ঢাকা শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

পরিবারে পিতামাতা ও সন্তানের পারস্পরিক দায়িত্ব

মুহাম্মদ আব্দুল কাদের
পরিবারে পিতামাতা ও সন্তানের পারস্পরিক দায়িত্ব

পিতামাতার সঙ্গে ছেলেমেয়েদের কীরূপ সম্পর্ক এবং ব্যবহার হওয়া উচিত এ ব্যাপারে কোরআনের সুস্পষ্ট এবং ব্যাপক শিক্ষা রয়েছে। বলা হয়েছে যে, তাদের (মাতাপিতাকে) ‘উহ্’ করার মতো কষ্টদায়ক কথাও যেন বল না। অর্থাৎ তোমাদের কথা এবং কাজে এমন কিছু করো না, যা তাদের জন্য মনোকষ্টের কারণ হতে পারে। কোরআনের নির্দেশ হচ্ছে : ‘তাদের সামনে ভালোবাসার সঙ্গে নম্রভাবে মাথানত করে দাও এবং বল : হে আমাদের পালনকর্তা! তাদের উভয়ের প্রতি রহম করো, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন।’ (বনি ইসরাইল : ২৪)।

এ ছাড়া পিতামাতা যতক্ষণ পর্যন্ত ইসলামি শিক্ষা ও মূলনীতির স্পষ্ট বিরোধী কোনো নির্দেশ না দেবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের আদেশ অমান্য করা যাবে না। অর্থাৎ ইসলামি শিক্ষা ও মূলনীতির স্পষ্ট পরিপন্থি কোনো নির্দেশ পিতামাতা কর্তৃক ছেলেমেয়েদের ওপর আরোপিত হলে তা পরিত্যাজ্য। অপর পক্ষে ছেলেমেয়েদের সৎ ও উপযুক্ত নাগরিকরূপে গড়ে তোলার জন্য পিতামাতার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। ইসলাম অন্ধকার যুগের অনুসরণে খাদ্যাভাব এবং দারিদ্র্যের ভয়ে শিশু তথা সন্তান-সন্ততিকে হত্যা করতে নিষেধ করেছে। এরূপ কর্মকে অমার্জনীয় অপরাধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। পিতামাতার অবশ্য কর্তব্য হচ্ছে তাদের ছেলেমেয়েদের ভালো কাজের নির্দেশ দেওয়া এবং অন্যায় ও অপকর্ম থেকে বিরত রাখা। হজরত ইসমাইল (আ.)-এর আলোচনা প্রসঙ্গে কোরআনে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি (ইসমাইল) তার পরিবারকে নামাজ প্রতিষ্ঠা ও জাকাত প্রদান করার নির্দেশ দিতেন। (মারইয়াম : ৫৫)।

এছাড়া কোরআন মোমিনদেরকে তাদের পরিবারের উদ্দেশ্যে একটি সুন্দরতম দোয়া শিক্ষা দিয়েছে। দোয়াটি এই : ‘...হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের স্ত্রীবর্গ ও সন্তান-সন্ততির মাধ্যমে আমাদের চক্ষুগুলোর উজ্জ্বলতা দান কর এবং আমাদের মুত্তাকি তথা খোদাপরায়ণ লোকদের ইমাম নিযুক্ত কর।’ (ফুরকান : ৭৪)। আলোচ্য আয়াতে ‘মুত্তাকি’ অর্থে তাফসিরকাররা পরিবারভুক্ত লোকদের বোঝাতে চেয়েছেন।

পরিবার সংগঠনের পর ইসলাম আত্মীয়দের সঙ্গে সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠা করার নির্দেশ দিয়েছে। এ ব্যাপারে কোনো তারতম্য করা হয়নি; বরং সবাই এর মধ্যে শামিল রয়েছে। ইসলামের উপস্থাপিত এই মূলনীতি ও নির্দেশ অনুযায়ী রক্ত অথবা আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ বিভিন্ন পরিবারের মধ্যে একটি দৃঢ়বন্ধন এবং ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়ে পড়ে। একই পরিবারভুক্ত লোকদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের অগ্রগতির জন্য পরস্পরকে সহানুভূতিশীল এবং দয়ার্দ্রচিত্ত হওয়ার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে নিকট আত্মীয়ের হক অধিক। তাই নিকটাত্মীয়ের সঙ্গে সমধিক সৌহার্দ্র্য রক্ষা করার জন্য কোরআনে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। ‘...পিতামাতা এবং নিকট আত্মীয়দের সঙ্গে ইহসান কর...।’ (বাকারা : ৮৩)।

সন্তানদের শিষ্টাচার শিক্ষা দেওয়া প্রসঙ্গে কোরানের নির্দেশনা- ‘যখন লোকমান উপদেশচ্ছলে তার পুত্রকে বলল- হে বৎস! আল্লাহর সঙ্গে শরিক কর না, কেননা, শিরক হলো মহা অন্যায়। আর আমি মানুষকে তার পিতামাতার সঙ্গে সদ্ব্যহারের নির্দেশ দিয়েছি। তার মাতা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে। তার দুধ ছাড়ানো দু’বছরে হয়। নির্দেশ দিয়েছি যে, ‘অবশেষে আমারই দিকে ফিরে আসতে হবে। আমার প্রতি ও তোমার পিতামাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও।’ (লুকমান : ১৩-১৪)।

ইমাম সাজ্জাদ (আ.) পিতামাতার ওপর সন্তানের অধিকার সম্পর্কে বলেছেন : ‘আর তোমার সন্তানের অধিকার হলো এটা জানবে যে, সে তোমার থেকেই এবং এই দুনিয়ায় তোমার সঙ্গেই সম্পর্কযুক্ত, ভালো হোক আর চাই মন্দ হোক। তোমার ওপরই তার পৃষ্ঠপোষকতার ভার। তাকে ভালোভাবে প্রতিপালন এবং তার মহাপ্রতিপালকের প্রতি নির্দেশনা দানের মাধ্যমে এবং তাকে তোমার ব্যাপারে ও তার নিজের ব্যাপারে আনুগত্যের ক্ষেত্রে সাহায্য করার মাধ্যমে তুমি সওয়াব লাভ করবে। আর অবহেলা করলে শাস্তি পাবে। কাজেই তার জন্য এমন কোনো কাজ করো, যাতে অস্থায়ী এ দুনিয়ায় তার সুফল পায়, আর তোমার ও তার মধ্যে সম্পর্ককে শোভামণ্ডিত কর, যাতে প্রতিপালকের কাছে তাকে উত্তমরূপে পৃষ্ঠপোষকতা এবং তার থেকে যে খোদায়ি ফল লাভ করেছ, তার কারণে ক্ষমার পাত্র হতে পারো।’

সুতরাং ইসলাম পরিবারকে উত্তম সমাজের ভিত্তি বলে গণ্য করেছে এবং একে রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় বিধানও বর্ণনা করেছে। সামাজিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য পারিবারিক জীবনে স্বামী-স্ত্রী ও সন্তান প্রত্যেকের ক্ষেত্রগুলোকে আলাদা করেছে। ইসলামের পরিবার ব্যবস্থায় প্রত্যেককে তার আত্মিক অবস্থা অনুযায়ী দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে। তারা একে অপরের পরিপূরক। তারা নিজ নিজ স্থানে তাদের দায়িত্ব পালন করলেই কেবল একটি পরিপূর্ণ ও আদর্শ সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত