
বুদ্ধিমান মোমিন কল্যাণের প্রতি ধাবিত হয়। যেসব কাজে আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্ট হন, যেসব কাজ তাঁর নিকটবর্তী করে, সেসব কাজে আগ্রহী হয়। যেসব কাজ তাঁর থেকে দূরে সরিয়ে দেয়, তা এড়িয়ে চলে। বিরত থাকে সেসব কাজ থেকেও, যা তার দুনিয়া ও আখেরাতে ক্ষতির কারণ হয়। যে জিনিসের নৈকট্য উপকারী, তার কাছাকাছি থাকতে হবে। আর যে জিনিসের নৈকট্য ক্ষতিকর, তা থেকে দূরত্বে অবস্থান করতে হবে। এটাই বুদ্ধিমত্তার পরিচয়।
আল্লাহ তায়ালার নৈকট্যই সবচেয়ে উপকারী। যারা আল্লাহতায়ালার নৈকট্য অর্জনে অগ্রসর হয়, আল্লাহ তায়ালা তাদের প্রশংসা করেছেন। এরশাদ হচ্ছে, ‘তারা আপন রব পর্যন্ত পৌঁছার উপায় তালাশ করে। এ উদ্দেশ্যে যে, কে তার সবচেয়ে নিকটবর্তী হতে পারে। তারা তাঁর রহমতের আশা রাখে ও তাঁর আজাবের ভয় করে।’ (সুরা বনি ইসরাইল : ৫৭)। তিনি আরও বলেন, ‘যারা অগ্রগামী, তারা তো অগ্রগামীই। তারাই আল্লাহর বিশেষ নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দা।’ (সুরা ওয়াকিয়া : ১০-১১)।
আল্লাহতায়ালার নৈকট্যের অনেক স্তর রয়েছে। ফেরেশতারা আল্লাহ তায়ালার অনেক বেশি নিকটবর্তী। আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে নিজ দাসত্বের দ্বারা সম্মানিত করেছেন। তিনি ফেরেশতাদের গুণ বর্ণনা করে বলেন, ‘নৈকট্যশীল ফেরেশতারা।’ (সুরা নিসা : ১৭২)। আল্লাহ তায়ালার সবচেয়ে নিকটবর্তী নবী-রাসুলরা। তারা নৈকট্যশীলদের সর্দার। আল্লাহ তায়ালা হজরত মুসা (আ.) এর প্রশংসা করে বলেন, ‘তিনি দুনিয়া ও আখেরাতে সম্মানিত এবং আল্লাহতায়ালার নৈকট্যশীলদের একজন।’ (সুরা আলে ইমরান : ৪৫)। আমাদের নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সবচেয়ে বেশি নিকটবর্তী আল্লাহ তায়ালার। নিশ্চয়ই তিনি নৈকট্যশীলদের মাঝে সর্বাধিক মর্যাদাবান।
আল্লাহ তায়ালার নৈকট্যই বান্দার প্রকৃত শক্তির উৎস। হজরত মুসা (আ.) সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি তাকে তুর পাহাড়ের ডান দিক থেকে ডাক দিলাম। তাকে আমার অন্তরঙ্গরূপে নৈকট্য দান করলাম।’ (সুরা মারইয়াম : ৫২)। আল্লাহ তায়ালার এই নৈকট্যের শক্তিই হজরত মুসা (আ.) কে ফেরাউন ও জাদুকরদের মুখোমুখি হওয়ায় শক্তি যুগিয়েছে। তাই যেসব কাজ আল্লাহ তায়ালার নিকটবর্তী করে, সেগুলো জানতে হবে। আপন করে নিতে হবে। বিশেষ কিছু ইবাদত রয়েছে, যা আল্লাহ তায়ালার নিকটবর্তী করার ক্ষেত্রে অনেক বেশি কার্যকর ও ফলপ্রসূ। যেমনÑ ১. তওবা। তওবা বান্দাকে আল্লাহতায়ালার নিকটবর্তী করে দেয়। আল্লাহর অসন্তুষ্টি থেকে দূরে রাখে। রাসুল (সা.) এমনটিই বলেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা তাঁর কাছে ক্ষমা চাও। এরপর তওবা করো। নিশ্চয়ই আমার রব নিকটবর্তী ও আহ্বানে সাড়াদাতা।’ (সুরা হুদ : ৬১)। যে তওবা করে এবং একমাত্র আল্লাহ তায়ালার জন্যই ইবাদত করে, আল্লাহ তায়ালা তাকে আপন করে নেন। সে ডাকলে তিনি সাড়া দেন।
২. এহসান। এহসান (আল্লাহতায়ালাকে স্বচক্ষে দেখার অনুভূতি নিয়ে ইবাদত করা অথবা অন্তত আল্লাহতায়ালা দেখছেন, ইবাদতের সময় এই অনুভূতি জাগ্রত রাখা) সবচেয়ে উত্তম আমল। এর মাধ্যমেই সবচেয়ে বেশি নিকটবর্তী হওয়া যায় আল্লাহ তায়ালার। এরশাদ হচ্ছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর রহমত এহসানকারীদের নিকটবর্তী।’ (সুরা আরাফ : ৫৬)। ইবনুল কায়্যিম (রহ.) বলেন, ‘যার এহসান যত উঁচু পর্যায়ের হবে, সে তত বেশি আল্লাহ তায়ালার নিকটবর্তী হতে পারবে। এহসানের তারতম্যের কারণেই নামাজের আত্মিকতায় তারতম্য সৃষ্টি হয়। একই ধরনের রুকু-সেজদা আদায় করা সত্ত্বেও দুজনের নামাজের মধ্যে দেখা দেয় বিস্তর ব্যবধান।
৩. আল্লাহর জিকির। জিকির অর্থ স্মরণ। বান্দা আল্লাহ তায়ালাকে যত বেশি স্মরণ করবে, তত বেশি তাঁর আপন হবে। হাদিসে কুদসিতে এসেছে, ‘বান্দা আমার প্রতি যেরূপ ধারণা পোষণ করে, আমি তার সঙ্গে সেরূপ আচরণ করি। সে যখন আমাকে স্মরণ করে, আমি তার সঙ্গেই থাকি।’ (মুসলিম : ২৬৭৫)।
৪. ফরজ ও নফল ইবাদতগুলো আদায় করা। হাদিসে কুদসিতে এসেছে, আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘ফরজ ইবাদতের মাধ্যমেই বান্দা আমার সবচেয়ে আপন হয়। নফল ইবাদতগুলো আদায়ের কারণে এটি উত্তরোত্তর বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে আমি তাকে প্রিয়দের অন্তর্ভুক্ত করে নিই।’ (বোখারি : ৬৫০২)।
ফরজ ইবাদতের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নামাজ আদায় করা, আল্লাহ তায়ালার সামনে সেজাদবনত হওয়া। সেজদা বান্দাকে অনেক নিকটবর্তী করে দেয় আল্লাহ তায়ালার। এরশাদ হচ্ছে, ‘সেজদা করো, নিকটবর্তী হও।’ (সুরা আলাক : ১৯)। সেজদার কথা বলে নামাজের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এর ফলস্বরূপ বলা হয়েছে, সেজদা ও নামাজ বান্দাকে আল্লাহ তায়ালার নিকটবর্তী করে দেবে। রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, ‘বান্দা সেজদাবনত অবস্থায়ই আল্লাহ তায়ালার সবচেয়ে নিকটবর্তী হয়। অতএব, সেজদায় গিয়ে অধিক পরিমাণে দোয়া করো।’ (মুসলিম : ৪৮২)। সেজদা চূড়ান্ত পর্যায়ের বিনীত হওয়ার নিদর্শন। এটি আত্ম-অবদমন ও অহঙ্কার পরিত্যাগের বার্তা দেয়। বান্দা যখন সেজদা করে, সে নিজ প্রবৃত্তির বিরোধিতা করে। ফলে সে নিজ প্রতিপালকের নিকটবর্তী হয়। তাঁর সন্তুষ্টি লাভ করে। যে ব্যক্তি জান্নাতে রাসুল (সা.) এর সঙ্গী হতে চায়, রাসুল (সা.) তাকে পরামর্শ দিতে গিয়ে বলেন, ‘সে যেন অধিক পরিমাণে সেজদা করে নিজেকে এই মর্যাদায় পৌঁছাতে সহযোগিতা করে।’ (মুসলিম : ৪৮৯)। এর মাধ্যমে রাসুল (সা.) অধিক পরিমাণে সেজদা তথা বেশি বেশি নামাজ পড়ার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন।
৫. দোয়া। দোয়া একটি মহান ইবাদত। আল্লাহতায়ালা দোয়াকারীর অতি কাছাকাছি অবস্থান করেন। বান্দার দোয়া কবুল করেন। তার সহযোগিতা করেন। ভালো কাজের তৌফিক দেন। এরশাদ হচ্ছে, ‘আমার বান্দারা যখন আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে, আপনি বলুন, আমি পাশেই আছি। কেউ যখন আহ্বান করে, আমি তার আহ্বানে সাড়া দিই। (সুরা বাকারা : ১৮৬)।
৬. উত্তম চরিত্র। উত্তম চরিত্রের মাধ্যমে আল্লাহতায়ালার নৈকট্য অর্জন করা যায়। জান্নাতে রাসুল (সা.) এর সঙ্গী হওয়া যায়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তি সবচেয়ে প্রিয় ও কেয়ামতে আমার সবচেয়ে কাছাকাছি থাকবে, যে চরিত্রের দিক দিয়ে সবচেয়ে সুন্দর।’ (তিরমিজি : ২০১৮)।
আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে হলে, আল্লাহর বান্দাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। তাদের কাছাকাছি থাকতে হবে। রাসুল (সা.) এর সিরাত থেকে জানা যায়, তিনি মানুষের অনেক প্রিয় ও কাছের ছিলেন। মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতেন। মানুষের জন্য কল্যাণকর বিষয় গ্রহণ করতেন। মানুষের উপকারের চেষ্টা করতেন। তাদের প্রয়োজন পূরণ করতেন। বিপদে খোঁজ নিতেন। তাদের দাওয়াতে অংশগ্রহণ করতেন। বিবাদ মিটিয়ে দিতেন। তাদের দেওয়া কষ্টে ধৈর্য ধারণ করতেন। দুর্ব্যবহার ক্ষমা করতেন। সুখে-দুঃখে মানুষের পাশে থাকা অনেক বড় একটি আমল। রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে সেই ব্যক্তির সংবাদ দেব না, জাহান্নামের আগুন যার ওপর হারাম সাব্যস্ত করা হয়েছে? সে হলো, প্রত্যেক সহজ, সরল, নম্র ও মানুষের নিকটবর্তী ব্যক্তি।’ (তিরমিজি : ২৪৮৮)।
মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার, সাধ্যমতো তাদের প্রয়োজন পূরণ, ধৈর্য ধারণ ও মানুষকে ক্ষমা করার মাধ্যমে যে মানুষের নৈকট্য অর্জন করতে পারে, জাহান্নামের আগুন তাকে স্পর্শ করবে না। ইসলাম মুসলমানদের মিলেমিশে থাকার প্রতি উদ্বুদ্ধ করে। মুসলমানদের পরস্পর সম্পর্ক যেনো সুন্দর হয়, তাদের মাঝে ভালোবাসার বন্ধন যেনো অটুট থাকে, এ ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করে। এটি ইসলামি শরিয়তের অন্যতম সৌন্দর্য। সুসম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে নিকটাত্মীয়রাই সবচেয়ে বেশি হকদার। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, বাস্তবতা এর সম্পূর্ণ উল্টো। বর্তমান সমাজে আত্মীয়-স্বজনের মাঝে পরস্পর ঝগড়া-বিবাদ, বিচ্ছিন্নতা-সম্পর্কহীনতা, শত্রুতা বড় বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে এখন। সম্পর্কগুলো দুর্বল হয়ে গেছে। যোগাযোগ নেই বললেই চলে। পারস্পরিক সাক্ষাৎ হয়ই না প্রায়। ফলে আত্মীয়-স্বজনের মাঝে এখন আর মিল নেই। বিভিন্ন বিপজ্জনক পরিস্থিতিতেও সহমর্মিতা প্রকাশের দেখা পাওয়া যায় না। অভাবী আত্মীয়-স্বজনের কোনো খোঁজ নেওয়া হচ্ছে না। কেউ কারও প্রতি দয়া প্রদর্শন করছে না। কারও কাছে কেউ প্রয়োজনের কথা খুলে বলতে পারছে না। উপহার-উপঢৌকনের আদান-প্রদান বন্ধ হয়ে গেছে। ভুলগুলো বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে। ক্ষমার মানসিকতা তৈরি হচ্ছে না। অথচ আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘আত্মীয়দের অধিকার আদায় করো।’ (সুরা বনি ইসরাইল : ২৬)। হাদিসে এসেছে, ‘গরিবদের সদকা করলে শুধু সদকা করাই হলো। আর সদকাটা আত্মীয়দের করা হলে সদকাও হলো, আত্মীয়তা-সম্পর্কের হকও আদায় করা হলো।’ (সুনানে নাসাঈ : ২৫৮২)।
আত্মীয়তার সম্পর্ক যত মজবুত হবে, সামাজিক বন্ধন তত শক্তিশালী হবে। মা-বাবা সবচেয়ে কাছের আত্মীয়। মা-বাবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা প্রধানতম একটি ইবাদত। এটি আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য অর্জনে অনেক বেশি কার্যকর। মা-বাবা সবচেয়ে বেশি ভালোবাসা প্রাপ্তির হকদার। মা-বাবার খোঁজ নিতে হবে, সেবা করতে হবে। তাদের সার্বিক বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে।
সন্তান যেমন মা-বাবার প্রতি খেয়াল রাখবে, মা-বাবাও সন্তানের প্রতি সর্বোচ্চ মনোযোগী হবেন। তাদেরকে স্নেহ-মমতা দিয়ে আগলে রাখবেন। ভুলগুলো সংশোধন করে দেবেন। সময় দেবেন। দ্বীন শেখাবেন। আখলাক-চরিত্রের প্রতি সবিশেষ লক্ষ্য রাখবেন। তাদের সত্যপথ থেকে বিচ্যুত হওয়ার শঙ্কা থেকে নিজেদেরকে কখনোই মুক্ত মনে করবেন না।
ছোটদের প্রতি খুব বেশি লক্ষ্য করা প্রয়োজন। এটি মুরব্বিদের একটি আবশ্যকীয় কর্তব্য এখন। তাদের হৃদয়ে উত্তম আদর্শের বীজ বপন করতে হবে। তাদের সঙ্গে খেলাধুলা, ক্রীড়া-কৌতুকে অংশগ্রহণ করতে হবে। উপকারী কাজে যেনো তাদের সময়গুলো ব্যয় হয়, সে ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসগুলোতে তারা যে বুঁদ হয়ে থাকে, এ থেকে তাদেরকে বের করে আনতে হবে।
স্বামী-স্ত্রীর মিলেমিশে জীবনযাপন করা চাই। একে অন্যের অধিকারের প্রতি যতœবান হতে হবে। ভালোবাসার বন্ধন সুদৃঢ় রাখার ক্ষেত্রে উভয়েই চেষ্টা করতে হবে। রাগ-ঘৃণা দূরে সরিয়ে রাখতে হবে। রাগের বশবর্তী হয়ে কেউ কাউকে ত্যাগ করা যাবে না। স্বামী-স্ত্রী যখন আল্লাহর নৈকট্যশীল হয়, শরিয়তের পাবন্দ হয়, আল্লাহ তায়ালা তাদের মাঝে ভালোবাসা বাড়িয়ে দেন। তারা যখন আল্লাহ তায়ালার থেকে দূরে সরে যায়, তাদের সম্পর্কের মাঝে এর বিরাট প্রভাব পড়ে। তারা নিজেরাও একে অপর থেকে দূরে সরে যেতে থাকে। এক বুজর্গ বলেন, ‘আমি যখন আল্লাহর অবাধ্যতা করি, গৃহপালিত পশু ও স্ত্রীর আচরণের মাঝে এর প্রভাব দেখি।’
আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নতির সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছে গেছে। পারস্পরিক যোগাযোগ সহজতর হয়েছে। দূরের ব্যক্তিকে কাছে নিয়ে এসেছে। অনেক কঠিন কাজ খুব সহজেই সমাধা হচ্ছে। সময় ও পরিশ্রমের সাশ্রয় হচ্ছে। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, এই আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থাই পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন ছিন্নের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একই পরিবারের লোকেরা একই বাড়িতে অবস্থান সত্ত্বেও একে অপরের থেকে যেন অনেক দূরে অবস্থান করে। প্রত্যেকেই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। মোবাইল ফোন নিয়ে পড়ে আছে। টিভি দেখছে। গেমস খেলছে। চ্যাটিং করছে। এগুলোতেই সময় চলে যাচ্ছে। এমনকি রাতটাও বিনিদ্র কেটে যাচ্ছে। আমাদের এদিকে খুব লক্ষ্য রাখতে হবে। এর প্রতিকার করতে হবে। সংশোধন করে নিতে হবে নিজেদের।
সব প্রাপ্তি নেয়ামত নয়। প্রকৃত নেয়ামত সেটি, যা আল্লাহ তায়ালার নিকটবর্তী করে দেয়। হজরত আবু হাজেম (রহ.) বলেন, ‘যে নেয়ামত আল্লাহর নিকটবর্তী করে না, তা মসিবত।’ আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমাদের সম্পদ ও সন্তানাদি তোমাদের আমার নৈকট্যশীল করবে না। (সে-ই আমার নিকটবর্তী হবে) যে নেক আমল করবে। তারই জন্য দ্বিগুণ প্রতিদান বরাদ্দ থাকবে। জান্নাতের কক্ষগুলোতে সে নিরাপদে অবস্থান করবে।’ (সুরা সাবা : ৩৭)।
নেক আমল আল্লাহর নিকটবর্তী করে। জান্নাতে পৌঁছে দেয়। আল্লাহর অবাধ্যতা বান্দাকে জাহান্নামের নিকটবর্তী করে। যে আমল জান্নাতের নিকটবর্তী করে, জাহান্নাম থেকে দূরবর্তী করে, সেটি শিখতে হবে, তার ওপর আমল করতে হবে। সাহাবায়ে কেরাম (রা.) এটি শেখার ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন। হাদিসে এসেছে, এক সাহাবি বললেন, ‘আমাকে এমন আমলের সংবাদ দিন, যা আমাকে জান্নাতের নিকটবর্তী করবে, জাহান্নাম থেকে দূরে সরিয়ে নেবে।’ রাসুল (সা.) বললেন, ‘তুমি আল্লহর ইবাদত করবে। তার সঙ্গে কাউকে শরিক করবে না। নামাজ কায়েম করবে। জাকাত আদায় করবে। আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখবে।’ ( মুসলিম : ১৩)।
নিজেদের জীবনকে কাজে লাগাতে হবে। মৃত্যুর সময় যেন অনর্থক ব্যয় করা সময়ের জন্য আফসোস করতে না হয়। আমাদেরকে খেয়াল রাখতে হবে, দুনিয়া ও আখেরাতের সৌভাগ্য ও মুক্তি আল্লাহতায়ালার নৈকট্যশীল হওয়ার মাঝেই। আল্লাহ তায়ালার থেকে দূরে সরে যাওয়াটা দুর্ভাগ্যের আলামত। আমাদের আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়ার আমলগুলো যেমন গুরুত্বের সঙ্গে করতে হবে, তেমনই যেসব কাজ আল্লাহ তায়ালার থেকে দূরে সরিয়ে দেয়, তা থেকেও বিরত থাকতে হবে। হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) একবার মিম্বরে বসে পরপর তিনবার ‘আমিন’ বললেন। সাহাবায়ে কেরাম (রা.) এর কারণ জিজ্ঞেস করলে রাসুল (সা.) বললেন, আমার কাছে জিবরাইল (আ.) এসেছিলেন। তিনি বললেন, ‘হে মুহাম্মদ! যে মাতা-পিতার মাঝে কাউকে জীবিত পেল, এরপর সে মারা গেল ও জাহান্নামি হলো। আল্লাহতায়ালা তাকে নিজ রহমত থেকে দূরে সরিয়ে দিন। আপনি বলুন আমিন।’ আমি আমিন বললাম। এরপর তিনি বললেন, ‘যে রমজান মাস পেল, এরপর মারা গেল; কিন্তু ক্ষমাপ্রাপ্ত হলো না; আল্লাহ তায়ালা তাকে নিজ রহমত থেকে দূরে সরিয়ে দিন। আপনি বলুন আমিন।’ আমি আমিন বললাম। তিনি আরও বলেন, ‘যার কাছে আপনার আলোচনা হলো; কিন্তু আপনার প্রতি দরুদ পড়ল না। এরপর মারা গেল ও জাহান্নামি হলো; আল্লাহতায়ালা তাকে নিজ রহমত থেকে দূরে সরিয়ে দিন। আপনি বলুন আমিন।’ আমি আমিন বললাম। (তাবারানি : ২০২২)।
২৭ জুমাদাল উলা ১৪৪৩ হিজরি মোতাবেক ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ খ্রিস্টাব্দে মক্কার মসজিদে হারামে প্রদত্ত জুমার খুতবার সংক্ষিপ্ত ভাষান্তরÑ মুইনুল ইসলাম