ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

অহংকার পতনের মূল

নূর মুহাম্মদ রাহমানী
অহংকার পতনের মূল

সমাজের সর্বত্র আজ অহংকারে ছেয়ে গেছে। দোকানপাট, অফিস-আদালত, জ্ঞান-গবেষণাকেন্দ্র সব সেক্টরেই অহংকারের ছড়াছড়ি। নিজ যোগ্যতা, প্রতিভা আল্লাহর দেওয়া নেয়ামত মনে না করে নিজেকে সবার বড় মনে করার রোগ আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে। নিজেকে জাহির করার প্রচণ্ড প্রতিযোগিতায় আমরা মেতে উঠেছি। অল্প অর্জনটাকে আরও বেশি করে ফুটিয়ে তুলছি। সম্পদের গরমে গরিবের ওপর যাচ্ছেতাই জুলুমণ্ডঅত্যাচার করেই যাচ্ছি। অথচ আল্লাহতায়ালা এ অহংকার ও আত্মগর্বকে চরম অপছন্দ করেন। বিনয়-নম্রতাকে করেন ভীষণ পছন্দ। কোরআনে চির অভিশপ্ত ইবলিশের অপমানের কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে বলা হয়েছে, সে আল্লাহর নাফরমানির রাস্তা বেছে নিয়েছে। আল্লাহতায়ালা তাকেসহ সব ফেরেশতাকে সেজদার নির্দেশ করলে সে অহংকার করে বসে। এ কারণে সে কেয়ামত দিবস পর্যন্ত বিতাড়িত।

ফেরেশতা থেকে অভিশপ্ত শয়তান

মহান আল্লাহ এ ঘটনা মহাগ্রন্থ আল কোরআনের বেশ কয়েকটি স্থানে উল্লেখ করেছেন। এক স্থানে তিনি ঘটনাটি কিছুটা এভাবে বর্ণনা করেছেন, ‘অবশ্যই আমি তোমাদের সৃষ্টি করে তোমাদের আকৃতি দিলাম। তারপর ফেরেশতাদের বললাম, তোমরা আদমকে সেজদা করো। অতঃপর তারা সেজদা করল, ইবলিশ ছাড়া। সে সেজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না।’ আল্লাহতায়ালা বললেন, ‘কীসে তোমাকে বাধা দিলো যে, সেজদা করছ না, যখন আমি তোমাকে নির্দেশ দিলাম?’ সে বলল, ‘আমি তার চেয়ে উত্তম। আপনি আমাকে আগুন থেকে সৃষ্টি করলেন, আর তাকে সৃষ্টি করলেন মাটি থেকে।’ তিনি বললেন, ‘তুমি এদের (ফেরেশতাদের) থেকে নেমে যাও। তোমার এ অধিকার নেই যে, এখানে (তাদের অন্তর্ভুক্ত থেকে) তুমি অহংকার করবে। সুতরাং বেরিয়ে যাও। নিশ্চয়ই তুমি লাঞ্ছিতদের অন্তর্ভুক্ত।’ (সুরা আরাফ : ১১-১৩)।

যুগে যুগে অহংকারীদের দাম্ভিকতা

শুধু ইবলিশ নয়, যুগে যুগে অহংকারী দাপুটেদের পতন হয়েছে। ফেরাউনের পতন হয়েছে এ অহংকারে। সে নিজেকে খোদা দাবি করে বলেছে, ‘আমি তোমাদের বড় প্রভু।’ (সুরা আলা : ২৪)। শক্তিধর নমরুদকেও পেয়ে বসেছিল অহংকারের রোগ। সে বলেছিল, ‘আমিই জীবন ও মৃত্যুদান করি।’ (সুরা বাকারা : ২৫৪)। কোরাইশ কাফেরদেরও মহান আল্লাহকে সেজদা করতে বললে গোড়ামি করতে শুরু করেছিল। তারা বলেছিল, ‘রহমান আবার কে? তুমি কাউকে সেজদা করার আদেশ করলেই কি আমরা সেজদা করব? এতে তাদের পলায়নপরতাই বৃদ্ধি পায়।’ (সুরা ফোরকান : ৬০)।

অহংকারীর অন্তরে মোহর মারা হয়

অহংকারীকে কেউ পছন্দ করে না। জ্ঞানী-গুণী হলেও অহংকার থাকলে মানুষ মন থেকে শ্রদ্ধা করে না। অহংকারীর অন্তরে আল্লাহ মোহর মেরে দেন। ফলে হক-বাতিলের পার্থক্য সে করতে পারে না। এরশাদ হচ্ছে, ‘এভাবে আল্লাহ প্রত্যেক অহংকারী দাপুটে ব্যক্তির অন্তরে মোহর মেরে দেন।’ (সুরা গাফের : ৩৫)।

অহংকারের পরিণাম ভয়াবহ

হাদিস শরিফেও অহংকারের ভয়াবহতার বয়ান এসেছে। বর্ণিত হয়েছে এর বিধিবিধান। রাসুল (সা.) বলেন, ‘এক ব্যক্তি অহংকার করে নিজের লুঙ্গি জমিনে হেঁচড়ে যাচ্ছিল। ফলে তাকে জমিনে ধ্বসিয়ে দেওয়া হয়। কেয়ামত পর্যন্ত সে এভাবে জমিনে ঢুকতে থাকবে।’ (বোখারি : ৩৪৮৫)।

অহংকার বিপদ ডেকে আনে

অহংকার বিপদ-মসিবত ডেকে আনে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘এমন এক ব্যক্তি আছে, যে সবসময় নিজেকে শ্রেষ্ঠ মনে করে, মানুষের কাছ থেকে দূরে সরে থাকে, এমনকি তার নাম উদ্ধত-অহংকারীদের মধ্যে লিখে দেওয়া হয়। আর অহংকারীদের ওপর যে বিপদ অবতীর্ণ হয়, তার ওপরও সেই বিপদ অবতীর্ণ হয়।’ (তিরমিজি : ২০০০)।

অহংকারীর স্থান জাহান্নাম

সমাজে সাধারণত শক্তিশালী লোকরা অন্যদের খুব ছোট মনে করে। মন থেকে ঘৃণা করে। নিজ অবস্থানকে খুব করে তুলে ধরে। কিন্তু কেয়ামতের দিন হবে পুরো উল্টো। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমি তোমাদের জান্নাতি মানুষ সম্পর্কে বলব? তারা দেখতে বৃদ্ধ ও খুব দুর্বল লোক (কিন্তু আল্লাহর কাছে তাদের মর্যাদা হলো) তারা যদি কোনো কথায় আল্লাহর কসম খেয়ে ফেলে, তাহলে আল্লাহ অবশ্যই তা পূর্ণ করেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি কি তোমাদের জাহান্নামি মানুষ সম্পর্কে বলব? তারা মিথ্যা ও তুচ্ছ বস্তু নিয়ে খুব বিবাদকারী, শান্ত মস্তিষ্কে ধনসম্পদ সঞ্চয়কারী ও অহংকারী।’ (বোখারি : ৪৯১৮)।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত