দুনিয়া পরকালের ক্ষেত। জীবন ও সম্পদ আমানত। বুদ্ধিমানরা সর্বদা কাজের সুযোগ খোঁজে। পার্থিব জীবনের সময়কে উপহার হিসেবে গ্রহণ করে। এটি রাসুল (সা.)-এরও উপদেশ। তিনি বলেন, ‘উপকারী কাজে আগ্রহী হও। আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করো।’ (মুসলিম : ২৬৬৪)। উপদেশটি সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। মোমিনের জন্য আলোকবর্তিকা। কর্মের ভিত্তি। এটি পালনের মাধ্যমেই লক্ষ্য অর্জন হবে। পৌঁছানো যাবে সফলতার দ্বারপ্রান্তে।
কর্মতৎপরতার গুরুত্ব : দ্বীনি হোক বা দুনিয়াবি, বান্দা সর্বদা উপকারী কাজে চেষ্টা চালিয়ে যেতে আদিষ্ট। অলস বসে থাকার সুযোগ নেই। উপায়-উপকরণ গ্রহণ করতে হবে। সাঁতার শিখতে হলে নামতেই হবে জলে। আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করতে হবে। তাঁর ওপর ভরসা করতে হবে। কর্মে সফলতার জন্য তার কাছে সাহায্য চাইতে হবে। জলে না নেমে সাঁতার শিখতে চাইলে সে ব্যর্থ হবে। কোনো কল্যাণ লাভ করতে পারবে না। কোথাও সম্মান পাবে না। না তার দ্বীন হাসিল হবে, না দুনিয়া। কবি বলেন, ‘উঁচু মানসিকতাসম্পন্ন ব্যক্তি সর্বদা উন্নতি কামনা করে। মন-মানসিকতা নিচু হলে অল্পতেই আত্মতৃপ্তিতে ভোগে।’
জ্ঞান আত্মার খোরাক : উপকারী ইলম আর নেক আমল ধর্মীয় সফলতার মূলভিত্তি। জ্ঞান আত্মার খোরাক। জ্ঞানেই নিহিত ইহ-পরকালের চূড়ান্ত সফলতা। সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞান আল্লাহর মারেফাত লাভ করা, তাঁর নামসমূহ, গুণাবলি, আদেশ-নিষেধ ও শরিয়তের বিধিবিধান সম্পর্কে অবগত হওয়া। আর নেক আমল হচ্ছে ফরজ, ওয়াজিব ও নফল ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.)-এর আনুগত্য করা। ইখলাস ও রাসুল (সা.)-এর অনুসরণের মাধ্যমে ইবাদত ও আনুগত্য বাস্তবায়ন করতে হবে। এটাই সৃষ্টির সবচেয়ে বড় লক্ষ্য। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি জিন ও মানবজাতিকে একমাত্র আমার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি।’ (সুরা জারিয়াত : ৫৬)।
উদাসীনতা নয়, সতর্কতা জরুরি : দুনিয়ার ব্যাপারে উদাসীনতা কাম্য নয়। হালাল উপার্জনের মাধ্যমে দুনিয়া থেকে নিজের অংশটা বুঝে নেয়া জরুরি। ব্যক্তিগত দায়িত্ব পালন, পরিবারের হক আদায়, অর্থনৈতিক সুরক্ষা ও চারিত্রিক পবিত্রতার জন্য এটা আবশ্যক। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তিনিই তোমাদের জন্য ভূমিকে সুগম করেছেন। তোমরা তার দিগ-দিগন্তে বিচরণ কর ও আল্লাহর দেওয়া রিজিক থেকে পানাহার কর। পুনরুত্থান তো তাঁরই কাছে।’ (সুরা মুলক : ১৫)।
আল্লাহর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকতে হবে : পূর্ণ চেষ্টা করার পরও উদ্দেশ্য পূরণ না হলে আল্লাহ যা নির্ধারণ করেছেন, তার ওপর সন্তুষ্ট থাকতে হবে। এতেই ঈমান বৃদ্ধি পাবে। হৃদয়ে প্রশান্তি আসবে। মন স্থির হবে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘কখনও বিপদ এলে বোলো না, যদি এরূপ করতাম, যদি এরূপ করতাম (তাহলে এটা হতো না); বরং বলবে, এটাই আল্লাহ নির্ধারণ করে রেখেছিলেন। তিনি যা চান করেন। কারণ, যদি শয়তানের কাজের পথ খুলে দেয়।’ (মুসলিম : ২৬৬৪)। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘প্রত্যেকেরই একটি দিক রয়েছে, যার সে অভিমুখী হয়। তোমরা সৎকাজে প্রতিযোগিতা কর। তোমরা যেখানেই থাক, আল্লাহ তোমাদের সমবেত করবেন। নিশ্চয়ই তিনি সর্বশক্তিমান।’ (সুরা বাকারা : ১৪৬)।
রবের সঙ্গে সততা বজায় রাখতে হবে : বান্দার জন্য সবচেয়ে সুন্দর ও উপকারী হলো, রবের সঙ্গে সততা বজায় রাখা। সংকল্পে ও কর্মে রবের সঙ্গে সততা বজায় রাখতে হবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যদি তারা আল্লাহর সঙ্গে কৃত অঙ্গীকার পূরণ করত, তাহলে তা তাদের জন্য ভালো হতো।’ (সুরা মুহাম্মদ : ২১)। সংকল্পের সততা তার দৃঢ়তায়। কর্মের সততা সার্বিক দিক বজায় রেখে তা বাস্তবায়ন করায়। বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ কোনো দিকই যেন দৃষ্টির বাইরে না থাকে। নিষ্ঠায়, শুদ্ধতা ও রবের প্রতি ভরসায় সততা, খুবই দরকারী। সর্বাধিক সত্যবাদী ওই ব্যক্তি, যে ইখলাস ও আল্লাহর প্রতি ভরসা করায় আন্তরিকভাবে সৎ।
মক্কার মসজিদে হারামে প্রদত্ত জুমার খুতবার সংক্ষেপিত অনুবাদ করেছেন- মুইনুল ইসলাম