি। তার উচিত রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়া। এখানে ক্ষমার কোনো প্রশ্নই আসতে পারে না। তাকে ক্ষমা করা উচিত হবে না। প্রসঙ্গত, জেরুজালেম জেলা আদালতে ঘুষ, প্রতারণা ও বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগে ৩টি দুর্নীতি মামলা চলছে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে। ২০১৯ সালে এই মামলাগুলো দায়ের ও সেগুলোর বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়। একটি মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, নেতানিয়াহু এবং তার স্ত্রী সারাহ ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে উপহার হিসেবে অলঙ্কার, সিগার এবং দামী মদ নিয়েছিলেন, যেগুলোর সম্মিলিত মূল্য প্রায় ২ লাখ ৬০ হাজার ডলার। দ্বিতীয় মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, গণমাধ্যমের কাছ থেকে অধিকতর ইতিবাচক প্রচার পেতে তিনি মিডিয়া মোগলদের অবৈধ রাষ্ট্রীয় সুবিধা দিয়েছেন।
আর তৃতীয় মামলটির অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি টেলি যোগাযোগ প্রতিষ্ঠান বেজেককে রাষ্ট্রীয় সুবিধা পাইয়ে দিতে কোম্পানি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ঘুষ নিয়েছেন নেতানিয়াহু।
২০১৯ সালে যখন মামলাগুলোর বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়, সেসময় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন নেতানিয়াহু এবং নিজের প্রভাব খাটিয়ে সেগুলোর বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত রেখেছিলেন তিনি। পরে ২০২১ সালের জুনে ফের সেই মামলাগুলো পুনরুজ্জীবিত করা হয়। সে সময় নেতানিয়াহু ছিলেন বিরোধী দলীয় নেতা। ২০২১ সাল থেকে মামলার কার্যক্রম নিয়মিত চললেও গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর এই কার্যক্রম স্থগিত রাখতে জরুরি নির্দেশ দিয়েছিলেন ইসরায়েলের বিচারমন্ত্রী ইয়ারিভ লেভিন। গত অক্টোবরে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির পর ফের শুরু হয়েছে এসব মামলার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকার রেকর্ডের মালিক নেতানিয়াহু। একই সঙ্গে, ইসরায়েলের ইতিহাসে তিনিই প্রথম প্রধানমন্ত্রী, যার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে। তবে মামলার শুরু থেকেই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু।
