নারায়ণগঞ্জ জেলায় কমবেশি ১ লাখ গ্রাহক এলপি গ্যাস ব্যবহার করেন। দেশের ৩৫টি কোম্পানির মধ্যে এই জেলায় ২৭টি কোম্পানি ব্যবসা করে। তবে অধিকাংশ এলপি গ্যাস বিক্রি হয় বড় মাঝারি মিলিয়ে ১২টি কোম্পানির। পুরোনো ও অভিজ্ঞ গ্রাহকরা বলছেন, নারায়ণগঞ্জ জেলায় কমপক্ষে ২০ হাজার সিলিন্ডারের মেয়াদ নেই। এই সিলিন্ডারগুলোই বার বার রিফিল হয়ে গ্রাহকের বাসায় ঢুকছে। যার দরুণ আজকাল গ্যাস বিস্ফোরণের ঘটনা বাড়ছে। সেইসাথে বাড়ছে প্রাণহানির ঘটনাও। ক্ষতি হচ্ছে জানমালের। আগামী দিনেও ভয়ংকর দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের তথ্যমতে, গত চার বছরে গ্যাস বিস্ফোরণ জাতীয় দুর্ঘটনায় অন্তত ১৩০ জন মারা গেছে। এলপি গ্যাসের গ্রাহকরা পুরোনো ও ঝুঁকিপূর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার মার্কেট থেকে প্রত্যাহার করে নেয়ার দাবি তুলেছেন।
তবে গ্রাহক ও দুর্ঘটনায় ভুক্তভোগীদের এই দাবির সাথে একমত হচ্ছেন না এলপি গ্যাসের ডিলাররা। তারা বলছেন, একটি সিলিন্ডারের মেয়াদ ২০ বছর। চেক করে সমস্যা থাকলে তা সারিয়ে একটি সিলিন্ডার অনায়াসে ২০ বছর ব্যবহার করা সম্ভব। প্রথম দিকের তিনটি কোম্পানি ছাড়া বাদ বাকি কোম্পানি মার্কেটে এসেছে ২০১৫ সালের পর। সে হিসেবেও ২০ বছর পার হয়নি। তবে শুরুর দিকের (২০০৩ সাল) তিনটি কোম্পানির সিলিন্ডারের মেয়াদ পার হয়ে গেছে।
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জে নিয়ম না মেনে আনাচেকানাচে বিক্রি হচ্ছে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই বিভিন্ন স্থানে রাখা হচ্ছে সিলিন্ডার বোতল। মুদি দোকান, ওষুধের দোকানসহ নানা দোকানে মজুদ রাখা হচ্ছে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার। এতে যেমন ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে তেমনি বিভিন্ন সময়ে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার কারণে স্মার্ট এ রান্না পদ্ধতি নিয়ে ভীতি থেকে যাচ্ছে অনেকের মনে। অকস্মাৎ ঘটেও যাচ্ছে প্রাণঘাতি গ্যাস বিস্ফোরণ ঘটনা। মারা যাচ্ছে স্বজন-প্রিয়জন। বোদ্ধামহল বলছেন, এসব এখনি না ঠেকালে ভবিষ্যতে আরো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
এদিকে, অনেক গ্রাহক গ্যাসের সিলিন্ডার নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন। তাদের বক্তব্য, কোনটি ঝুঁকিপূর্ণ সিলিন্ডার সেটি বোঝার উপায় গ্রাহকের নেই। ১০ বছরের বেশি সময় ধরে ব্যবহৃত সিলিন্ডার ঘঁষামাজা করে রং দিয়ে নতুন বলে চালানো হচ্ছে। যেসব দোকান থেকে তারা গ্যাস কেনেন তারা এ বিষয়ে কোনো কথা শুনতে চান না বলে কয়েকজন ক্রেতা জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ এলপি গ্যাস ব্যবসায়ী সমিতির ভাইস প্রেসিডেন্ট আব্দুর রহমানের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, নারায়ণগঞ্জে ৬০ হাজার গ্রাহক নিয়মিত ব্যবহার করেন এলপিজি। ২৫ হাজার গ্রাহক তিন-চার মাস পরপর কেনেন। আর ১৫ হাজার গ্রাহক কখনো কখনো গ্যাস কেনেন বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। জেলায় এলপি গ্যাসের ডিলার ৩৫ জন হলেও খুচরা বিক্রেতার সংখ্যা ৫শ’র বেশি। একজন গ্রাহক মাসে দুইটা এলপি গ্যাস ব্যবহার করে।
শহরের সিরাজউদ্দোলাহ সড়কের বসুন্ধরা ও টোটাল এলপি গ্যাস ডিলার মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, একটি গ্যাস সিলিন্ডার ২০ বছর ধরে ভালোভাবে ব্যবহার করা যায়। এরপর নানা কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তবে, গ্রাহক চাইলে কোম্পানি শর্ত সাপেক্ষে পরিবর্তন করে দিচ্ছে। এ অবস্থা পুরোনো দুয়েকটি কোম্পানির ক্ষেত্রে।
তাছাড়া, অধিকাংশ কোম্পানি তো নতুন। তাদের সিলিন্ডার নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। সব মিলিয়ে খুচরা ব্যবসায়ীরা ভালো নেই। অসম প্রতিযোগিতার কারণে আজ এই অবস্থা। মহল্লা পর্যায়ের খুচরা বিক্রেতারা টেকনিক্যাল বিষয়গুলো জানে না বলেই সিলিন্ডারে সমস্যা হতে পারে।
গ্রাহকরা বলছেন, মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডার পরিবর্তনের প্রক্রিয়াটি সহজ করতে হবে। পুরোনো সিলিন্ডার জমা দিয়ে দোকান থেকে যাতে সরাসরি নতুন সিলিন্ডার পাওয়া যায় সেই ব্যবস্থা করলে অধিকাংশ গ্রাহক ঝুঁকিমুক্ত হওয়ার চেষ্টা করবেন। এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ আল আরেফীন জানান, এলপি গ্যাস ডিলারকে বিস্ফোরক অধিদপ্তরের লাইসেন্স নিতে হয়। তাছাড়া চওড়া ও খোলামেলা জায়গায় সিলিন্ডার রাখতে হয়। সেইসঙ্গে আগুন নেভানোর প্রাথমিক ব্যবস্থা থাকতে হবে। ছয় বছর পর পর সিলিন্ডার বোতল পরীক্ষা করতে হবে। তবে খরচের ভয় ও ঝামেলা মনে করে অনেক ব্যবসায়ী তা করেন না। এসব বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে আমরা কাজ করছি।