ঢাকা ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

শেকল ভাঙার ডাক

আবদুল্লাহ হাসান কাসেমি
শেকল ভাঙার ডাক

নীতি-নৈতিকতা ও সমাজ-সভ্যতার অনন্য ধর্ম ইসলাম। ইহ-পরলৌকিক সুখ, সাফল্য ও সমৃদ্ধির জন্য এটি সর্বব্যাপী জীবনব্যবস্থা। তাই জীবনের কোনো ক্ষেত্রে মুসলমানের জন্য বিজাতীয় ধর্মের অনুসরণের সুযোগ নেই। তবু তিক্ত হলেও সত্য, যত দিন গড়াচ্ছে ও প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধিত হচ্ছে, ততই যেন আমরা ইসলামের শিক্ষা ও নির্দেশনা ভুলে যাচ্ছি। বিজাতীয় সভ্যতাণ্ডসংস্কৃতির প্রতি দিন দিন ঝুঁকে পড়ছি। গড্ডালিকায় গা ভাসাচ্ছি বিধর্মীয় অন্ধ অনুকরণে। দুষ্কৃতি, কুসংস্কার, দুষ্টু স্বভাব ও নিকৃষ্ট ক্রিয়াকর্মের কোনো কিছুতেই বাদ নেই যেন অনুসরণের এ দুর্বার প্রতিযোগিতা।

ওরা পাপ-পাপাচারে আকণ্ঠ নিমজ্জিত, আমরাও হয়েছি। নীচতা, হীনতা ও ইতরতার চরমে পৌঁছেছে, আমরাও পৌঁছেছি। ওরা নগ্নতা, উলঙ্গপনা ও নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশায় গা ভাসিয়েছে, আমাদেরও অনেক অবুঝ মুসলমান নগ্ন ও অর্ধনগ্ন পোশাককে গর্বের বিষয় বানিয়েছে। ওরা ভ্রান্ত আকিদা-বিশ্বাস নিয়ে বিভিন্ন পালা-পার্বন ও আনন্দ-অনুষ্ঠান উদ্ভাবন করেছে, যেগুলো ওরা ধর্মীয় উৎসব হিসেবেই পালন করে থাকে। কিন্তু তা আমাদের ধর্মীয় নীতি-আদর্শ ও সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। তবু আমরা নিজেদের উদারতা ও ধর্মনিরপেক্ষতার রোল মডেল প্রমাণ করতে ওসব অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে থাকি।

বড় পরিতাপের বিষয়, ওরা যখন আমাদের ধর্মীয় গ্রন্থ, নববি আদর্শ, ইসলামি ইতিহাস-ঐতিহ্য ও অনুশাসনের নির্লজ্জ সমালোচনা করে, ওদের উচ্ছিষ্টভোজী আমাদেরই এক শ্রেণি ওসব ধর্মীয় বিষয়ের প্রতি অন্যায় সমালোচনার তীর নিক্ষেপ করে। এভাবে পানাহার, বিয়েশাদি, লেনদেন ও আচার-আচরণের ক্ষেত্রে এবং স্বভাববিরোধী ও ঐশীবিধান পরিপন্থী হীন, জঘন্য, নিকৃষ্ট, কুৎসিত ও কদাকার সব ক্রিয়াকর্মে ওদের তালে তাল মিলিয়ে ওদের পেছনে ছুটতে শুরু করেছি। ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায় বাছ-বিচারের যেন এতটুকু সময় নেই আমাদের।

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ১৪০০ বছর আগে রাসুল (সা.) আমাদেরই সম্বোধন করে বলেছেন, ‘অতি অবশ্যই তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তীদের অনুসরণ করবে প্রতি বিঘতে, প্রতি হাতে; এমনকি তারা যদি গুইসাপের গর্তেও প্রবেশ করে, তবু তাদের অনুসরণে সে গর্তে তোমরা প্রবেশ করবে।’ বর্ণনাকারী আবু সাঈদ (রা.) বলেন, ‘আমরা জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি কি ইহুদি-খ্রিষ্টানদের কথা বলছেন?’ উত্তরে তিনি বললেন, ‘তারা না হলে আর কারা!’ (বোখারি : ৩৪৫৬)। ইহুদি-খ্রিষ্টান, হিন্দু-বৌদ্ধ তথা যেসব জনগোষ্ঠী ইসলামের স্নিগ্ধ ছায়া থেকে বঞ্চিত, তাদের অন্ধ অনুসরণ-অনুকরণে ইসলামি ব্যক্তিত্ব, চরিত্র, পরিচয়-বৈশিষ্ট্য, নীতি-আদর্শ বিলোপ পাওয়ার যেমন সমূহ আশঙ্কা রয়েছে, তেমনি ভয়ংকর আশঙ্কা রয়েছে ইসলামের সীমা-সরহদ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার। এ জন্যই রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা মুশরিকদের বিরোধিতা কর।’ (সুনানে আবি দাউদ : ৬৫২)। আরেক হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি কোনো সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য অবলম্বন করবে, সে তাদেরই দলভুক্ত হিসেবে গণ্য হবে।’ (সুনানে আবি দাউদ : ৪০৩১)। আরেক বর্ণনায় এসেছে, ‘যারা অন্যদের রূপসাদৃশ্য গ্রহণ করবে, তারা আমাদের দলভুক্ত হতে পারে না।’ (তিরমিজি : ২৬৯৫)।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত