মক্কা শরিফের জুমার খুতবা
ঈমানে দৃঢ়তা আসে যেভাবে
শায়খ ড. বান্দার বিন আবদুল আজিজ বালিলা
প্রকাশ : ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

বান্দার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি একিন তথা ঈমানের দৃঢ়তা। এর মাধ্যমে সে মর্যাদার উচ্চতর স্তরে উন্নীত হয়। বিশ্বাসে দৃঢ়তা হৃদয়ের আলো, মোমিনের সফলতা। এটি বোধ ও বোধির প্রশান্তি, জ্ঞানের স্থিরতা; আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.) থেকে যা এসেছে, সে সম্পর্কে চিত্তের নিঃশঙ্কতা। বিশ্বাসের দৃঢ়তাই ঈমানের সারবত্তা ও প্রকৃত বাস্তবতা। এটি অর্জনের জন্য প্রতিযোগীরা প্রতিযোগিতা করে, পরিশ্রমীরা পরিশ্রমে উদ্বুদ্ধ হয়, আল্লাহপ্রেমীরা একে অন্যকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা বিশ্বাস করে তোমার ও তোমার পূর্ববর্তীদের ওপর যা নাজিল করা হয়েছে তার প্রতি, আর দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস রাখে আখেরাতের প্রতিও; তারাই রবের পক্ষ থেকে প্রাপ্ত সঠিক পথের ওপর রয়েছে। তারাই সফলকাম হবে।’ (সুরা বাকারা : ৪-৫)।
দৃঢ় বিশ্বাসের উপকারিতা : বিশ্বাসের অনেক উপকারিতা রয়েছে। এর ফলাফল পবিত্র, সুমিষ্ট। একিনের মাধ্যমে ইহ-পর উভয় কালেই স্বাচ্ছন্দময় জীবন লাভ হয়। ইবনুল কায়্যিম (রহ.) বলেন, ‘দুনিয়া-আখেরাতে বান্দার কল্যাণ ঈমানের দৃঢ়তা ও শারীরিক সুস্থতা ছাড়া সম্ভব নয়। ঈমানের দৃঢ়তার মাধ্যমে আখেরাতের শাস্তি থেকে রক্ষা পাবে। আর পূর্ণ সুস্থতা দ্বারা রক্ষা পাবে আত্মা ও শরীরের বিভিন্ন রোগ থেকে।’ বিশ্বাসের দৃঢ়তা জান্নাতে প্রবেশের মাধ্যম। রাসুল (সা.) আবু হুরায়রা (রা.)-কে বললেন, ‘আমার এই জুতাজোড়া নিয়ে যাও। এ দেয়ালের বাইরে হৃদয়ের দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে আল্লাহর ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই- এ সাক্ষ্যদাতা যাকেই পাবে, তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও।’ (মুসলিম)। আবু বকর (রা.) বলেন, একবার রাসুল (সা.) আমাদের সামনে মিম্বরে উঠে কাঁদলেন। এরপর বললেন, ‘আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও পরিপূর্ণ সুস্থতা কামনা করো। কারণ, ঈমানের দৃঢ়তার পরে পূর্ণ সুস্থতার চেয়ে কল্যাণকর আর কিছু কাউকে দান করা হয়নি।’ (তিরমিজি)। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘একিন পূর্ণ বিশ্বাসেরই অপর নাম।’ আবু বকর ওয়াররাক বলেন, ‘বিশ্বাসের দৃঢ়তাই হৃদয়ের মূল শক্তি।’ হাসান বসরি (রহ.) বলেন, ‘দৃঢ় বিশ্বাসের মাধ্যমেই জান্নাত অন্বেষণ করা হয়। এর মাধ্যমেই মানুষ জাহান্নাম থেকে দূরে সরে যায়। বিশ্বাসের দৃঢ়তার মাধ্যমেই ব্যক্তির ওপর আরোপিত দায়িত্বগুলো পালিত হয়। এরই মাধ্যমে সত্যের ওপর অটল থাকা সহজ হয়।
যেভাবে দৃঢ় বিশ্বাস অর্জিত হয় : বিশ্বাসের মানসিকতার মাধ্যমে দৃঢ় বিশ্বাস অর্জিত হয়। এ জন্য আল্লাহতায়ালা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে হবে। তাঁর আনুগত্যে আত্মসমর্পণ করতে হবে। তাঁর সন্তুষ্টি অন্বেষণ করতে হবে। লড়াই চালিয়ে যেতে হবে নফস, শয়তান ও কুপ্রবৃত্তির সঙ্গে। ঈমানে দৃঢ়তা থাকলে আল্লাহর নিদর্শনাবলি দ্বারা উপকৃত হওয়া যায়। তার আলোতে পথ পাওয়া যায়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তিনি সবকিছু পরিচালনা করেন, তাঁর নিদর্শনাবলি বিস্তারিত বর্ণনা করেন; যাতে তোমরা রবের সঙ্গে মিলিত হওয়ার ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাসী হও।’ (সুরা রাদ : ২)। আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘পৃথিবীতে দৃঢ় বিশ্বাসীদের জন্য অনেক নিদর্শন রয়েছে।’ (সুরা জারিয়াত : ২০)। তিনি আরও বলেন, ‘এটি মানুষের জন্য আলোবর্তিকা এবং হেদায়েত ও রহমত তাদের জন্য, যারা দৃঢ় বিশ্বাস রাখে।’ (সুরা জাসিয়াহ : ২০)।
যার বিশ্বাস যত দৃঢ় হবে, আল্লাহর প্রতি তার ভরসাও তত মজবুত হবে। যে কোনো বিষয়ে ধৈর্যধারণ তার জন্য সহজ হয়ে যাবে। সব বিষয়ে সে আল্লাহর ওপর নির্ভর করার শক্তি পাবে। আল্লাহর ফয়সালায় সন্তুষ্ট থাকবে। তার মসিবত পরিণত হবে নেয়ামতে। শাস্তি পরিণত হবে শান্তিতে। পার্থিব সম্পদ না থাকলেও তাকেই মনে হবে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধনী।
দৃঢ় বিশ্বাসের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক : স্রষ্টা থেকে বিমুখ হয়ে সৃষ্টির প্রতি মনোনিবেশ দৃঢ় বিশ্বাসের ক্ষেত্রে অন্যতম বড় প্রতিবন্ধক। মানুষের হাতে যা আছে, সেদিকে দৃষ্টিপাত করা যাবে না। সাহল ইবনে আবদুল্লাহ (রহ.) বলেন, ‘যে দৃঢ় বিশ্বাসের স্বাদ আস্বাদন করেছে, তার জন্য আল্লাহ ছাড়া অন্য কোথাও প্রশান্তি খোঁজা হারাম।’ যে নিজের অন্তরকে বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর বিষয়ের দিকে ধাবিত করবে, সে ধ্বংসের অতল গহ্বরে পতিত হবে। সন্দেহ-সংশয় অত্যন্ত নিকৃষ্ট বিষয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘ধৈর্যধারণ করো; নিশ্চয় আল্লাহর ওয়াদা সত্য। যারা দৃঢ় বিশ্বাসী নয়, তারা যেন তোমাকে বিচলিত করতে না পারে।’ (সুরা রুম : ৬০)।
মক্কার মসজিদে হারামে প্রদত্ত জুমার খুতবার সংক্ষেপিত অনুবাদ করেছেন- মুফতি মুইনুল ইসলাম
