ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

পিতা-মাতার সঙ্গে সদাচরণ

আশিকুজ্জামান নাঈম
পিতা-মাতার সঙ্গে সদাচরণ

আল্লাহপাক রাব্বুল আলামিন মানব জাতিকে পৃথিবীর বুকে প্রেরণ করার ক্ষেত্রে পিতা-মাতাকে বানিয়েছেন অন্যতম মাধ্যম। আর পিতা-মাতা সন্তানের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে এক খাস রহমত। যারা নিঃস্বার্থে নিজের জীবনকে বিলীন করে সন্তানের জীবনকে আলোকিত করার জন্য সর্বদা চেষ্টা চালিয়ে যান। সেই পিতা-মাতার খেদমতের বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা এবং তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা করেন যে, পিতা-মাতার খেদমত সব ইবাদতের ওপর অগ্রগণ্য। এই বিষয়ে কোরআনে কারিমে বেশকিছু আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে। যেমন এক আয়াতে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, আমি মানুষকে পিতা-মাতার সঙ্গে সদাচরণ করার উপদেশ দিচ্ছি যে, পিতা-মাতার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবে। (সুরা আনকাবুত আয়াত- ৮)।

অন্য আয়াতে এরশাদ করেন, প্রথমত এবং আল্লাহ ছাড়া কারো ইবাদত করবে না। দ্বিতীয়ত, পিতা-মাতার সঙ্গে সদাচরণ করবে। (সুরা ইসরা আয়াত-২৩)। এ আয়াতে পিতা-মাতার সঙ্গে সদাচরণের বিষয়টাকে আল্লাহ তায়ালার একত্ববাদের সঙ্গে একত্রে উল্লেখ করেছেন। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে পিতা-মাতার সঙ্গে সদাচরণ করা ইসলামে শরিয়তে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পিতা-মাতা যদি কাফের হয় এবং শিরকের নির্দেশ দেয়, তবুও তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা যাবে না। তবে শিরকের কাজও করবে না। আল্লাহপাক কোরআনে এরশাদ করেন, তোমার পিতা-মাতা যদি আমার সমকক্ষ দাঁড় করাতে পীড়াপীড়ি করে যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, তুমি তাদের কথা মানবে না। পৃথিবীতে তাদের সঙ্গে ভালোভাবে বসবাস করবে। (সুরা লোকমান আয়াত-১৫)। এ আয়াতের মাধ্যমে পিতা-মাতার গুরুত্ব স্পষ্ট বুঝে আসে। পিতা-মাতার সঙ্গে বেয়াদবি করলে যেমন দুনিয়া আখেরাত বরবাদ হয়ে যায়, তেমনি তাদের সঙ্গে ভালো সদাচরণ করে তাদের দোয়া নিয়ে ও উভয় জাহানের সফলতা ও লাভ করা যায়। পিতা-মাতার দোয়ায় বড় হওয়ার এবং তাদের বদ দোয়ায় ধ্বংস হওয়ার উপমার অভাব নেই।

পিতা-মাতা যখন বার্ধক্যে পৌঁছে তখন তাদের মধ্যে সামান্য খিটখিটে মেজাজ সৃষ্টি হয়, বাচ্চাদের মতো আচরণ করে। তাদের অনেক কিছুই অপছন্দনীয় মনে হবে। কিন্তু এসময় আমাদের স্মরণ রাখতে হবে আমাদের শিশুকালে এর চেয়ে অধিক অপছন্দের বিষয় তারা হাসিমুখে সহ্য করেছেন। পৃথিবীতে কেবলমাত্র পিতা-মাতাই সন্তানের দেওয়া সব কষ্টকে হাসিমুখে মেনে নেন। এজন্য মহান আল্লাহপাক রাব্বুল আলামিন কোরআনে এরশাদ করেন, যদি তোমাদের জীবদ্দশায় তোমাদের পিতা-মাতা বার্ধক্যে পৌঁছে যায়, তাহলে সে পিতা-মাতাকে কখনও উফ শব্দও বলো না। (সুরা ইসরা আয়াত-২৩)।

পিতা-মাতা যদি জীবিত থাকেন তাহলে ধরণীর মধ্যে এর চেয়ে আর কোনো বড় নেয়ামত নেই। কেননা রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, যদি পিতা-মাতাকে ভক্তি-শ্রদ্ধা ও মহাব্বতের নজরে দেখে, তাহলে এক হজ এবং এক উমরা সমপরিমাণ সওয়ার পাওয়া যাবে। (জামিউল আহাদীস হাদীস নং ২০৮২১)। এই হাদীস থেকে বুঝে আসে পিতা-মাতার দিকে তাকানো ইবাদত।

পক্ষান্তরে যে তাদের সঙ্গে খারাপ আরচণ করবে এবং তাদের থেকে দোয়া নিয়ে নিজের গোনাহ মাফ করাতে পারবে না, তার মতো কপাল পোড়া আর কেউ হতে পারে না। কেননা সে অভিশপ্ত। রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, বঞ্চিত হোক ওই ব্যক্তি, যে তার পিতা-মাতাকে বৃদ্ধাবস্থায় পেয়েও তাদের সেবা করে নিজের গোনাহ মাফ করাতে পারল না। (মুসনাদে আহমদ হাদীস নং ১৮২৫৪)। সুতরাং আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে পিতা-মাতার দোয়া নিয়ে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সন্তুষ্টি অর্জন করার তৌফিক দান করুন আমিন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত