ঢাকা সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

একুশের মাওলানারা

ভাষা আন্দোলনের প্রামাণ্য ইতিহাস

ভাষা আন্দোলনের প্রামাণ্য ইতিহাস

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মতো ভাষা আন্দোলনেও দল-মত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব বাঙালিরই কমবেশি ভূমিকা ছিল। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজনের পর পাকিস্তানিরা যখন আমাদের মাতৃভাষা কেড়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল, এ দেশের ওলামায়ে কেরামও তখন তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। মিছিল-মিটিং ও সমাবেশ করেছিলেন। সরকারকে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করেছিলেন। ভাষা আন্দোলনের সময় আলেমদের রাজনৈতিক সংগঠন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের ঐতিহাসিক ও অন্যতম দাবি ছিল, ‘বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণ করা হোক।’ উত্তাল সে সময় ওলামায়ে কেরাম শুধু এটিকে দাবি হিসেবেই সীমাবদ্ধ রাখেননি, দাবি আদায়ের লক্ষ্যে অনেক কাজও করেন। মানুষকে তারা সচেতন করে তোলেন। বয়ান-বক্তৃতায় মাতৃভাষার গুরুত্ব আলোচনা করতেন। জনসাধারণকে বোঝাতেন। হাটে-ঘাটে, স্কুল-মাদ্রাসায় মিটিং ও পথসভা করে জাতিকে বুঝিয়েছেন মাতৃভাষার গুরুত্ব। আবুল মনসুর আহমদের ভাষায়, ‘মুসলিম বাংলার সৌভাগ্য, উর্দুপ্রীতি যাদের বেশি থাকবার কথা, সেই আলেম সমাজই এই অপচেষ্টার বাধা দিয়েছিলেন। মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী উর্দুবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দান করেছিলেন। বাংলার ওপর উর্দু চাপানোর সে চেষ্টা তখনকার মতো ব্যর্থ হয়।’

অথচ পরিতাপের বিষয় হলো, আলেমদের সে ত্যাগ, সংগ্রাম ও ভূমিকা আড়াল করার, বরং তা নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা করছে একটি চিহ্নিত মহল। কিন্তু ভাষা আন্দোলন থেকে একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধ পর্যন্ত প্রতিটি আন্দোলন ও সংগ্রামের গণসম্পৃক্ততা তাদের অপপ্রয়াসকে ব্যর্থ করে দিয়েছে। ইতিহাসের বিস্তৃত অঙ্গনের প্রতিটি পরতে মুক্তিকামী ও সংগ্রামী আলেমরা যে উজ্জ্বল পদচিহ্ন রেখে গেছেন, দীর্ঘ অপচেষ্টার পরও তা মুছে ফেলা সম্ভব হয়নি। ‘আলেম মুক্তিযোদ্ধার খোঁজে’ গ্রন্থের সফল লেখক ও সাড়াজাগানো সাংবাদিক মাওলানা শাকের হোসাইন শিবলি এ বিষয়ে তুলে ধরেছেন তার শেকড় সন্ধানী গবেষণা। ‘একুশের মাওলানারা’ নামে ৭৭৬ পৃষ্ঠার অনবদ্য সংকলনে ভাষা আন্দোলনে ওলামায়ে কেরামের অবদানের নিগূঢ় সত্যকে বলিষ্ঠ রূপ দিয়েছেন।

দর্শন আচার্য প্রফেসর ড. আনিসুজ্জামান বইটি সম্পর্কে বলেন, মাওলানা শিবলির এ সংক্রান্ত প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ ‘একাত্তরের চেপে রাখা ইতিহাস : আলেম মুক্তিযোদ্ধার খোঁজে’র মতো বক্ষমাণ গ্রন্থটিও ব্যতিক্রমধর্মী এবং জাতির গভীর মনোযোগের দাবিদার। জ্ঞানোদ্দীপক এ বইয়ের ভূমিকায় লেখক মাতৃভাষার প্রতি ইসলামি দৃষ্টিকোণ, বাংলা ভাষার জন্মকথা, জীবনবৃত্তান্ত, বাংলা সাহিত্যের বিকাশে মুসলিম শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতা থেকে শুরু করে ভাষা আন্দোলনে আলেমদের অংশগ্রহণ পর্যন্ত দীর্ঘ ইতিহাসের তথ্যবহুল ফিরিস্তি তুলে ধরেছেন। এতে রয়েছে চমকে ওঠার মতো অনেক ঐতিহাসিক উপাদান। যেমন পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার আগেই আলেমদের দ্বারা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি, বাংলা ভাষার জন্য পাকিস্তানপন্থি হিসেবে পরিচিত মওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁর আন্দোলন, মাওলানা তর্কবাগীশ কর্তৃক একুশে ফেব্রুয়ারি হত্যাকা-ের প্রথম প্রতিবাদ, ভাষা আন্দোলনের সময় মাওলানা শামসুল হুদা পাঁচবাগীর কারাবরণ ইত্যাদি।

বইটির প্রথম খ-ে লেখক ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী পুরোধা আলেমদের ত্যাগ ও সংগ্রামের বিবরণ তুলে ধরেছেন অভিনব উপস্থাপনায়। প্রথম খ-ের পরিশিষ্টে বাংলা, বাঙালি ও বাংলাভূমি নিয়ে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্, সৈয়দ মুজতবা আলী ও অধ্যাপক মাওলানা আখতার ফারুকসহ কয়েকজন বরেণ্য মনীষীর লেখা ও বক্তৃতা সংযোজিত হয়েছে। বইটির দ্বিতীয় খ-ে স্থান পেয়েছে রীতা ভৌমিক সংকলিত ও সম্পাদিত পূর্ব বাংলার ভাষা আন্দোলনের দলিলপত্র (১৯৪৮-১৯৫২) বইয়ের নির্বাচিত অংশ এবং ভাষা আন্দোলনবিষয়ক সরকারি ও বেসরকারি বহু গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র।

ক্রিয়েটিভির আঁকা প্রচ্ছদে আবৃত ৭৭৬ পৃষ্ঠার বইটি সম্পর্কে অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বলেন, ‘প্রত্যেক সচেতন বাংলা ভাষাভাষী নর-নারীর সংগ্রহে বইটি থাকা দরকার। গভীর অভিনিবেশসহ গ্রন্থটি পাঠ করা প্রয়োজন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এ গ্রন্থের মনোযোগী অধ্যয়ন পাঠকের মানসজগতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে। তার মধ্যে মাতৃভাষার প্রতি গভীর ভালোবাসা সৃষ্টি করবে। পরিণতিতে তিনি একজন নতুন মানুষ হিসেবে রূপান্তরিত হবেন।’ রকমারি ডটকম পরিবেশিত গ্রন্থটির বিক্রয় মূল্য ৫০০ টাকা। দেশের বিভিন্ন অনলাইন বুকশপ এবং ঢাকার বাংলাবাজার ও বায়তুল মোকাররমের ইসলামি বইয়ের দোকানগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে। ঘরে বসে সরাসরি সংগ্রহ করতে ০১৮৬৯ ৫১৪ ২২৩ অথবা ০১৮১৬ ৪২৮ ৭২৭ নম্বরে অর্ডার করা যাবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত