হালাল উপার্জনের গুরুত্ব
গোলাম রাজ্জাক কাসেমি
প্রকাশ : ৩০ নভেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

ব্যবসা, উপার্জন ও লেনদেনের ক্ষেত্রে যেভাবে হারাম থেকে বেঁচে থাকতে হবে, তেমনি হালাল উপার্জনেরও গুরুত্ব দিতে হবে। সহিহ হাদিসে হালাল রিজিকের প্রতি বেশ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘হালাল রুজি সন্ধান করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর অপরিহার্য কর্তব্য।’ (মাজমাউয জাওয়ায়েদ : ১৮০৯৯)। নিশ্চয়ই আল্লাহ পবিত্র। তিনি পবিত্রতা ছাড়া কিছু গ্রহণ করেন না।
আল্লাহতায়ালা রাসুলদের যে বিষয়ের আদেশ দিয়েছেন, মোমিনদেরও সে বিষয়ে আদেশ করেছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে রাসুল! পবিত্র বস্তু থেকে আহার করও এবং সৎকর্ম করো। নিশ্চয়ই আমি তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে জ্ঞাত।’ (সুরা মোমিনুন : ৫১)। অন্য আয়াতে বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! আমি তোমাদের যে উত্তম রিজিক দিয়েছি, তা থেকে আহার করও।’ (সুরা বাকারা : ১৭২)। এরপর নবীজি (সা.) এমন এক ব্যক্তির কথা আলোচনা করলেন, যে মরুভূমিতে দীর্ঘ সফর করেছে। যার চুলগুলো এলোমেলো, ধুলায় ধূসরিত। এ অবস্থায় সে আকাশের দিকে দুহাত তুলে দোয়া করে বলে, ‘হে আমার প্রতিপালক! হে আমার প্রতিপালক!’ অথচ তার খাদ্য হারাম। পানীয় হারাম। পোশাক-পরিচ্ছদ হারাম। তার শরীর বেড়ে উঠেছে হারাম দ্বারা। অতএব, তার দোয়া কীভাবে কবুল করা হবে!’ (মুসলিম : ১০১৫)।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘হে মোমিনরা, আমি তোমাদের জীবিকারূপে যে উৎকৃষ্ট ও হালাল বস্তু দিয়েছি, তা থেকে (যা ইচ্ছে) খাও এবং আল্লাহর শোকর আদায় করো, যদি সত্যিই তোমরা শুধু তাঁরই ইবাদত করে থাক।’
(সুরা বাকারা : ১৭২)। আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা এ আয়াতে (আদেশসূচক শব্দে) তাঁর বান্দাদের হালাল গ্রহণ করতে আদেশ করেছেন। এরপর শোকরিয়া আদায় করতেও আদেশ করেছেন। যদি তারা সত্যিই তাঁর বান্দা হয়ে থাকে।’ (মুখতাসার ইবনে কাসির : ১/১৫০)। দুনিয়ার জীবনে অবৈধ পন্থায় উপার্জন করে সুখ-সাচ্ছন্দ লাভ করলেও পরকালীন জীবনে রয়েছে এর জন্য জবাবদিহিতা ও সুবিচার।
রাসুল (সা.) বলেন, ‘কেয়ামতের দিবসে বান্দার দুই পা জায়গা থেকে এক চুলও সরবে না, যতক্ষণ না তাকে প্রশ্ন করা হবে তার জীবনকাল সম্পর্কে, কোথায় সে তা ব্যয় করেছে; তার ইলমণ্ডজ্ঞান সম্পর্কে, সে অনুযায়ী কী করেছে; তার সম্পদ সম্পর্কে, কীভাবে সে তা উপার্জন করেছে এবং কোথায় ব্যয় করেছে এবং তার দেহ সম্পর্কে, কীভাবে সে তা ক্ষয় করেছে।’ (তিরমিজি : ২৪১৭)।
এ হাদিসে মৌলিক পাঁচটি প্রশ্নের মধ্যে দুটি প্রশ্নই অর্থনীতি সম্পর্কে, আয়-ব্যয় প্রসঙ্গে। অঙ্কের হিসেবে ৪০ শতাংশ প্রশ্ন। তাই বোঝা যায়, ইসলামে হালাল পদ্ধতিতে অর্থ উপার্জনের গুরুত্ব অপরিসীম।
