সিপিডির সংলাপ

বড় ধরনের বিপর্যয় থেকে অর্থনীতি রক্ষা পেয়েছে

প্রকাশ : ১১ আগস্ট ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর একটি বড় ধরনের অর্থনৈতিক বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। তবে সংস্থাটি বলছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে দেশের দরিদ্র ও নিম্নআয় শ্রেণি এখনও কঠিন ভোগান্তির মধ্যে রয়েছে। গতকাল রোববার রাজধানীর লেকশোর হোটেলে ‘অন্তর্বর্তী সরকারের ৩৬৫ দিন’ শীর্ষক এক সংলাপে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও পুনরুদ্ধার ছিল সময়ের প্রধান চ্যালেঞ্জগুলোর একটি। এই ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে সফলতা আসছে এবং ঝুঁকি কমছে, এটিই বড় অর্জন।’

সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘সরকার শ্বেতপত্র ও অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নিধারণে টাস্কফোর্স গঠন করলেও তাদের সুপারিশের বাস্তবায়ন দেখছি না। শ্রম খাত, গণমাধ্যম, নারী ও স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে অগ্রগতি দেখছি না। আর শিক্ষায় তো কমিশন হয়নি।’

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার গত ১০ সেপ্টেম্বর এ টাস্কফোর্স গঠন করে, যা প্রতিবেদন দেয় ৩০ জানুয়ারি। সুপারিশে বলা হয়েছে- অর্থনীতির মধ্যে স্থিরতা আনা, ২০২৫-২৬ সালের বাজেট বাস্তবায়নের লক্ষ্যে স্পষ্ট ধারণা তৈরি করা; ২০২৫ থেকে ২৭ সালকে বিবেচনায় নিয়ে একটি মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা এবং এর সঙ্গে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার যথাযথ মূল্যায়ন করা; অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সংস্কারপ্রক্রিয়া শুরু করার জন্য ভঙ্গুর ও ঝুঁকিপূর্ণ খাতকে চিহ্নিত করা; স্বল্পোন্নত দেশে থেকে অধিকতর উন্নত দেশে রূপান্তরের জন্য শক্তিশালী নীতিমালা গ্রহণ; এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য কার্যক্রম হাতে নেওয়া এবং উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে সংলাপের জন্য একটি ফোরাম তৈরি করা। শ্বেতপত্রের সুপারিশের কিছুটা প্রভাব ব্যাংক খাত, বৈদেশিক খাত ও মূল্যস্ফীতিতে দেখতে পাওয়ার কথা জানিয়েছে সিপিডি। তবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি, বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবাহ, রাজস্ব আহরণ, এডিপি বাস্তবায়নে নেতিবাচক ধারা থাকার তথ্য তুলে ধরেন ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, ‘উন্নতি দেখতে পেয়েছি- মূল্যস্ফীতিতে; যেটা দেখেছি ১০ বা তার বেশি, এখন তা কমছে। কমার হার কম, তবে কমছে।’ অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নয়নে একবছর সময় কম হলেও এর মধ্যে জীবন ও জীবিকায় ‘স্বস্তি’ না আসায় সমালোচনা করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।

তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি এখনও উচ্চ রয়েছে, বিনিয়োগ আসছে না। কর্মস্থান হচ্ছে না। এবং সর্বোপরি রাজস্ব আহরণ বাড়ছে না। যেহেতু উচ্চ মূল্যস্ফীতি রয়েছে, তাই তাদের (স্বল্প আয়ের মানুষের) জন্য যেসব কর্মসূচি রয়েছে- তা চলমান রাখতে হবে।’ এ অবস্থায় খোলা ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য সরবরাহ চালু রাখার পরামর্শ দেন তিনি। জুন মাসে কিছুটা কমার পর জুলাই মাসে খাদ্য এবং খাদ্যবহির্ভূত দুই খাতেই মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। অর্থবছরের প্রথম মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ, যা জুন মাসে ছিল ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘নাগরিকরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পুনঃপ্রতিষ্ঠা, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সংস্কার এবং অর্থনীতি স্থিতিশীল করার ব্যাপারে উচ্চ প্রত্যাশা করেছিলেন। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সময় অর্থনীতি ছিল ভঙ্গুর, প্রবৃদ্ধি মন্থর এবং নানা সংকটে জর্জরিত।’ সিপিডি মনে করে, জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হওয়ায় সরকার নতুন কোনও বড় সংস্কার প্যাকেজ হাতে নেবে, এমন সম্ভাবনা কম। তাই ইতোমধ্যে অর্জিত সাফল্যগুলো ধরে রাখা এবং অর্থনীতির অন্তর্নিহিত দুর্বলতা মোকাবিলায় গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, সংস্কার কার্যক্রমে ধীরগতি লক্ষ্য করা গেছে। সংস্থাটি ৩৮টি সূচকের ওপর ‘সবুজ, হলুদ ও লাল’ তিন রঙের সূচক ব্যবহার করে একটি স্কোরকার্ড তৈরি করেছে, যেখানে মাত্র ৯টি সূচক সবুজ অবস্থায় রয়েছে।