ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

আদর্শ চিকিৎসকের বৈশিষ্ট্য

মাওলানা দৌলত আলী খান
আদর্শ চিকিৎসকের বৈশিষ্ট্য

চিকিৎসা একটি মহৎ পেশা। এ পেশার অধিকারীকে চিকিৎসক বলা হয়। তবে একজন চিকিৎসক মানবসেবায় পেশাদার হিসেবে কাজ করতে পারেন না, বরং তাকে ধর্মগুরুর ন্যায় চিকিৎসাসেবা করে যেতে হবে। শুধু চিকিৎসা ফি আদায়কে লক্ষ্য করে রোগীর সেবা করা যায় না। চিকিৎসা ফির নামে আর্থিক বাণিজ্য বাদ দিয়ে রোগীর রোগ সার্বিকভাবে দূরীভূত করে স্বাস্থ্যেও পুনঃপ্রবর্তন করার লক্ষ্যে সেবার কাজ করে যেতে হবে। এটাই হবে একজন আদর্শ চিকিৎসকের নীতি। রোগীকে নিরোগ করাই হতে হবে আদর্শ চিকিৎসকের জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য। কারণ, রোগাক্রান্ত মানুষ চিকিৎসকের কাছে আসে একমাত্র রোগ যন্ত্রণা থেকে মুক্তির জন্য। মহাচিকিৎসা বিজ্ঞানী রাসুল (সা.) এর কাছে কোনো রোগাক্রান্ত সাহাবি আসলে কোনো বিনিময় ছাড়াই চিকিৎসাসেবা দিতেন। তিনি সবসময় আর্তমানবতার কাছে নিজেকে উৎসর্গ করে দিতেন। তাই অধুনা পৃথিবীর চিকিৎসকদের উচিত আর্থিক বাণিজ্যের মোহে না পড়ে মানবসেবায় নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়া।

রোগীকে নীরোগ করাই হলো একজন আদর্শ চিকিৎসকের একমাত্র উদ্দেশ্য। শুধু অর্থ উপার্জন করা কোনো সভ্য চিকিৎসকের লক্ষ্য হতে পারে না। চিকিৎসাবৃত্তি এক মহান ব্রত। তাই চিকিৎসাকর্মকে সাধারণ পেশা হিসেবে কিছুতেই গণ্য করা যাবে না। একজন চিকিৎসককে পেশাদারী না হয়ে সেবকরূপে চিকিৎসাকর্ম চালিয়ে যেতে হবে। বর্তমানে রোগীরা ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর কাছে জিম্মি হয়ে আছে। ডায়াগনস্টিক কর্তৃপক্ষ বিভিন্নভাবে সেবার নামে রোগীদের অর্থ-সম্পদ লোপে নিচ্ছে। ডাক্তার ও এক্সের ফি আদায় করতে গিয়ে রোগীরা ওষুধ সেবনের টাকা পর্যন্ত হারাতে বসে। ফলে রোগীকে অসুস্থতার পাশাপাশি আর্থিক যন্ত্রণার শিকার হতে হয়। সেবার নামে এ রকম আর্থিক ও মানসিক যন্ত্রণা ইসলাম সমর্থন করে না। সুতরাং সেবাকে সেবার মতো করে একজন চিকিৎসককে রোগীর সেবায় এগিয়ে আসতে হবে।

মানব জাতির দৈহিক সুস্থতা সর্বপেক্ষা অমূল্য সম্পদ। অসুস্থ ব্যক্তি একমাত্র সুস্থতার লক্ষ্যে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়। কাজেই এ গুরুদায়িত্ব গ্রহণ করার আগে চিকিৎসকের যথেষ্ট প্রস্তুত থাকা চাই। সাধারণত একজন চিকিৎসককে রোগ ও ওষুধের আরোগ্যকারী শক্তি সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে। এছাড়াও রোগের গতিধারা, অবস্থা ও পরিণতি এবং সেই অনুযায়ী ওষুধ ও পথ্যের ব্যবস্থা করার নিমিত্তে মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গের অবস্থান, তাদের ক্রিয়া ও পরস্পরের সম্পর্কে ধারণা থাকা বাঞ্ছনীয়। এসব গুণ চিকিৎসকের মধ্যে বিদ্যমান থাকতে হবে। অন্যথায় চিকিৎসককে আদর্শ চিকিৎসক হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না। চিকিৎসা বিজ্ঞানী নবী করিম (সা.) রোগীর রোগ নির্ণয় করে ওষুধ প্রদান করতেন। এ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) বলেন, জ্বরের উৎপত্তি জাহান্নামের তাপ থেকে। সুতরাং তোমরা পানি দ্বারা ঠা-া করো। (বোখারি : ৫৭৮৪)।

হাদিসে আরও আছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার কতিপয় সাহাবি রাসুল (সা.)কে বললেন, ব্যাঙের ছাতা হলো জমিনের বসন্ত।

তখন রাসুল (সা.) তাদের ধারণা পাল্টিয়ে বললেন, ব্যাঙের ছাতা তো মান্ন সদৃশ। এর পানি চক্ষু রোগের ওষুধবিশেষ। আর আজওয়া নামী খেজুর বেহেশতি ফল। তা বিষনাশক। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি তিনটি অথবা পাঁচটি অথবা সাতটি ব্যাঙের ছাতা নিয়ে তার রস নিংড়ায়ে একটি শিশির মধ্যে রাখলাম। অতঃপর আমার এক রাতকানা দাসীর চোখের মধ্যে সেই পানি সুরমার সঙ্গে ব্যবহার করলাম। এতে সে আরোগ্য লাভ করল। (তিরমিজি : ২২১০-১১)।

লেখক : শিক্ষক, নাজিরহাট বড় মাদ্রাসা, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম। ০১৮১৫ ৯১৩৫০৭।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত