মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ
সাবেক সহকারী মুফতি, গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসা, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ
প্রকাশ : ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

প্রশ্ন : তাবলিগ জামাতের মারকাজ ঢাকা কাকরাইল মসজিদ থেকে ৪০, ২০, ৭ ও ৩ দিনের জন্য বিভিন্ন মহল্লা, গ্রাম, শহর, পৌরসভা, থানা বা জেলাভিত্তিক জামাত পাঠানো হয়। এ অবস্থায় তাবলিগ জামাতের ভাইদের নামাজের হুকুম কী হবে? কিছু ভাই বলে থাকেন, তাবলিগ জামাতে বেরিয়ে যেহেতু একই মসজিদে ১৫ দিনের বেশি অবস্থান করা হয় না, তাই সদা-সর্বদা মুসাফির থাকবে। তাদের এ কথা কতটুকু সঠিক? আর যদি একই মসজিদ বা একই মহল্লা, গ্রাম, ইউনিয়ন, থানা বা জেলার ভেতর ১৫ দিনের বেশি থাকে, তাহলে নামাজের হুকুম কী?
উত্তর : যে ব্যক্তি ঢাকা সিটিতে মুকিম, সে কাকরাইল থেকে সফরসম দূরত্বে যাওয়ার উদ্দেশে বেরুলে ঢাকা সিটির সীমানা ত্যাগ করার পর থেকে সে মুসাফির গণ্য হবে। পথিমধ্যে মুসাফির ইমামের পেছনে বা একাকী নামাজ পড়লে কসর করতে হবে। অর্থাৎ চার রাকাতবিশিষ্ট ফরজ নামাজ দু’রাকাত পড়তে হবে। আর মুকিমের পেছনে পড়লে পুরো চার রাকাত পড়তে হবে। গন্তব্যস্থলে পৌঁছে একটি গ্রাম বা একটি শহরের বিভিন্ন মসজিদে লাগাতার ১৫ দিন বা তার বেশি থাকার নিয়ত করলে ওই গ্রাম বা শহরে সে মুকিম গণ্য হবে। কিন্তু এক গ্রাম বা এক শহর না হয়ে পুরো জেলা বা উপজেলায় কিংবা এক ইউনিয়নের একাধিক গ্রামে ১৫ দিন বা তার বেশি অবস্থানের নিয়ত করলে সে মুকিম হবে না; বরং মুসাফিরই থাকবে। তদ্রূপ শহর ও শহরতলী মিলে ১৫ দিন বা তার বেশি অবস্থানের নিয়ত করলেও মুসাফির থাকবে।
তেমনি এক গ্রাম বা এক শহরের বিভিন্ন মসজিদে ১৫ দিনের কম থাকার নিয়ত করলে ওই গ্রাম বা শহরেও সে মুসাফির গণ্য হবে। আর মুকিম ব্যক্তি কাকরাইল থেকে ৭৮ কিলোমিটারের কম দূরত্বে সফরের জন্য বেরুলে পথিমধ্যে এবং গন্তব্যস্থলে মুকিম গণ্য হবে। তবে যে ব্যক্তি কাকরাইলে মুসাফির থাকবে, সে কাকরাইল থেকে ৭৮ কিলোমিটারের কম দূরত্বে গেলেও মুসাফিরই থাকবে। কোনো এক মসজিদে ১৫ দিনের বেশি অবস্থান না করলে সর্বদা মুসাফির থাকবে, এমন বক্তব্য সঠিক নয়। (বাদায়েউস সানায়ে : ১/২৬১, ২৬৮-২৭০; কিতাবুল আসল : ১/২৩১-২৩৩, ২৫৬; আল-বাহরুর রায়েক : ২/১৩০-১৩২; রদ্দুল মুহতার : ২/১২১-১২৫)।
প্রশ্ন : কেউ ইমাম সাহেবকে রুকু অবস্থায় পেয়ে তাড়াতাড়ি করে তাকবির বলে রুকুতে চলে গেল। রুকুর জন্য ভিন্ন তাকবির বলল না। তার কী এভাবে তাকবিরে তাহরিমা আদায় হবে?
উত্তর : প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি যদি দাঁড়ানো অবস্থায় তাকবির শেষ করে থাকেন, তাহলে ওই তাকবিরটি তাকবিরে তাহরিমা হিসেবে ধর্তব্য হবে। সেক্ষেত্রে নামাজও সহিহ হবে। আর প্রশ্নোক্ত পরিস্থিতিতে রুকুর তাকবির না বললেও অসুবিধা নেই। কেননা, রুকুর জন্য ভিন্ন তাকবির বলা জরুরি নয়। পক্ষান্তরে তাকবির যদি রুকুতে গিয়ে শেষ হয় কিংবা রুকুর কাছাকাছি গিয়ে শেষ হয়, তাহলে ওই নামাজ সহিহ হবে না। কেননা, এ ক্ষেত্রে তাকবিরে তাহরিমা আদায় হয়নি। আর তাকবিরে তাহরিমা ফরজ। এটা ছাড়া নামাজ শুরুই হয় না। (ফতোয়ায়ে বাজ্জাজিয়্যা : ৪/৩৮, আল-বাহরুর রায়েক : ১/২৯১; আদ্দুররুল মুখতার : ১/৪৮০-৪৮১; হাশিয়াতুত তাহতাবি আলাল মারাকিল ফালাহ : ১১৯; আন-নারুহল ফায়েক : ১/১৯৪)।
