প্রশ্ন : বর্তমান সময় চকলেটের ভেতর বিভিন্ন খেলনা থাকে, প্যাকেটের ভেতর পুতুলও থাকে। যেমন- কিন্ডারজয়ের ভেতর খেলনা গাড়ি ও পুতুলসহ প্রাণী জাতীয় আরো অনেক কিছু থাকে; যা প্যাকেট খোলা ছাড়া আমরা দেখি না। এমতাবস্থায় আমাদের জন্য এসব বস্তু বিক্রি করা জায়েজ হবে?
উত্তর : যেহেতু এখানে পুতুল বা মূর্তি কেনা মূল মাকসাদ নয়, বরং চকলেট কেনাবেচা উদ্দেশ্য হয়, পুতুলটি তার অধীনত অতিরিক্ত বস্তু। তাই এ কেনাবেচা জায়েজ হবে। (রদ্দুল মুহতার : ৭/৪৭৮)।
প্রশ্ন : ঋণের মোকাবিলায় বন্ধক রাখা গরুর দুধ ঋণদাতা তথা বন্ধকগ্রহীতার জন্য ভোগ করা জায়েজ হবে? গরুর মালিক যদি স্বতঃস্ফূর্ত অনুমতি দেয়, তাতে কি হুকুমের পার্থক্য হবে?
উত্তর : ঋণদাতার জন্য বন্ধকী গরুর দুধ পান করা জায়েজ নয়। তাই ঋণগ্রহীতা এর অনুমতি দিলেও তা পান করা বৈধ হবে না। কেননা, ঋণের বিপরীতে এ অতিরিক্ত সুবিধা গ্রহণ সুদের অন্তর্ভুক্ত। হাদিসে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা এসেছে। আনাস ইবনে মালেক (রা.) সূত্রে বর্ণিত; রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যদি কাউকে ঋণ দেয়, এরপর সেই ব্যক্তি তাকে খাদ্যভর্তি কোনো থালা হাদিয়া দেয়, সে যেন তা গ্রহণ না করে কিংবা যদি তাকে তার বাহনে চড়াতে চায়, সে যেন তাতে না চড়ে। তবে যদি আগ থেকেই তাদের মধ্যে এমন সম্পর্ক থাকে, (তাহলে অসুবিধা নেই)।’ (আস সুনানুল কোবরা লিল বাইহাকি : ৫/৩৫০)।
প্রশ্ন : আমি একজনকে ২ হাজার টাকা কর্জ দিলাম। বর্তমান বাজারমূল্য হিসেবে এর দ্বারা ৪০ কেজি খাদ্যশস্য পাওয়া যায়। আমি তাকে বললাম, ১ বছর পর ফেরত দিলেই চলবে। ঘটনাক্রমে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় উক্ত টাকায় ২৫ কেজি খাদ্যশস্য পাওয়া যায়। এমতাবস্থায় আমি ক্ষতিগ্রস্ত হলাম। এখান যদি আমি ৩ হাজার ২০০ টাকা পেতাম, তাহলে আগের ন্যায় ৪০ কেজি শস্য কিনতে পারতাম। এ ক্ষেত্রে শরিয়তের ফয়সালা কী? আমি এহসান করব? তার কাছ থেকে সুদ হিসেবে অতিরিক্ত কিছু নেব, এমন আগ্রহ আমার নেই; কিন্তু আমি ক্ষতিগ্রস্ত কেন হব? আবার দাম যদি কমে যায়, সেক্ষেত্রে ধরা যাক উক্ত টাকায় ৫০ কেজি শস্য পাওয়া যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে ঋণগ্রহীতার জন্য (২ হাজার টাকার কম) ৪০ কেজির দাম ১৬শ’ টাকা দেওয়া ঠিক হবে কী?
উত্তর : আপনি যদি কাউকে ৪০ কেজি ধান ঋণ দেন, তবে বছর শেষে আপনি সে পরিমাণ অর্থাৎ ৪০ কেজি ধানই নেবেন।
সেক্ষেত্রে ধানের দাম যদি অর্ধেক হয়ে যায়, তবুও আপনি বেশি নিতে পারবেন না। আবার ধানের দাম বেড়ে গেলেও আপনি কম নেবেন না। টাকার ঋণের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটি তেমন। সাধারণ গতিতে এর বিনিময়মূল্য কিছুটা বেড়ে বা কমে গেলেও করজে হাসানার ক্ষেত্রে তা বেশ-কম করা যায় না; বরং যে পরিমাণ টাকা দেয়া হয়েছিল, সে পরিমাণই ফেরত নিতে পারবেন। উল্লেখ্য, করজে হাসানা দেয়া শরিয়তের দৃষ্টিতে একটি ফজিলতপূর্ণ ও মহৎ আমল। সাধারণত বাহ্যিকভাবে অর্থনৈতিক কিছু ক্ষতি মেনে নিয়েই তা প্রদান করা হয়ে থাকে। তাই এ ক্ষেত্রে পুঁজিবাদী মানসিকতা পোষণ করা ও সংকীর্ণমনা হওয়া উচিত নয়। ঋণ দেয়ার কারণে যে আর্থিক ক্ষতি হয়, তা মেনে নেয়ার কারণেই এতে অর্থ সদকা করার সওয়াব পাওয়া যায়। (মুসনাদে আহমদ : ৩৯১১, মাজাল্লাতু মাজমাইল ফিকহিল ইসলামি : ৩/২২৬১, ফিকহুন নাওয়াজিল : ৩/২৬)।
প্রশ্ন : গত ঈদে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার জন্য বাসের টিকিট কাটতে গিয়ে দেখি, টিকিট শেষ। মন খারাপ করে ফিরে আসছিলাম। এক লোক ডেকে বলল, আমার কাছে একটা টিকিট আছে। ৫০০ টাকায় হলে নিতে পারবেন। আমার খুব প্রয়োজন ছিল। তাই নিরুপায় হয়ে ৪০০ টাকার টিকিট ৫০০ টাকায় কিনে নিলাম। এভাবে যারা বাস বা ট্রেনের টিকিট কিনে রেখে পরবর্তীতে মানুষের কাছে বেশি দামে বিক্রি করে, তাদের এ কাজটা কি ঠিক?
উত্তর : ওই ব্যক্তির জন্য ৪০০ টাকার টিকিট ৫০০ টাকায় বিক্রি করা জায়েজ হয়নি। এ অতিরিক্ত টাকা তার গ্রহণ করা নাজায়েজ। টিকিট কিনে এভাবে ব্যবসা করা জায়েজ নয়। কেননা, একটি টিকিট কেনার অর্থ হলো একটি সিট ভাড়া নেয়া। আর এভাবে সিট ভাড়া নিয়ে বেশি ভাড়ায় অন্যের কাছে হস্তান্তর করা নাজায়েজ। (আল মাবসুত লিস সারাখসি : ১৫/১৩০, আলমুহিতুল বোরহানি : ১১/২৬৮)।
প্রশ্ন : মসজিদণ্ডমাদ্রাসার ক্যাশিয়ার বা কমিটির অন্য কারও জন্য মসজিদণ্ডমাদ্রাসার টাকা ঋণ নেয়া যাবে কী?
উত্তর : ফেরত দিয়ে দেয়ার ইচ্ছে থাকলেও মসজিদণ্ডমাদ্রাসার টাকা নিজ প্রয়োজনে খরচ করা অন্যায় ও খেয়ানত হয়েছে। কেননা, মসজিদের টাকা তাদের কাছে আমানত। আর আমানতের টাকা থেকে নিজ প্রয়োজনে খরচ করা বা ঋণ নেওয়া জায়েজ নয়। (ফতোয়ায়ে খানিয়া : ৩/২৯৯, আল বাহরুর রায়েক : ৫/২৫১, ফতোয়ায়ে বাজ্জাজিয়া : ৪/৮২)।
প্রশ্ন : আমার দোকানের কর্মচারীরা অনেক সময় কোনো জিনিস নষ্ট করে ফেলে বা তাদের অনিচ্ছায় কিংবা অবহেলায় নষ্ট হয়ে যায়। এসব ক্ষেত্রে তাদের থেকে জরিমানা নেওয়ার বিধান কী?
উত্তর : দোকানের পণ্য কর্মচারীদের হাতে আমানত। সাধ্যমত এগুলো হেফাজতের চেষ্টা করা তাদের দায়িত্ব। এ ব্যাপারে তাদের সব সময় সজাগ থাকতে হবে। তবে এরপরও যদি তাদের অবহেলা বা সীমালঙ্ঘন ছাড়াই কোনো কিছু নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে এর জন্য তাদের থেকে ক্ষতিপূরণ নেওয়া যাবে না। আর যদি তারা ইচ্ছাকৃত কোনো কিছু নষ্ট করে কিংবা দায়িত্বে অবহেলা বা সীমালঙ্ঘনের কারণে বা তাদের যেভাবে বলা হয়েছে, তার বিপরীত কাজ করার কারণে কোনো কিছু নষ্ট হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে বাস্তব ক্ষতিপূরণ নেয়া যাবে। অর্থাৎ যে জিনিসটি নষ্ট করেছে, এর মূল্য বা তার থেকে কম গ্রহণ করা যাবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা : ২০৮৬৭, শরহু মুখতাসারিত তহাবি : ৩/৩৯৯, তাবয়িনুল হাকায়েক : ৬/১৪৫, ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া : ৪/৫০০)।
প্রশ্ন : গত বছর হজের সময় কাফেলার একজন থেকে আমি ২ হাজার রিয়াল কর্জ নিয়েছিলাম। পরবর্তীতে দেশে আসার পর রিয়ালের মূল্য কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন আমি কর্জ পরিশোধ করতে চাচ্ছি। জানার বিষয় হলো, রিয়ালের কোন মূল্য ধরে তা পরিশোধ করতে হবে? বর্তমান মূল্য ধরে নাকি কর্জ নেয়ার সময়ের মূল্য ধরে?
উত্তর : আপনি যেহেতু রিয়াল কর্জ নিয়েছিলেন, তাই ওই ব্যক্তি আপনার কাছে রিয়ালই পাবে। এখন রিয়ালের পরিবর্তে টাকা দিতে চাইলে তার সম্মতি প্রয়োজন। সে সম্মত হলে যেদিন কর্জ পরিশোধ করবেন, সেদিন রিয়ালের বাজারমূল্য হিসেবে আদায় করতে হবে। (সুনানে আবি দাউদ : ৩৩৪৫, আল মাবসুত লিস সারাখসি : ১৪/৯, ইলাউস সুনান : ১৪/২৫৫)।