মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ

সাবেক শিক্ষক, ফতোয়া ও আরবি সাহিত্য বিভাগ গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসা, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ

প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

প্রশ্ন : ডিজাইন ও কারুকার্য করা বোরকা পরা যাবে? কেউ যদি ডিজাইন করা বা রঙিন বোরকার ব্যবসা করে, তাতে সে কি গোনাহগার হবে?

উত্তর : বোরকার উদ্দেশ্য হলো- মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢেকে দেওয়া; যাতে পরপুরুষের নজর শরীরে না পড়ে। এ উদ্দেশ্যটি শরীর ঢেকে দেয়, এমন প্রতিটি বোরকা দ্বারাই অর্জিত হয়। তবে খেয়াল রাখা প্রয়োজন, যেন বোরকা এমন না হয়, যার ওপরের অংশ থেকেই পুরুষদের আকর্ষিত করে। এ হিসেবে কালো বোরকা পরিধান করাই সর্বোত্তম। পরপুরুষকে আকৃষ্ট করার জন্য যদি ডিজাইন করা বোরকা পরিধান করা হয়, তাহলে খারাপ নিয়তের কারণে উক্ত নারী গোনাহগার হবে। কিন্তু এ কারণে এসব বিক্রিকারীর ওপর গোনাহ অর্পিত হবে না। তাই সব ধরনের বোরকা বিক্রি করা যাবে। নারীদের কাপড় ও বোরকা পরিধানের ক্ষেত্রে মূলত দুটি বিষয় লক্ষণীয়। যথা- এক. পর্দা করা অর্থাৎ সতর আবৃত করা। দুই. নিজের কোনো সৌন্দর্য পরপুরুষদের দৃষ্টিতে প্রকাশ না করা। ফকিহগণ পর্দা শুদ্ধ হওয়ার জন্য সাতটি শর্তের কথা উল্লেখ করেছেন।

যথা- ১. পর্দা সমস্ত অঙ্গকে আবৃত করতে হবে। ২. হিজাব বা বোরকা মোটা ও পুরু হতে হবে, পাতলা হলে চলবে না; যা ভেদ করে নারীর দেহের সৌন্দর্য প্রকাশ পায়। ৩. পর্দা ও বোরকা ঢিলেঢালা হতে হবে, টাইট-ফিটিং না হতে হবে। ৪. নকশাকৃত, বুটিদার এবং এমন আকর্ষণীয় না হতে হবে, যাতে পুরুষদের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়। ৫. প্রসিদ্ধি ও খ্যাতি অর্জনের লেবাস না হতে হবে। ৬. পুরুষদের লেবাসের সঙ্গে সাদৃশ্য না হতে হবে। ৭. বির্ধমী নারীদের লেবাস-পোশাকের সঙ্গে সাদৃশ্য না হতে হবে। চার নম্বর শর্তটির কথা কোরআনের সুরা নুরের ৩১ নম্বর আয়াতে এভাবে এসেছে, ‘তারা যেন তাদের গোপন আবরণ প্রকাশের উদ্দেশ্যে সজোরে পদক্ষেপ না করে।’ বিশ্বখ্যাত মুফাসসিরে কোরআন আল্লামা আবুল ফজল মাহমুদ আলুসি (রহ.) বলেন, ‘আয়াতে যেসব সৌন্দর্য প্রকাশ করাকে হারাম বলা হয়েছে, আমার দৃষ্টিতে সেগুলোর অন্যতম হলো, বর্তমান যুগের নারীরা ঘর থেকে বের হওয়ার আগে তাদের পোশাকের ওপর হিজাব হিসেবে যে চমকদার কাপড় পরিধান করে, সেটাও এ নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত। এই কাপড়গুলো রেশমির বুটিক করা, যাতে নানা রকমের রঙ থাকে, স্বর্ণ ও রুপার এমন নকশা করা থাকে, যা পুরুষদের চোখ ধাঁধিয়ে দেয় এবং বিস্ময়াভূত করে। আমার মতে, স্ত্রীদের এ ধরনের কাপড় পরিধান করার সুযোগ দান ও ঘর থেকে বের হওয়ার অনুমতি দেওয়া এবং এরূপ কাপড় পরিধান করে পরপুরুষের মধ্যে চলাফেরা করতে দেওয়া স্বামীদের আত্মমর্যাদাহীনতার স্বল্পতার কারণ। এ বিষয়টি বর্তমানে মহামারির আকার ধারণ করেছে।’ (তাফসিরে রহুল মাআনি : ১৮/১৪৬)। আল্লামা আলুসি (রহ.) পরিধানের কাপড়ের বোরকা, নেকাব ও হিজাব হিসেবে পরিহিত নকশাদার কাপড় পরিধান করাকে পুরুষের চোখে আকর্ষণ সৃষ্টির কারণে নাজায়েজ বলেছেন।

সুতরাং বোঝা গেল, এসব কাপড় দ্বারা হিজাবের ফরজ আদায় হলেও সৌন্দর্য প্রকাশের কারণে তা নাজায়েজ হবে। লাজনায়ে দায়েমা লিল-ইফতার ফকিহগণকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তারা জবাবে বলেছেন, ‘নারীদের জন্য এমন নকশাদার ও চমকদার কাপড় পরিধান করে বের হওয়া নাজায়েজ, যা পুরুষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। কেননা, এসব কাপড় পুরুষদের বিভ্রান্ত করে, দ্বীনের ব্যাপারে ফেতনায় নিক্ষেপ করে এবং কখনও কখনও এসব কাপড়ে যুবকরা উ™£ান্ত হয়ে নারীদের সঙ্গে ইভজিটিং করে।’ (ফতোয়ায়ে লাজনাতুদ দায়িমা : ১৭/২০০)।

প্রশ্ন : নারীরা পাতলা এবং টাইট জামা পরতে পারবে? কোনো মেয়ের পিতামাতা বা স্বামী যদি এসব পোশাক কিনে দেয়, তবে তারা গোনাহগার হবে কী?

উত্তর : যে পাতলা ও আঁটসাঁট কাপড় পরিধান করলে মেয়েদের শরীরের ভাঁজ প্রকাশিত হয়, এমন কাপড় পরিধান করা নাজায়েজ। হাদিসে এসব কাপড় পরিধানের ব্যাপারে কঠিন ধমকি এসেছে। যারা এসব কাপড় ক্রয় করে এবং কিনতে উৎসাহ দেয়, তারাও এর গোনাহের ভাগীদার হবে। (সুরা মায়িদা : ২, মুসলিম : ২১২৮)।

প্রশ্ন : কোনো নারী যদি এত পাতলা উড়না পরে নামাজ পড়ে যে, উড়না পরার পরও মাথার চুল স্পষ্ট দেখা যায়, তাহলে তার নামাজ হবে?

উত্তর : নামাজের ভেতর নারীদের মাথা ও চুল ঢেকে রাখা ফরজ। তাই উড়না এমন মোটা হতে হবে, যা মাথায় দিলে চুল দেখা যায় না। উড়না যদি এত পাতলা হয়, যা পরার পরও চুল স্পষ্ট দেখা যায়, তাহলে তা মাথায় দিয়ে নামাজ সহিহ হবে না। (বাদায়েউস সানায়ে : ১/৫১৪-৫১৫, তাবয়িনুল হাকায়েক : ১/২৫২-২৫৩, আল-বাহরুর রায়েক : ১/২৬৮, খোলাসাতুল ফাতাওয়া : ১/৭৩)।

প্রশ্ন : নারীদের জন্য চুল রং করার ব্যাপারে ইসলাম কী বলে?

উত্তর : মেয়েদের জন্য সর্বপ্রকার সাজসজ্জাই জায়েজ, যদি তা কোনো খারাপ উদ্দেশ্যে না হয় অথবা শরিয়তে নিষিদ্ধ সাজ না হয়। আর স্বামীকে খুশি করার জন্য চুলে মেহেদী দেওয়া বা কালো ছাড়া অন্য রং করাও জায়েজ। তবে পরপুরুষকে দেখানোর জন্য হলে নাজায়েজ। (বাজলুল মাজহুদ : ৫/৮)।