গাজায় কোনো বাহিনীর কর্তৃত্ব মেনে নেবে না হামাস
প্রকাশ : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক

গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যামূলক যুদ্ধের অবসানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পরিকল্পনার দ্বিতীয় পর্বের দিকে এগোতে প্রস্তুত হচ্ছে ইসরায়েল ও হামাস। তবে অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি উপত্যকায় একটি আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনীর অনির্ধারিত ভূমিকা নিয়ে মতভেদ দেখা দিয়েছে দুপক্ষের মধ্যে। গত রোববার হামাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বাসেম নাইম বলেছেন, মার্কিন খসড়া প্রস্তাবটির জন্য অনেক ব্যাখ্যা প্রয়োজন। চলমান যুদ্ধবিরতির সময় অস্ত্র ব্যবহার বন্ধ রাখা নিয়ে আলোচনা করতে হামাস প্রস্তুত থাকলেও আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনীর (স্টাবিলাইজেশন ফোর্স) নিরস্ত্রীকরণের দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়টি তারা মেনে নেবে না।
বাসেম নাইম বলেন- আমরা সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় জাতিসংঘের বাহিনীকে স্বাগত জানাই, যারা যুদ্ধবিরতি চুক্তি তদারকি করবে, লঙ্ঘন সম্পর্কে রিপোর্ট করবে এবং যে কোনো ধরনের উত্তেজনা রোধ করবে। তবে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে এ বাহিনীর কোনো ধরনের কর্তৃত্ব থাকুক, তা হামাস মানবে না। তার এই মন্তব্যটি এসেছে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর মন্তব্যের পর। নেতানিয়াহু বলেছেন, তিনি এই মাসের শেষে মার্কিন পরিকল্পনা অনুসারে শান্তি প্রক্রিয়ার নতুন পর্বে প্রবেশ নিয়ে আলোচনা করতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
তিনি বলেন, এই বৈঠকের মূল লক্ষ্য হবে গাজায় হামাসের শাসন শেষ করা এবং ছিটমহলটির নিরস্ত্রীকরণের জন্য প্রস্তাবিত পরিকল্পনায় থাকা তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ নিশ্চিত করা। জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জের সঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে নেতানিয়াহু বলেন, শান্তি প্রক্রিয়ায় আমাদের দ্বিতীয় পর্ব রয়েছে, যা কোনো অংশে কম কঠিন নয়, আর তা হলো হামাসের নিরস্ত্রীকরণ এবং গাজার সামরিকীকরণ দূর করা। ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের অস্ত্র স্থগিত বা সংরক্ষণের বিষয়ে নাইমের মন্তব্য ইসরায়েলের পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণের দাবি পূরণ করবে কি না, তা স্পষ্ট নয়। হামাসের ওই কর্মকর্তা বলেন, তার গোষ্ঠী ‘প্রতিরোধের অধিকার’ ধরে রেখেছে এবং ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে পরিচালিত প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে অস্ত্র সমর্পণ করা যেতে পারে, যেখানে সম্ভাব্য দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতি পাঁচ থেকে দশ বছর স্থায়ী হতে পারে। গাজার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের খসড়া পরিকল্পনা ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতার পথ খোলা রাখলেও, নেতানিয়াহু দীর্ঘদিন ধরে তা প্রত্যাখ্যান করে আসছেন এই বলে যে, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র সৃষ্টি করা হামাসকে পুরস্কৃত করার শামিল হবে। ট্রাম্পের ২০-দফা পরিকল্পনাটি স্থিতিশীলতা বাহিনী প্রতিষ্ঠা এবং একটি আন্তর্জাতিক ‘শান্তি বোর্ড’ এর অধীনে ফিলিস্তিনি সরকার গঠনের মতো পরিকল্পনার জন্য সাধারণ পথ বাতলে দেয়, তবে এতে কোনো নির্দিষ্ট বিবরণ বা সময়সীমা দেওয়া হয়নি। মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, তারা আগামী বছরের শুরুতে গাজায় সেনা মোতায়েনের বিষয়টি নিয়ে আশা করছেন, কিন্তু ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশ সেনা সরবরাহ করতে সম্মত হলেও, এই বাহিনী গঠনের কোনো রূপরেখা নেই এবং এর সঠিক কাঠামো, কমান্ড ব্যবস্থা এবং দায়িত্বসমূহ এখনও সংজ্ঞায়িত করা হয়নি।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকেও পরিকল্পনার অস্পষ্টতা স্বীকার করতে দেখা যায়। তিনি গত রোববার প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘সময়সীমা কী হবে? কোন বাহিনী আসছে? আমাদের কি আন্তর্জাতিক বাহিনী থাকবে? না থাকলে বিকল্প কী? এই সব বিষয় নিয়েই আলোচনা চলছে।’ ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই পরিকল্পনার দ্বিতীয় পর্ব-যা অক্টোবরের ৭ তারিখের হামলায় নিহত শেষ ইসরায়েলি বন্দিকে (একজন পুলিশ কর্মকর্তা) হামাস ফিরিয়ে দিলে শুরু হবে-তা আরও কঠিন হবে। এই পরিকল্পনার প্রথম পর্ব এরইমধ্যে কঠিন প্রমাণিত হয়েছে, কারণ যুদ্ধবিরতি চলাকালীন সময়েও ইসরায়েল গাজায় বোমা হামলা অব্যাহত রেখেছে, যার ফলে স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে ৩৭০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। অন্যদিকে, ইসরায়েল হামাসের বিরুদ্ধে বন্দি ফেরতের প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত করার অভিযোগ এনেছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ‘হলুদ রেখা’ কে ‘নতুন সীমান্ত’ বলছে
পরিকল্পনার প্রাথমিক পদক্ষেপে ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় তথাকথিত ‘হলুদ রেখা’র পিছনে নিজেদের অবস্থান থেকে সরে যায়, যদিও ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এখনও এই অঞ্চলের ৫৩ শতাংশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গত রোববার বলেছে যে এই সীমারেখাটি এখন ‘নতুন সীমান্ত’। ইসরায়েলি সামরিক প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইয়াল জমির বলেন, আমাদের গাজা উপত্যকার বিস্তৃত অংশগুলোতে অপারেশনাল নিয়ন্ত্রণ রয়েছে এবং আমরা সেই প্রতিরক্ষা রেখাগুলোতে থাকব। হলুদ রেখাটি একটি নতুন সীমান্ত রেখা, যা আমাদের সম্প্রদায়ের জন্য একটি অগ্রবর্তী প্রতিরক্ষামূলক ও অপারেশনাল কার্যকলাপের রেখা হিসেবে কাজ করছে।
এদিকে, কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান বিন জসিম আল থানি গত শনিবার দোহা ফোরামে সতর্ক করে বলেন, যুদ্ধবিরতি একটি ‘সমালোচনামূলক মুহূর্তে’ রয়েছে এবং স্থায়ী চুক্তির দিকে দ্রুত অগ্রগতি না হলে এটি ভেঙে যেতে পারে। বিন জসিম আল থানি বলেন, সত্যিকারের যুদ্ধবিরতি ইসরায়েলি বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার ছাড়া সম্পন্ন হতে পারে না, পাশাপাশি স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার ও ফিলিস্তিনিদের জন্য চলাচলের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন, যা পরিকল্পনার প্রথম পর্বের অধীনে এখনও ঘটেনি। তবে তিনি তার মন্তব্যে হলুদ রেখা সম্পর্কে কিছু বলেননি।
