কোরআনের আলোকে প্রতারণা
ইসলামে ধোঁকা-প্রতারণার সুযোগ নেই। এর সুনির্দিষ্ট ক্ষেত্র নেই। নানাভাবে মানুষ প্রতারণার শিকার হয়। কথাবার্তা, কাজেকর্মে, লেনদেন, ব্যবস্যা-বাণিজ্যে ভেজাল মেশানো, পণ্যদ্রব্যের দোষ গোপন করা, মানুষকে ঠকানো, লটারি, খাদ্যজাত দ্রব্যে ফরমালিন মেশানো, জাল টাকা চালানো, ওজনে কম দেওয়া, উত্তমের সঙ্গে অনুত্তম পণ্য সরবরাহ করা, মিথ্যা শপথ করা, মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া, হাসপাতালের দায়িত্ব ছেড়ে প্রাইভেট চেম্বারে রোগী দেখা, স্কুল ফাঁকি দিয়ে কোচিং-বাণিজ্য করা ইত্যাদি। এক কথায়, যে কোনোভাবে মানুষ বা প্রাণীকে ঠকানোই প্রতারণা-ধোঁকা। এরশাদ হচ্ছে, ‘তারা আল্লাহ এবং ঈমানদারদের সঙ্গে প্রতারণা করে। অথচ এতে তারা নিজেদেরকে ছাড়া অন্য কাউকে প্রতারিত করে না। কিন্তু তারা তা অনুভব করে না।’ (সুরা বাকারা : ৯)।
প্রতারণার পার্থিব শাস্তি
প্রতারণার পার্থিব শাস্তি দুটিÑ এক. দেশের বিচারে শাস্তি। যেমনÑ দেশের প্রচলিত আইনে ৪১৫ ও ৪২০ ধারায় এটা অপরাধ। দুই. প্রাকৃতিক বিচারে শাস্তি। যেমনÑ প্রতারণার অর্থে বরকত না থাকা, বিভিন্ন মসিবতে আচ্ছন্ন থাকা, সর্বদা রোগ-শোক, পেরেশানিতে থাকা ইত্যাদি।
প্রতারণার পরকালীন শাস্তি
পরকালে প্রতারণার শাস্তি অত্যন্ত কঠিন ও মর্মন্তুদ। পরকালের শাস্তি তিন ধরনের এক. হারাম তথা কবিরা গোনাহ করার শাস্তি। আর কবিরা গোনাহকারীর শাস্তি জাহান্নাম। দুই. বান্দার হক নষ্ট করার শাস্তি। বান্দার হক আল্লাহ ক্ষমা করবেন না, যদি বান্দা ক্ষমা না করে। রাসুল (সা.) সাহাবাদের কাছে জানতে চাইলেন, ‘তোমাদের মধ্যে কে নিঃস্ব গরিব?’ সাহাবিরা বললেন, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! যার কোনো টাকা-পয়সা নেই।’ রাসুল (সা.) বললেন, ‘না। প্রকৃত গরিব ওই ব্যক্তি, যে কেয়ামতে পাহাড়সম নেকি নিয়ে উঠবে; কিন্তু সে জাহান্নামে যাবে। কারণ সে দুনিয়ায় কাউকে গালি দিয়েছিল, প্রতারণা করেছিল, অন্যের হক নষ্ট করেছিল ইত্যাদি। কেয়ামতের মাঠে ওইসব লোক তার কাছে পাওনা দাবি করবে। বিনিময়ে সে নিজের সব নেকি দিতে বাধ্য হবে। নেকি শেষ হলে তার কাছে দেওয়ার মতো আর কিছু থাকবে না। তখন সে পাওনাদারদের পাপের বোঝা নিজের মাথায় নিয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’ (মুসলিম : ৬৩৪৩)। তিন. হাশরবাসীর সামনে লাঞ্ছনা। রাসুল (সা.) বলেন, ‘প্রত্যেক প্রতারকের জন্য কেয়ামতের দিন তার (নিতম্বের) ওপর একটি পতাকা থাকবে। আর পতাকা বিশ্বাসঘাতকতার পরিমাণ অনুযায়ী উঁচু করা হবে। সাবধান! জনগণের শাসক হয়েও যে বিশ্বাসঘাতকতা করে, তার চেয়ে বড় প্রতারক আর নেই।’ (মুসলিম : ৪৩৮৮)।