গিবত করা হারাম এবং কবিরা গোনাহ। গিবতের মাধ্যমে আল্লাহর হক ও বান্দার হক দুটিই নষ্ট করা হয়। মানবজীবনে পরনিন্দা ও পরচর্চা পরস্পরের মধ্যে শত্রুতা সৃষ্টি হয়, বিদ্বেষ জন্মে ও সমাজের শান্তিশৃঙ্খলা নষ্ট হয়। তাই গিবত পরিত্যাগ করা অত্যন্ত জরুরি। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘তোমরা গিবত বা পরনিন্দা করা থেকে বেঁচে থাকবে। কারণ, তাতে রয়েছে তিনটি মারাত্মক ক্ষতি ১. গিবতকারীর দোয়া কবুল হয় না। ২. গিবতকারীর কোনো নেক আমল কবুল হয় না এবং ৩. আমলনামায় তার পাপ বৃদ্ধি হয়ে থাকে। (বোখারি)।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! তোমরা একে অপরের পেছনে নিন্দা করো না। তোমাদের কেউ কী স্বীয় মৃত ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করতে পছন্দ করবে? বস্তুত তোমরা তা একেবারেই ঘৃণাই করো। (সুরা, হুজরাত : আয়াত ১২)।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আমার প্রতিপালক যখন আমাকে মিরাজে নিয়েছিলেন, তখন আমি এমন একশ্রেণির মানুষের কাছ দিয়ে যাচ্ছিলাম; যাদের নখগুলো ছিল পিতলের নখের মতো। যা দ্বারা তারা নিজেদের চেহারা ও বুক খামচাচ্ছিল।’ আমি এ লোকগুলোর ব্যাপারে হজরত জিব্রাইল আলাইহিস সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘এরা সেই সব ব্যক্তি, যারা দুনিয়াতে মানুষের গোশত খেতো এবং তাদের ইজ্জত নিয়ে ছিনিমিনি খেলত।’ (মিশকাত) আর মানুষের গোশত খাওয়ার মানে হলো অন্যের গিবত করা।
যে ব্যক্তি অপর মুসলমানের দোষ অনুসন্ধান করে আল্লাহ তার দোষ অনুসন্ধান করেন। আল্লাহ যার দোষ অনুসন্ধান করেন, তাকে লাঞ্ছিত ও অপমানজনক শাস্তি দেবেন।’ (তিরমিজি)।
গিবত থেকে বাঁচার জন্য করণীয় :
১) হজরত থানবী (রহ.) বলেন, কারও গিবত করে ফেললে যার গিবত করা হয়েছে তার কাছে গিয়ে জানাবে যে, আমি আপনার গিবত করে ফেলেছি। আমাকে মাফ করে দিন।
২) অন্যের ব্যাপারে মুখ খোলার আগে চিন্তা করা যে, যা বলতে যাচ্ছি তাতে গোনাহ হবে না তো?
৩) অন্যের ব্যাপারে পারতপক্ষে ভালো কথা বলা, ভালো ধারণা করা, অন্যথায় চুপ থাকা।
৪) মেয়েদের গিবত রোগের বড় চিকিৎসা হলো, এক স্থানে অনেকজন একত্রিত না হওয়া। কেন না, তারা বাড়িতে একাকী থাকলে গিবত হয় না। কিন্তু যেই বাইরে যান বা বাড়িতে অন্য মেয়েরা আসেন তখনই গিবত-শেকায়েত শুরু হয়।
৫) ভালো কথাও বেশি না বলা। কেন না, ভালো কথা দীর্ঘ হলে মাঝেমধ্যে অসতর্কতাবশত দোষ বের হয়ে যায়।
৬) অপরকে সব সময় নিজের থেকে ভালো মনে করা। ফলে অন্যের দোষ চোখে পড়বে না আর তার গিবতও হবে না।
৭) পরচর্চা না করে নিজের দোষগুলো খোঁজা, আত্মসমালোচনা করা।
৮) যে ব্যক্তি গিবতে অভ্যস্ত, তার কাছে না যাওয়া। গেলেও গিবত করার সুযোগ না দেওয়া।
৯) গিবত করতে মনে চাইলে গিবতের দুনিয়াবি ও পরকালীন পরিণতি সম্পর্কে চিন্তা করা এবং বেশি বেশি ইস্তেগফার করা।
আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে গিবত থেকে বেঁচে থাকার তৌফিক দান করুন আমিন।
আলোকিত ডেস্ক