প্রিন্ট সংস্করণ
০০:০০, ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০
ইসলাম নারীকে যেসব অধিকার প্রদান করেছে তন্মধ্যে অন্যতম একটি হলো বিবাহে দেনমোহর। এটি নারীর অগ্রিম অর্থনৈতিক নিরাপত্তা। সংকটকালে এর মাধ্যমে সম্মানজনক জীবনযাপনের একটি সুন্দর ও অর্থবহ ব্যবস্থা। ইসলামী আইন অনুযায়ীও দেনমোহর হলো বিয়ের অন্যতম শর্ত। এ শর্ত অনুযায়ী বিয়ের সময় মর্যাদার প্রতীক হিসেবে স্বামী কর্তৃক স্ত্রী যে অর্থ-সম্পদ পান বা পাওয়ার অধিকার রাখেন সেটিই দেনমোহর। স্ত্রীর প্রতি স্বামীর সম্মান প্রদর্শনপূর্বক স্বামীকে তার স্ত্রীর মর্যাদার মূল্যায়ন হিসেবে তার ওপর দেনমোহরের দায়িত্ব অর্পণ করেছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, ‘হে নবী! আমি আপনার স্ত্রীগণকে আপনার জন্য বৈধ করেছি, যাদের তুমি মোহরানা প্রদান করেছে’। (সুরা নিসা : ৩৩)।
কোরআন কারিমে আরও এরশাদ হয়েছে, যদি তাদেরকে মোহরানা প্রদান করে থাক, তবে তাদেরকে বিবাহ করায় তোমাদের কোনো অপরাধ নেই। (সুরা নসা : ৬০)। আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা আরও এরশাদ করেন, তোমাদের স্ত্রীদের মোহরানা তাদেরকে সদকাস্বরূপ দাও, অবশ্য যদি তারা এর কিছু অংশ ক্ষমা করে দেয় তবে তা সন্তুষ্টচিত্তে ভোগ করতে পার #৩৯। (সুরা নিসা : ৪)। বিশুদ্ধ হাদিস গ্রন্থেও মোহরের গুরুত্ব বর্ণনা করা হয়েছে। হজরত আবু সালমা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি হজরত আয়েশাকে (রা.) জিজ্ঞেস করলাম, নবীজির (সা.) বিয়েতে মোহরের পরিমাণ কত ছিল? তিনি বললেন, তার বিবাহের মোহর ছিল ‘বার উকিয়া’ ও ‘এক নাশ্ব’ যার পরিমাণ ছিল ‘পাঁচশত দিরহাম’। (মুসলিম : ২৯৪৭)। হজরত ওমর (রা.) বলেছেন, সাবধান! তোমরা স্ত্রীদের মোহর বেশি ধার্য করবে না, কেননা তা যদি দুনিয়াতে সম্মানের এবং আখিরাতে আল্লাহর কাছে তাকওয়ার বিষয় হতো, তবে সে ব্যাপারে তোমাদের চেয়ে রাসুল (সা.) অধিক উপযোগী ছিলেন। কিন্তু রাসুলুল্লাহ (সা.) বার উকিয়ার বেশি দিয়ে তাঁর কোনো স্ত্রীকে বিবাহ করেছেন, তাঁর কোনো কন্যাকে বিবাহ দিয়েছেন বলে আমার জানা নেই। (তিরমিজি : ২৬৯১)।
হজরত ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ‘শেগার’ নিষেধ করেছেন।
শেগার বলতে বুঝায়, কোনো ব্যক্তি তার কন্যাকে এ শর্তে বিবাহ দেওয়া যে, তার কন্যাকে তার কাছে কোনো কিছুর বিনিময়ে বিবাহ দেবে এবং কোনো মোহরানা তাদের মধ্যে থাকবে না। (বোখারি : ২৭৩৬)। রাসুল (সা.) আরও বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো নারীকে কম বা বেশি মোহর ধার্য করে বিয়ে করল অথচ তার অন্তরে মোহরের সে হক আদায়ের আদৌ কোনো ইচ্ছাই নেই, সে ব্যক্তি কেয়ামতের দিন আল্লাহর দরবারে ব্যভিচারী হিসেবে উপস্থিত হবে। (তাবারানি)। হজরত আমির বিন রাবিয়া (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, বনু ফাজারা সম্প্রদায়ের কোনো স্ত্রীলোককে এক জোড়া জুতার বিনিময়ে বিবাহ দেওয়া হয়েছিল। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন তুমি কি তোমার দেহ এবং সম্পদের পরিবর্তে এক জোড়া জুতা পেয়ে সন্তুষ্ট হয়েছ? স্ত্রীলোকটি বলল হ্যাঁ। তারপর তাকে তিনি অনুমতি দিলেন। (তিরমিজি : ১৯৭৪)। হজরত ওকবাহ বিন আমর (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, বিবাহে যে শর্ত সর্বপ্রথম পূরণীয় তা হলো তা (মোহর) যা দ্বারা গুপ্তাঙ্গ বৈধ করা হয়েছে। (বোখারি : ২৭৪১)। রাসুল (সা.) এরশাদ করেন যে ব্যক্তি কোনো নারীকে মোহর দানের শর্তে বিয়ে করেছে অথচ মোহর আদায়ের নিয়ত তার নেই তবে সে ব্যভিচারী। (তিরমিজি : ২৪৬১ )।
লোক দেখানো মাত্রাতিরিক্ত মোহর ধার্য না করে যার যতটুকু সামর্থ্য আছে সে পরিমাণ মোহর নির্ধারণ করা এবং পরিপূর্ণ আদায় করা ইসলামের নির্দেশ। কোনো অবস্থায় মোহর খুব বেশি হওয়া উচিত নয়, যা স্বামীর পক্ষে পরিশোধ করা অসম্ভব। আবার খুব কম হওয়াও উচিত নয়, যা স্ত্রীর আর্থিক নিরাপত্তা দিতে পারে না। এ জন্য বিয়েতে রাসুলের (সা.) সুন্নত ‘মোহরে ফাতেমি’ নির্ধারণ করা উত্তম।
লেখক : প্রিন্সিপাল, শ্রীমঙ্গল আইডিয়াল স্কুল, মৌলভীবাজার