সব বিতর্ক ছাপিয়ে জোরেশোরে চলছে বইমেলার প্রস্তুতি

প্রকাশ : ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলা একাডেমির আয়োজনে প্রতিবছরের মতো এবারও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে অমর একুশে বইমেলা। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি এ মেলা উদ্বোধন করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। মেলার এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান: নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ’। এরইমধ্যে শুরু হয়েছে মেলার স্টল ও প্যাভিলিয়ন তৈরির কাজ।

সরেজমিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এবং বাংলা একাডেমি গিয়ে দেখা যায়, হাতুড়ি-পেরেকের ছন্দে নিরলস কাজ করছেন শ্রমিকরা। স্টল এবং প্যাভিলিয়ন নির্মাণের জন্য শ্রমিকদের কেউ মাটি খোঁড়াখুঁড়ি করছেন, কেউ স্টলের মাপ হিসাব করছেন, আবার কেউবা বাঁশ-কাঠ এবং ইট দিয়ে অবকাঠামো নির্মাণের কাজ করছেন। আবার অনেকে বিদ্যুৎ সংযোগ, বাতি লাগানো, সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনসহ নানা আনুষঙ্গিক কাজ করছেন।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্টল নির্মাণের জন্য পরিমাপমতো বাঁশ কাটছিলেন নাজমুল হাসান নামে একজন শ্রমিক। তিনি বলেন, স্টল বরাদ্দের পর থেকেই আমাদের কাজ শুরু হয়েছে। তবে তার আগে থেকেই আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি। প্রতিবছর আমরা মেলায় স্টল নির্মাণের কাজ করি। এ বছর আমরা ৪টি স্টল এবং একটি প্যাভিলিয়ন নির্মাণের কাজ পেয়েছি। স্টল নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ। আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে বাকি কাজ শেষ হবে। তবে প্যাভিলিয়ন তৈরিতে কিছুটা সময় বেশি লাগছে।

বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে স্টল নির্মাণ করা আতাউর রহমান নামে একজন শ্রমিক বলেন, স্টল নির্মাণে আমরা ৮ জন শ্রমিক একসঙ্গে কাজ করছি। আমাদের আরো ৩টি গ্রুপ রয়েছে। তারা অন্য প্রকাশনীর ভিন্ন ভিন্ন ৫টি স্টল তৈরি করছে। প্রাণের বইমেলাকে প্রাণবন্ত করতে তার চেষ্টার কমতি নেই বলে জানান তিনি।

এর আগে, স্টল এবং প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ নিয়ে কিছুটা ঝামেলা সৃষ্টি হয়েছিল। বড় এবং স্বনামধন্য অনেক প্রকাশনীর বরাদ্দকৃত স্টল বা প্যাভিলিয়নের পরিমাণ নিয়ে ছিল ক্ষোভ ও অসন্তোষ। আবার বিগত সরকারের দোসর হিসেবে পরিচয় পাওয়ায় কোনো কোনো প্রকাশনীর স্টল না পাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। তবে বইমেলা পরিচালনা কমিটি জানিয়েছে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সৃষ্ট সব সমস্যা এবং বিতর্ককে ছাপিয়ে প্রাণের এই মেলা আয়োজনের প্রস্তুতি ধাপে ধাপে এগিয়ে চলছে।

এবারের অমর একুশে বইমেলার নীতিমালায় বলা হয়, বাংলা একাডেমি প্রচলিত কমিশনে একাডেমির বই বিক্রয় করবে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশ কমিশনে বই বিক্রয় করবে। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনবিরোধী, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানবিরোধী, যে কোনো জাতিসত্তাবিরোধী, অশ্লীল, রুচিগর্হিত, শিষ্টাচারবিরোধী, সাম্প্রদায়িক, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে এমন বা জননিরাপত্তার জন্য বা অন্য কোনো কারণে বইমেলার পক্ষে ক্ষতিকর কোনো বই বা পত্রিকা বা দ্রব্য অমর একুশে বইমেলায় বিক্রয়, প্রচার ও প্রদর্শনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে এবারের বইমেলার নীতিমালায় বলা হয়েছে।

সেখানে আরো বলা হয়, বইমেলার প্রতিটি প্রবেশদ্বারে নিরাপত্তার স্বার্থে আর্চওয়ের ব্যবস্থা থাকবে। মেলা প্রাঙ্গণে একাডেমির নিজস্ব ক্যান্টিন ও একাডেমি কর্তৃক বরাদ্দকৃত খাবারের স্টল থাকবে। কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত নীতিমালা অনুযায়ী মানসম্মত খাবারের স্টল বরাদ্দ দেয়া হবে। বইমেলার প্রাথমিক চিকিৎসাকেন্দ্রে ডাক্তার ও অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা থাকবে।

বইমেলার নিরাপত্তার বিষয়ে বাংলা একাডেমি জানায়, সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে কোনো সময় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। বইমেলা চলাকালীন শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণের জন্য একাডেমি ও প্রকাশক প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি ‘শৃঙ্খলা কমিটি’ গঠিত হবে। কমিটি পর্যায়ক্রমে সব বিষয় তদারকি করবে। মেলা প্রাঙ্গণে সার্বক্ষণিক দমকল বাহিনী প্রস্তুত থাকবে। মেলা সিসি ক্যামেরার আওতাভুক্ত থাকবে।

এছাড়াও বইমেলায় নারী ও পুরুষের নামাজের জন্য পৃথক ব্যবস্থা থাকবে। তথ্যকেন্দ্র সংলগ্ন স্থানে মা ও শিশু কর্নার থাকবে। বইমেলা প্রাঙ্গণে বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা থাকবে। নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের জন্য ‘নতুন বই উন্মোচন মঞ্চ’ নামে একটি নির্দিষ্ট স্থানের ব্যবস্থা থাকবে।

বইমেলায় একটি ‘লেখক বলছি মঞ্চ’ থাকবে। সেখানে প্রতিদিন নতুন বই সম্পর্কে লেখক-পাঠক-দর্শকের মধ্যে আলোচনা, মতবিনিময়, প্রশ্নোত্তর পর্ব চলবে। আগের বছরে প্রকাশিত ‘বিষয় ও গুণগত মানসম্মত’ সর্বাধিক সংখ্যক বই প্রকাশের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার’ এবং ‘শৈল্পিক বিচার’-এ সেরা গ্রন্থের জন্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে ‘মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেয়া হবে।

এছাড়াও শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে ‘গুণগতমান বিচার’-এ সর্বাধিক সংখ্যক বইয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে ‘রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার’ এবং বইমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে স্টলের ‘নান্দনিক অঙ্গসজ্জা’য় সর্বশ্রেষ্ঠ হিসেবে বিবেচিত প্রতিষ্ঠানকে তিন ক্যাটাগরিতে ‘শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ প্রদান করা হবে।

মেলার সময়সূচি সম্পর্কে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ জানায়, বইমেলা সাপ্তাহিক ছুটির দিন ও একুশে ফেব্রুয়ারি ছাড়া প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে। ছুটির দিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। শুক্রবার দুপুর ১টা থেকে বিকাল ৩টা ও শনিবার দুপুর ১টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত বিরতি থাকবে। শুক্র ও শনিবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত শিশুপ্রহর থাকবে। একুশে ফেব্রুয়ারি প্রথম প্রহর অর্থাৎ সকাল ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বইমেলা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। দুপুর ১টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত বিরতি থাকবে।