প্রেম-ভালোবাসার অসংখ্য গল্প পৃথিবীতে আছে; কিছু বাস্তব আর কিছু কাল্পনিক। মানুষের পক্ষে যা সম্ভব নয়, এমন বিভিন্ন বিকল্পকে একত্রিত করে গল্প সাজিয়েও প্রেম-ভালোবাসার মর্যাদা তুলে ধরা হয়েছে এ পৃথিবীতে। এ সত্ত্বেও সন্দেহ নেই, মহানবী (সা.)-এর সাহাবিরা তার ভালোবাসায় বাস্তবিকভাবে যেসব উপাখ্যান স্থাপন করেছেন, বিশ্ব ইতিহাসে তা বিরল। নবীজি (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা ছাড়া কেউ ঈমানের প্রকৃত স্বাদ অনুভব করতে পারে না। নবীপ্রেম না থাকলে অনেক ক্ষেত্রে ঈমানের পথে সঠিকভাবে চলাও কষ্টকর; বরং অসম্ভব। যে ব্যক্তির মনে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের ভালোবাসা জগতের সবকিছু অপেক্ষা অধিক পরিমাণ থাকে, সে-ই ঈমানের প্রকৃত স্বাদ আস্বাদান করে। পারলৌকিক জীবনের উচ্চ মাকামে অর্জনের চাবিকাঠিও এটি। নবীজি (সা.)-এর প্রতি যার যত বেশি ভালোবাসা থাকবে, আখেরাতে সে নবীজি (সা.)-এর তত অধিক নৈকট্যপ্রাপ্ত হবে এবং বেহেশতে নবীজি (সা.)-এর সঙ্গে একত্রে অবস্থানের সুযোগ পাবে। সাহাবায়ে কেরাম ছিলেন নবীপ্রেমের সর্বোচ্চ উদাহরণ। নবীজি (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা তাদের সব অস্তিত্বকে ভরে দিয়েছিল। তাদের কথায়, কাজে, আচরণে, অনুভূতিতে নবীজি (সা.)-এর মহব্বত যেন সর্বদা বিগলিত হয়ে পড়ত। এ পৃথিবীতে বহু পয়গম্বর তাশরিফ এনেছেন, বহু নেতা, বহু গুণীজন এসেছেন, শিরিন-ফরহাদ, লাইলি-মজনু শিরোনামে এ জগতে ভালোবাসার বহু উপাখ্যান রচিত হয়েছে, কিন্তু সাহাবায়ে কেরাম (রা.) যে ভালোবাসার মাধ্যমে নবীজি (সা.)-কে গ্রহণ করেছিলেন, তা পৃথিবীর সব উপাখ্যানকে ম্লান করে দিয়েছে। পৃথিবীর সব ভালোবাসার ওপর আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.)-এর ভালোবাসা অগ্রগণ্য। আল্লাহ এবং তার রাসুল (সা.)-এর প্রতি ঈমান যার যত মজবুত, তার ভালোবাসার দাবি তাকে তত বেশি ত্যাগ স্বীকার করতে প্রণোদিত করে। দুনিয়ার সবকিছুর ওপর আল্লাহর ভালোবাসাকে অগ্রাধিকার দেয়ার মাধ্যমে মোমিন বান্দা ত্যাগের সর্বোচ্চ চূড়ায় উপনীত হতে পারে। অপরদিকে রাসুল (সা.)-এর ভালোবাসাকে সবকিছুর ওপর প্রাধান্য না দেয়া পর্যন্ত কোনো বান্দা ঈমানদার হতে পারে না। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণ মোমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার পিতামাতা, সন্তান-সন্তুতি এবং সব মানুষের চেয়ে প্রিয়তর হব।’ (বোখারি : ১৫, মসুলিম : ৪৪)। একবার ওমর (রা.) বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! অবশ্যই আপনি আমার কাছে সবকিছুর চেয়ে প্রিয় কেবল আমার প্রাণ ছাড়া।’ জবাবে রাসুল (সা.) বললেন, ‘না, কখনোই না। যাঁর হাতে আমার প্রাণ, তাঁর কসম করে বলছি! যতক্ষণ না আমি তোমার কাছে অধিক প্রিয় হব তোমার প্রাণের চেয়ে।’ এরপর ওমর (রা.) বললেন, ‘হ্যাঁ। আল্লাহর কসম! অবশ্যই আপনি আমার কাছে আমার প্রাণের চেয়েও প্রিয়।’ তখন রাসুল (সা.) বললেন, ‘এখন তোমার ভালোবাসা ও ঈমান পূর্ণ হলো হে ওমর!’ (বোখারি : ৬৬৩৩)।