ঈমান আনার মাধ্যমে একজন মোমিনের জন্য অসংখ্য কল্যাণের দুয়ার খুলে যায়। পার্থিব ও পরকালীন বহু ফজিলত ও ফায়দা হাসিল হয়। সেসব উপকারিতার কয়েকটি দিক নিয়ে লিখেছেন- তানভির সাকী
আল্লাহর বন্ধুত্ব অর্জিত হয় : যারা ঈমান আনে এবং তাকওয়ার পথ অবলম্বন করে, তারা আল্লাহর বন্ধুত্বের মর্যাদা অর্জন করে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘জেনে রেখ, আল্লাহর অলি বা বন্ধুদের কোনো ভয় নেই, তারা দুঃখিতও হবে না- যারা ঈমান আনে ও তাকওয়া অবলম্বন করে।’ (সুরা ইউনুস : ৬২-৬৩)।
আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ হয় : আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিল করা প্রকৃত মোমিনের সাধনা ও কামনার বস্তু। এ রকম চির-আকাঙ্ক্ষিত বিষয় ঈমানের দৌলত ছাড়া অর্জিত হয় না। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আল্লাহ মোমিন নর-নারীকে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন; যার তলদেশে নহর প্রবাহিত হয়। যেখানে তারা স্থায়ী হবে। (আরো প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন) স্থায়ী জান্নাতে উত্তম বাসস্থানের। (এসব প্রতিদান তাঁর সন্তুষ্টির প্রমাণ)। আল্লাহর সন্তুষ্টিই সর্বশ্রেষ্ঠ ও মহাসাফল্য।’ (সুরা তওবা : ৭২)।
ইহ-পরলৌকিক জীবনে মহাসুসংবাদ : আল্লাহতায়ালা মোমিনদের সার্বিক কল্যাণের সুসংবাদ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘(হে নবী!) আপনি মোমিনদের সুসংবাদ দিন।’ (সুরা বাকারা : ২২৩)। এ আয়াতে আল্লাহতায়ালা সুসংবাদদানের বিষয়টিকে কোনো সীমারূপক ও শর্তসংযুক্ত রাখেননি; বরং সার্বিক কল্যাণ ও রহমতের সুসংবাদ দিতে বলেছেন। অন্য আয়াতে তিনি পরকালীন সুসংবাদের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘হে নবী! যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে, আপনি তাদের সুসংবাদ দিন- তাদের জন্য রয়েছে অসংখ্য উদ্যান; যার তলদেশে রয়েছে নদীসমূহ।’ (সুরা বাকারা : ২৫)। আরেক আয়াতে তিনি ইহ-পরলোকে মোমিনদের সুসংবাদ দিয়ে বলেন, ‘পার্থিব ও পরলৌকিক জীবনে তাদের জন্য রয়েছে মহাসুসংবাদ।’ (সুরা ইউনুস : ৬৪)।
উৎকৃষ্ট জীবন লাভের প্রতিশ্রুতি : ঈমানের অন্যতম প্রাপ্তি হলো, উৎকৃষ্ট ও পূতপবিত্র জীবন লাভের সৌভাগ্য। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘মোমিন অবস্থায় যে কেউ নেক আমল করল, তাকে আমি উৎকৃষ্ট ও পবিত্র জীবন দান করব। তার সৎকর্ম অনুযায়ী আমি উত্তম প্রতিদান দেব।’ (সুরা নাহল : ৯৭)। আল্লাহর পক্ষ থেকে এ ঘোষণা পৃথিবীর আগত-অনাগত সব সৎকর্মশীল মোমিনের জন্য। আল্লাহতায়ালা তাদের উৎকৃষ্ট জীবন ধারনের তৌফিক দানের মাধ্যমে মর্যাদাবান করবেন।
সাফল্য ও হেদায়াতপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা : ঈমানের আরেকটি প্রাপ্তি হলো, সফলতা। এটিই সব উদ্দেশ্যের শেষ সীমানা। হেদায়াত হলো এ সাফল্যে উপনীত হওয়ার একমাত্র মাধ্যম ও বাহন। সুতরাং কারও যদি হেদায়াত হাসিল হয়, সে সাফল্যের সন্ধান পেয়ে গেল। আর মোমিনের জন্য আল্লাহতায়ালা উভয়টিই বরাদ্দ রেখেছেন। তিনি বলেন, ‘তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে হেদায়াতপ্রাপ্ত হয়েছে এবং তারাই সফলকাম।’ (সুরা বাকারা : ২৫)।
উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন হওয়ার সুযোগ : ঈমান আনার ফলে একজন মোমিন সব সৃষ্টির মাঝে উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন হিসেবে বরিত হয়। শুধু আল্লাহর কাছেই নয়, গোটা সৃষ্টি ও মানবজাতির কাছে সে উঁচু মর্যাদা ও সম্মানের অধিকারী হয়। এ মর্যাদা লাভ হয় শুধু বিশুদ্ধ ঈমান ও ইখলাসপূর্ণ আমলের নিক্তিতে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদের ইলম দান করা হয়েছে, আল্লাহ তাদের মর্যাদা সুউচ্চ করেছেন।’ (সুরা মুজাদালা : ১১)।