আগে সালাম দেওয়া উত্তম : আগে সালাম দেওয়া উত্তম। কারণ প্রথমে সালাম প্রদানকারী অধিক সওয়াবপ্রাপ্ত হন। (তিরমিজি, হাদিস : ২৬৯৫)।
সবাইকে সালাম প্রদান করা : পরিচিত-অপরিচিত, ছোট-বড়, নিকাটাত্মীয়-দূরাত্মীয়, পিতামাতা, স্বামী-স্ত্রী, সন্তানাদি সবাইকেই সালাম দেওয়া চাই। (মুসলিম : ২/২১৪)।
আদব রক্ষা করে সালাম দেওয়া : সালামের একটি আদব হলো ছোট বড়কে, আরোহী পথচারীকে, চলন্ত ব্যক্তি উপবিষ্ট ব্যক্তিকে, আগন্তুক অবস্থানকারীকে আগে সালাম করবে। (মুসলিম : ২/২১২)।
একজনের সালামে সবার আদায় : একাধিক ব্যক্তি কিংবা পুরো মাহফিলের পক্ষ থেকে একজন সালাম করলে সবার পক্ষ থেকেই আদায় হয়ে যাবে। (হিন্দিয়া : ৫/৩২৫)।
ইশারায় সালাম দেওয়া : সালামের সময় হাত দিয়ে ইশারা করা, হাত কপালে ঠেকানো ও মাথা-ঝুকানো শরিয়তসম্মত নয়। তবে দূরবর্তী লোককে সালাম বা উত্তর দিলে যার পর্যন্ত আওয়াজ না পৌঁছার সম্ভাবনা রয়েছে, সেরূপ ক্ষেত্রে মুখে সালাম বা উত্তর দিয়ে শুধু বুঝানোর জন্য হাত দিয়ে ইশারা করার অনুমতি রয়েছে। (তিরমিজি : ২/৯৯; মিরকাত : ৪/৫২২; মাহমুদিয়া : ২৮/১৮৭)।
অমুসলিমকে সালাম দেওয়া : অমুসলিমকে সালাম দেওয়া জায়েজ নেই। কোনো অমুসলিমের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়ে গেলে আর সালাম দেওয়ার প্রয়োজন হলে সেই শব্দই ব্যবহার করা, যা তারা এ জাতীয় মুহূর্তে করে থাকে। (মুসলিম : ২/২১৪; আবু দাউদ : ২/৭০৭)।
মুসলিম-অমুসলিমের বৈঠকে সালাম : কোনো মজলিস কিংবা অনুষ্ঠানে মুসলিম-অমুসলিম উভয় প্রকারের লোক থাকলে শুধু মুসলমানের নিয়তে সালাম দেওয়া কিংবা ‘আসসালামু আলা মানিত তাবাআল হুদা’ বলা। (বোখারি : ২/৭২৪; হিন্দিয়া : ৫/৩২৫; আল বাহরুর রায়েক : ৯/৩৮০)।
যাদের সালাম দেওয়া মাকরুহ : ১. কোনো গোনাহের কাজে লিপ্ত ব্যক্তিকে, ২. প্রস্রাব-পায়খানারত ব্যক্তিকে, ৩. পানাহারকারী ব্যক্তিকে (তার মুখে খাদ্য-পানীয় থাকাবস্থায়), ৪. কোনো ইবাদত (যেমন নামাজ, তেলাওয়াত, জিকির, দ্বীনি কিতাব নিয়ে আলোচনা)-রত ব্যক্তিকে, ৫. কোনো মজলিসে আলোচনা চলাবস্থায়।
সারকথা, কেউ যদি কোনো কাজে ব্যস্ত থাকে, আর সালামের কারণে সেই কাজে বিঘœ ঘটার আশঙ্কা থাকে, তাহলে সে অবস্থায় সালাম না দেওয়া উচিত। (রদ্দুল মুহতার : ২/৩৭৪ ও ৯/৫৯৫; হিন্দিয়া : ৫/৩২৬)।
গাইরে মাহরাম নারী-পুরুষের মধ্যে সালাম : গাইরে মাহরাম নারী-পুরুষের মধ্যে যেসব ক্ষেত্রে ফেতনার আশঙ্কা রয়েছে, সেসব ক্ষেত্রে সালাম আদান-প্রদান নিষেধ। (বোখারি : ২/৯২৩; আবু দাউদ : ২/৭০৭; রদ্দুল মুহতার : ৯/৫৩০; আল বাহরুর রায়েক : ৮/২০৭; মাহমুদিয়া : ২৮/২০০)।
শূন্য ঘরে প্রবেশ করলেও সালাম : কোনো খালি ঘরে প্রবেশ করলেও সালাম দেওয়া। তখন এভাবে বলা ‘আসসালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহিন। (সুরা নুর : ৬১; রদ্দুল মুহতার : ৯/৫৯৬-৫৯৭; হিন্দিয়া : ৫/৩২৫)।
মসজিদে সালাম : মসজিদে প্রবেশের পর যদি দেখা যায় সবাইকে আমলে রত, তাহলে সালাম দেওয়া অনুচিত। যদি আমলে রত না থাকে, তাহলে সালাম দেওয়া যেতে পারে। আর যদি কিছু লোক আমলে থাকে, আর অন্যরা আমলে না থাকে, তাহলে সালাম দেওয়া বা না দেওয়া উভয়টারই সুযোগ রয়েছে। (রদ্দুল মুহতার : ২/৩৭৫; হিন্দিয়া : ৫/৩২৫; মাহমুদিয়া : ২৮/১৯৭; আদাবুল মুআশারাত : ২৭)।
সাক্ষাৎ ও বিদায়কালে সালাম : সাক্ষাৎ ও বিদায় উভয় সময়ই সালাম দেওয়া সুন্নত। (তিরমিজি : ২/১০০; আবু দাউদ : ২/৭০৭; আদাবুল মুআশারাত : ২৭)।
কবরস্থানে কবরবাসীকে সালাম : কবরস্থানে গেলে কবরবাসীকে সালাম দেওয়া। এভাবে বলা ‘আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবুর! আন্তুম লানা সালাফুন, ওয়া নাহনু লাকুম তাবিউন।’ (আল বাহরুর রায়েক : ৯/৩৮০; আদাবুল মুআশারাত : ২৭)।
গোসল ফরজ ব্যক্তির সালাম ও তার উত্তর : যার ওপর গোসল ফরজ, এমন ব্যক্তি সালাম ও সালামের উত্তর দিতে পারবে। (রদ্দুল মুহতার : ১/৪৮৮; হিন্দিয়া : ১/৩৮)।
মোবাইল-ফোনে কথা বলার সময় সালাম : মোবাইল-ফোনে কথা বলার সময় প্রথমে সালাম দেওয়া, এরপর অন্য কথা বলা চাই। (তিরমিজি : ২/৯৯; রদ্দুল মুহতার : ৯/৫৯২; আল ফিকহুল ইসলামী : ৩/৫৭৮)।॥