ঢাকা রোববার, ২০ জুলাই ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

নারীজীবন ও ইসলাম

মাহির লাবিব
নারীজীবন ও ইসলাম

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। নারী-পুরুষ উভয়ের জীবনে পরিপূর্ণভাবে ইসলাম পালন করা কাম্য। যেমন আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করো।’ (সুরা বাকারা : ২০৮)। তবে ইসলাম পুরুষের তুলনায় নারীকে বেশি মর্যাদা দিয়েছে। যেমনটা হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত; তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসুল! মানুষের মধ্যে কে সবচেয়ে সুন্দর ব্যবহারের অধিকার রাখে?’ তিনি বললেন, ‘তোমার মা, তারপর তোমার মা, এরপরও তোমার মা। অতঃপর তোমার বাবা। তারপর পরম্পরায় তোমার নিকটবর্তী আত্মীয়-স্বজন।’ (মুসলিম : ২৫৪৮)।

পর্দার বিধান

আল্লাহতায়ালা যেহেতু নারীদের অধিক মর্যাদা দিয়েছেন, সুতরাং তাদের জন্য আল্লাহর আদেশগুলো অবশ্য পালনীয়। আল্লাহতায়ালা নামাজ যেমন ফরজ করেছেন, তেমনি নারীদের ওপর ফরজ করেছেন পর্দা। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীদের, কন্যাদের ও মুসলমান নারীদের বলে দিন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের (মুখের) ওপর নামিয়ে নেয়। এতে এ সম্ভাবনা অধিক যে, তাদের চেনা যাবে; ফলে তাদের উত্যক্ত করা হবে না। আর আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা আহজাব : ৫৯)।

যাদের সঙ্গে পর্দা করতে হবে

একজন নারীর জন্য ১৪ জন পুরুষ ছাড়া বাকি সবার সঙ্গে পর্দা করতে হবে। তারা হলেন- ১. বাবা (নিজের জন্মদাতা বাবা), ২. দুধ বাবা (দুধ মায়ের স্বামী), ৩. চাচা (বাবার আপন ভাই), ৪. মামা (মায়ের আপন ভাই), ৫. শ্বশুর (স্বামীর আপন বাবা), ৬. আপন ভাই (একই বাবার সন্তান), ৭. দুধ ভাই (দুগ্ধদানকারী মায়ের সন্তান), ৮. দাদা (আপন বাবার বাবা), ৯. নানা (নিজ মায়ের বাবা), ১০. নাতি (আপন ভাইবোনের ছেলে-মেয়ের ঘরের সন্তান), ১১. ছেলে (নিজের ছেলে), ১২. ভাতিজা (আপন ভাইয়ের ছেলে), ১৩. ভাগিনা (আপন বোনের ছেলে) এবং ১৪. জামাতা (নিজ মেয়ের স্বামী)।

পর্দার ক্ষেত্রে লক্ষণীয়

১. পোশাক এমন পাতলা ও মিহি হতে পারবে না, যাতে শরীর দেখা যায় এবং সতর প্রকাশ পেয়ে যায়। ২. হাত-পা ও মুখসহ গোটা শরীর ঢেকে রাখতে হবে। ৩. পুরুষকে আকৃষ্ট করে, এমন পোশাক এবং কারুকার্যমণ্ডিত পোশাক পরে বাইরে বের হওয়া যাবে না। ৪. ঢিলেঢালা পোশাক পরতে হবে। ৫. যে পোশাক পরলে অহংকার আসে, এমন পোশাক পরা যাবে না। কেননা, রাসুল (সা.) এমন পোশাক পরতে নিষেধ করেছেন। ৬. কাফের নারীদের সদৃশ পোশাক পরা যাবে না।

পুরুষের সদৃশ পোশাক পরা

ইসলামি শরিয়ত পুরুষদের জন্য এক ধরনের পোশাক নির্ধারণ করেছে এবং নারীদের জন্য নির্ধারণ করেছে ভিন্ন ধরনের পোশাক। তাই পুরুষদের জন্য মেয়েলি পোশাক এবং নারীদের জন্য পুরুষদের পোশাক পরা এবং একে অন্যের সাদৃশ্য গ্রহণ করা নিষেধ। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) সূত্রে বর্ণিত; তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.) সেসব পুরুষের ওপর লানত করেছেন, যারা নারীদের সাদৃশ্য গ্রহণ করে (তাদের মতো আকৃতি, তাদের পোশাক ও তাদের চাল-চলন গ্রহণ করে)। আর সেসব নারীর ওপরও লানত করেছেন, যারা পুরুষদের সাদৃশ্য গ্রহণ করে।’ (বোখারি : ৩৮৮৫)।

টাখনুর নিচে পোশাক পরা

ইসলামি শরিয়ত পুরুষদের টাখনুর ওপরে কাপড় পরতে আদেশ করেছে এবং নারীদের আদেশ করেছে টাখনুর নিচে পরতে। যেমনটা রাসুল (সা.)-এর হাদিসে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) সূত্রে বর্ণিত; রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি অহংকারবশত কাপড় ঝুলিয়ে রাখে, কেয়ামতের দিন আল্লাহতায়ালা তার দিকে (রহমতের দৃষ্টিতে) তাকাবেন না।’ উম্মুল মুমিনিন উম্মে সালামা (রা.) জিজ্ঞেস করলেন, ‘তাহলে নারীরা তাদের কাপড়ের ঝুল কীভাবে রাখবে?’ রাসুল (সা.) বললেন, ‘এক বিঘত ঝুলিয়ে রাখবে।’ উম্মে সালামা (রা.) বললেন, ‘এতে তো তাদের পা অনাবৃত থাকবে।’ রাসুল (সা.) বললেন, ‘তাহলে এক হাত ঝুলিয়ে রাখবে, এর বেশি নয়।’ (সুনানে আবি দাউদ : ৪১১৭, তিরমিজি : ৪/২২৩, সুনানে নাসাঈ : ৮/২০৯, মুসান্নাফে আবদির রাজ্জাক : ১১/৮২)। ইমাম তিরমিজি (রহ.) বলেন, ‘এ হাদিসে নারীর জন্য কাপড় ঝুলিয়ে রাখার অবকাশ দেওয়া হয়েছে। কারণ, এটিই তাদের জন্য অধিক আবৃতকারী।’

পীর-মুর্শিদ ও শিক্ষকদের সঙ্গেও পর্দা জরুরি

পীর-মুর্শিদ ও শিক্ষক যদি ওপরোল্লিখিত ১৪ জন পুরুষ ছাড়া অন্য কেউ হন, অর্থাৎ গাইরে মাহরাম হন, তাহলে তার সঙ্গেও পর্দা করা জরুরি। উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) বলেন, একজন নারী পর্দার পেছন থেকে রাসুল (সা.)-এর হাতে একটি কাগজ দিতে চাইল। রাসুল (সা.) নিজ হাত গুটিয়ে নিলেন (কাগজটি নিলেন না এবং) বললেন, ‘আমি জানি না, এটা পুরুষের হাত নাকি নারীর!’ নারীটি আরজ করল, ‘নারীর হাত।’ নবীজি (সা.) বললেন, ‘তুমি যদি নারী হতে, তাহলে নিশ্চয় নখে মেহেদী থাকত।’ (সুনানে আবি দাউদ)। এ হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, পীর-মুর্শিদ ও শিক্ষকদের সঙ্গেও পর্দা করা অপরিহার্য।

পর্দা না করার শাস্তি

হাদিসে বেপর্দা নারীদের প্রতি কঠিন হুঁশিয়ারি এসেছে। সুতরাং মৃত্যুর আগেই তাদের পর্দা পালন করা কর্তব্য। আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত; রাসুল (সা.) বলেন, ‘দুই শ্রেণির দোজখি এখনও আমি দেখিনি। (কারণ তারা এখন নেই, ভবিষ্যতে আত্মপ্রকাশ করবে)। এক শ্রেণি হচ্ছে ওইসব মানুষ, যাদের হাতে ষাঁড়ের লেজের মতো চাবুক থাকবে, যা দিয়ে তারা মানুষকে প্রহার করবে। (দ্বিতীয় শ্রেণি হচ্ছে) ওইসব নারী, যারা হবে পোশাক পরিহিতা, নগ্ন, আকৃষ্ট ও আকৃষ্টকারী; তাদের মাথা হবে উটের হেলানো কুঁজের মতো। এরা জান্নাতে যাবে না এবং জান্নাতের খুশবুও পাবে না। অথচ জান্নাতের খুশবু তো অনেক অনেক দূর থেকেও পাওয়া যাবে।’ (মুসলিম : ২১২৮)।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত