ঢাকা রোববার, ০১ জুন ২০২৫, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

হস্তগত হওয়ার আগে বেচাকেনা

মুফতি মুহাম্মাদ শোয়াইব
হস্তগত হওয়ার আগে বেচাকেনা

কোনো কোনো ব্যবসায়ীর কাছে মাল মজুদ থাকে না। তারা নিজেদের কাছে মালের নমুনা রাখেন মাত্র। গ্রাহককে নমুনা দেখিয়ে বেচাকেনা করেন। পারস্পরিক বেচাকেনার পর ক্রেতার কাছ থেকে মূল্য নিয়ে অন্য আড়ৎদারের কাছ থেকে মাল ক্রয় করে ক্রেতাকে সরবরাহ করেন। যেমন- জনৈক ব্যবসায়ী এক ব্যক্তির কাছে ২ লাখ টাকার বিনিময়ে ১ হাজার গেঞ্জি নমুনা দেখিয়ে কয়েকদিন পর হস্তান্তর করার চুক্তিতে বিক্রয় করলেন। বেচাকেনার সময়ই তার মূল্য গ্রহণ করে নিলেন। কিন্তু তার কাছে বেচাকেনার সময় ওই গেঞ্জি ছিল না। তিনি কোনো ফ্যাক্টরিতে অর্ডার দিয়ে তা তৈরি করে ক্রেতাকে হস্তান্তর করবেন, এ হচ্ছে তার নিয়ত। অথবা একজন ব্যবসায়ী বিদেশ থেকে বিভিন্ন মালামাল আমদানি করেন। বিভিন্ন বিদেশি পণ্যের নমুনা এনে দেশীয় কোম্পানির কাছে বিক্রি করেন। এ ক্ষেত্রে তিনি শুধু নমুনা দেখিয়ে দেশীয় কোম্পানির সঙ্গে মূল্য নির্ধারণপূর্বক বেচাকেনা সম্পন্ন করেন। অগ্রিম টাকাও নিয়ে নেন। এরপর বিদেশি বিক্রেতার সঙ্গে চুক্তি করেন। বিদেশি বিক্রেতার কাছ থেকে মাল ক্রয় করে দেশীয় কোম্পানিকে হস্তান্তর করেন।

নমুনা দেখিয়ে অগ্রিম মাল বিক্রির বিধান

শুধু নমুনা দেখিয়ে এ ধরনের অগ্রিম মাল বিক্রি করা বৈধ নয়। কেননা, এ জাতীয় ব্যবসায় যে পণ্যটি বিক্রেতার মালিকানায় নেই, সেরকম একটি পণ্য বিক্রি করা হয়। আর কোনো পণ্য নিজের মালিকানায় হস্তগত হওয়ার আগে ওই পণ্য বিক্রি করা বৈধ নয়। (আল মুগনি : ৪/১১৩)। কেননা, শরিয়তের মূলনীতি হলো, কোনো জিনিস থেকে লাভবান হওয়ার জন্য ওই জিনিসটি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মালিকানায় ও তার দায়িত্বে নিতে হবে। দায়িত্বে নেওয়া ছাড়া লাভ গ্রহণ করা শরিয়তের দৃষ্টিতে বৈধ নয়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘খাদ্য খরিদ করে কেউ যেন তা হস্তগত করার আগে বিক্রি না করে।’ (বোখারি : ৩৪৩)। দায়িত্বে আসার অর্থ হলো, মাল যার দায়িত্বে থাকবে, নষ্ট হলে সে-ই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। লাভ তখনই গ্রহণ করা যাবে, যখন সে তার দায়িত্ব নেবে এবং লাভ-লোকসানের ঝুঁঁকি বহন করবে। হাকিম ইবনে হিজাম (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমি পণ্য বেচাকেনা করি। এর কোন পন্থাটি হালাল, কোনটা হারাম?’ রাসুল (সা.) বললেন, ‘যখন তুমি কোনো পণ্য ক্রয় করবে, তখন তা হস্তগত হওয়ার আগে অন্য কোথাও বিক্রি করবে না।’ (মুসনাদে আহমদ : ১৫৩১৬)। ওমর (রা.) বলেন, ‘যখন তুমি কোনো বস্তুতে দাদন চুক্তি করবে, তখন তা হস্তগত হওয়ার আগে অন্য কোথাও বিক্রি করবে না।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা : ১১/৩২)।

বৈধ হওয়ার বিকল্প পদ্ধতি

মালিকানায় মাল বা পণ্য না থাকলে নমুনা দেখিয়ে বিক্রি বৈধ হওয়ার পদ্ধতি হলো, যখন মালের অর্ডার নেবে, তখন বেচাকেনার চুক্তি করবে না; বরং অ্যাগ্রিমেন্ট টু সেল (Agreemant to sell) তথা বেচাকেনার প্রতিশ্রুতি করবে। এরপর যখন মাল আড়ৎদার থেকে ক্রয় করে কিংবা নিজে তৈরি করে অথবা অন্য কাউকে দিয়ে তৈরি করিয়ে হস্তগত করবে, তখন প্রকৃত বেচাকেনার চুক্তি নতুন করে সম্পন্ন করবে। এ ক্ষেত্রে কিছু বিষয় লক্ষ্যণীয়-

অ্যাগ্রিমেন্ট টু সেল দ্বারা যে বেচাকেনার চুক্তি হয়, তা দ্বারা মালের মালিকানা ক্রেতার কাছে হস্তান্তর হয়ে যায় না।

অ্যাগ্রিমেন্ট টু সেলের পর মালের ক্ষতিপূরণের দায়িত্ব ক্রেতার ওপর বর্তায় না; বরং তা বিক্রেতার মালিকানায়ই থেকে যায়।

যদি অ্যাগ্রিমেন্ট টু সেলের পর মাল অন্য কোথাও বিক্রি করে ফেলে, তাহলে বিক্রি বৈধ হবে। তবে তা নৈতিকতার পরিপন্থি।

যদি অ্যাগ্রিমেন্ট টু সেলের পর বিক্রেতা দেউলিয়া হয়ে যায়, তাহলে ক্রেতা এ কথা বলতে পারবে না, ‘যেহেতু মাল ক্রয় করে ফেলেছি, তাই তা আমাকে দিয়ে দিন।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত