মানুষের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করা ও তাদের দোষ খুঁজে বেড়ানো মস্ত বড় অপরাধ। রাসুল (সা.) বলেন, ‘হে লোকসকল! তোমরা যারা মুখে ঈমান এনেছ; কিন্তু অন্তরে এখনও ঈমান প্রবেশ করেনি, তোমরা মুসলিমদের গিবত কোরো না। তাদের গোপন দোষ তালাশ করে ফিরবে না। কেননা যারা মুসলিমদের গোপন দোষ তালাশ করবে, আল্লাহ তাদের দোষ উদ্ঘাটিত করবেন। আর আল্লাহ যার দোষ বের করে দেবেন, তাকে তিনি তার ঘরেই অপদস্থ করবেন।’ (সুনানে আবি দাউদ : ৪৮০২)।
ছবি বা ভিডিওর মাধ্যমে হয়রানি নিষেধ
আধুনিক অ্যাপস বা বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস ব্যবহারের মাধ্যমে ছবি, ভিডিও ইত্যাদি এডিট করে কারও মানহানি করা, হয়রানি করা কিংবা ব্ল্যাইকমেইল করা ঘৃণ্য অপরাধ। এটা গুরুতর অপব্যবহার ও সর্বনিকৃষ্ট হারাম। আল্লাহতায়ালা এর পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেন, ‘যারা মিথ্যা অপবাদ রটনা করেছে, তারা তোমাদেরই একটি দল। তোমরা একে নিজেদের জন্য খারাপ মনে কোরো না; বরং এটা তোমাদের জন্য মঙ্গলজনক। তাদের প্রত্যেকের জন্য ততটুকু আছে, যতটুকু সে গোনাহ করেছে। তাদের মধ্যে যে এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে, তার জন্য রয়েছে মহাশাস্তি।’ (সুরা নুর :১১)। আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘যারা বিনা অপরাধে মোমিন নর-নারীকে কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে।’ (সুরা আহজাব : ৫৮)।
ব্ল্যাকমেইলার আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত
ব্ল্যাকমেইলিং ব্যক্তি ও সামাজিক জীবনে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সাধারণ আইন ব্যবস্থা এবং মূল্যবোধ ও নৈতিকতা রক্ষায় এ ধরনের অপরাধীকে আল্লাহতায়ালা ইহ-পরকালের শাস্তির ভয় দেখিয়েছেন। উভয় জাহানে তাঁর রহমত থেকে বঞ্চিত করেছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা সতী-সাধ্বী, নিরীহ ঈমানদার নারীদের প্রতি অপবাদ আরোপ করে, তারা ইহ-পরকালে ধিকৃত। তাদের জন্য রয়েছে গুরুতর শাস্তি।’ (সুরা নুর :২৩)।
পরিবেশ ঘোলাটে করা ঈমানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক
মানুষের বিভিন্ন গোপন খবরাখবর প্রচার করা, এসব কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখা এবং মিথ্যা-বানোয়াট ও বিকৃতির মাধ্যমে তাদের সমস্যাকে আরও জটিল করে তোলা ঈমানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিষয়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘প্রকৃত মুসলমান হচ্ছে সে, যার জবান ও হাত থেকে অপর মুসলমান নিরাপদ থাকে।’ (বোখারি : ৯)। রাসুল (সা.) আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে অথবা চুপ থাকে।’ (বোখারি : ৫৫৯৩)।
মানহানি করা আল্লাহর সীমালঙ্ঘন করার শামিল
কাউকে মানহানি করলে আল্লাহর সীমারেখা লঙ্ঘন করা হয়। কেননা, যে ব্যক্তি মানুষের ইজ্জত-আব্রুতে আঘাত করে, সে মানুষের দৃষ্টিতে হালকা হয়ে যায়। আল্লাহর কাছে তার জন্য মন্দ পরিণতি অপেক্ষা করে। তার চরিত্রবান হওয়া উচিত, যা তার ব্যক্তি ও সমাজের জন্য দ্বীনি, দুনিয়াবি ও পরকালীন কল্যাণ বয়ে আনবে। একবার রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘কোন জিনিস মানুষকে সবচেয়ে বেশি জান্নাতে প্রবেশ করাবে?’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহর ভয় এবং উত্তম চরিত্র।’ আবার জিজ্ঞাসা করা হলো, ‘কোন জিনিস মানুষকে সবচেয়ে বেশি জাহান্নামে প্রবেশ করাবে?’ রাসুল (সা.) বললেন, ‘মুখ ও লজ্জাস্থান। (অর্থাৎ মুখ ও লজ্জাস্থানের গোনাহ)।’ (তিরমিজি : ২০৪)।