৮১তম জন্মদিনে সারা দেশে দোয়া মাহফিল
বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা
প্রকাশ : ১৬ আগস্ট ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
বিএনপির চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক সফল প্রধানমন্ত্রী, মাদার অফ ডেমোক্রেসি, আপসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ৮১তম জন্মদিন উপলক্ষে তাঁর সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনায় গতকাল শুক্রবার রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসন কার্যালয়, নয়াপল্টন দলীয় কার্যালয়সহ সারা দেশে মসজিদ মাদ্রাসায় মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেন দলের নেতাকর্মীরা। এছাড়া দেশের বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়। গুলশান কার্যালয়ের দোয়া মাহফিলে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
খালেদা জিয়ার জন্মদিনে গুলশান কার্যালয়ে দোয়া মাহফিল : বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিন উপলক্ষে রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার আসরের নামাজের পর এ দোয়া মাহফিল করা হয়। এতে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। অনুষ্ঠানে জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ বিএনপি পরিবারের জন্য বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করেন ওলামা দলের আহ্বায়ক কাজী মো. সেলিম রেজা। বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুর পরিচালনায় অন্যদের মধ্যে- স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, বেগম সেলিমা রহমান, সালাহউদ্দিন আহমদ, অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, কেন্দ্রীয় নেতা মীর নাছির, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, আহমেদ আযম খান, আমানউল্লাহ আমান, মিজানুর রহমান মিনু, ইসমাঈল জবিহউল্লাহ, অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, আ ন হ আখতার হোসেন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ বিভিন্ন অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে চরম নির্যাতন করা হয়েছে অভিযোগ এর সঙ্গে জড়িতদের বিচার দাবি করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। গতকাল শুক্রবার সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় এক মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে তিনি এই দাবি কথা বলেন। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ৮১তম জন্মদিন উপলক্ষে বিএনপি এই মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে। ঢাকায় কেন্দ্রীয়ভাবে এই মিলাদ অনুষ্ঠানের পাশাপাশি রাজধানীতে বিভিন্ন মসজিদে ও এতিমখানা-মাদ্রাসায় বিএনপি চেয়ারপারসনের জন্মদিন উপলক্ষ্যে এই মিলাদ ও দোয়া মাহফিল হচ্ছে। ঢাকা ছাড়াও সারা দেশে মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও দলের চেয়ারপারসনের আরোগ্য কামনায় এই মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
মির্জা আব্বাস বলেন, কারাগারে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে চরম নির্যাতন করা হয়েছে। তাকে পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগারের যেই কক্ষে রাখা হয়েছে সেই কক্ষে ইঁদুর দৌড়দৌডি করত, পোকামাকড় দৌড়াদৌড়ি করত। কয়েকজন ডেপুটি জেলার, জেলার অন্যায়ভাবে তাকে ছাদের ওপরে একটি কক্ষে রেখেছিল। আজকে আমি এই অনুষ্ঠান থেকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জেলজীবনে তার ওপরে যে অত্যাচার হয়েছে, যে নির্যাতন হয়েছে, কারা কারা এর সঙ্গে দায়ী তাদের সকলের একটা বিচার হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি এবং এর বিচার হওয়া উচিত। বিএনপির দুর্দিনে দলের নেতৃত্ব দিয়ে বেগম খালেদা জিয়া যে ভূমিকা রেখেছেন তা তুলে ধরে মির্জা আব্বাস বলেন, আমরা যারা কয়ে কজন তাদের সঙ্গে কাজ করেছি তারা দেখেছি, নানা চাপের মধ্যে দেশনেত্রীকে আমরা দেখেছি দৃঢ় মনোবল। গণতন্ত্রের প্রশ্নের তার আপসহীন নেতৃত্ব এবং নেতাকর্মীদের প্রতি তার যে ভালোবাসা ও স্নেহ তা তুলনাহীন।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, বাকশালের পরিবর্তে গণতন্ত্র এনেছিলেন জিয়াউর রহমান, সামরিক স্বৈরশাসনের গোরস্তানে গণতন্ত্র এনেছিলেন খালেদা জিয়া, আর ফ্যাসিবাদের জায়গায় তারেক রহমান গণতন্ত্রের সূচনা করবেন। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ৮১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া ও মিলাদণ্ডমাহফিলে এ কথা বলেন নজরুল ইসলাম খান।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, যারা ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিল, তাদের ক্ষমতায় আসতে আবার বহু বছর লেগেছে। মুসলিম লীগ আসতে পারেনি, আওয়ামী লীগের লেগেছিল ২১ বছর। আর খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি মাত্র ৯ বছরে আবার ক্ষমতায় এসেছিল। এই অর্জনের মূল কান্ডারি দেশনেত্রী খালেদা জিয়া। সামরিক স্বৈরশাসনের পরিবর্তে বহুদলীয় গণতন্ত্রের ইতিহাস তার হাত ধরেই রচিত হয়েছে। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ঘুরে দাঁড়িয়েছিল।
খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক ভূমিকা তুলে ধরে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন বলেন, ‘তিনি কেবল বিএনপির চেয়ারপারসন নন, গণতন্ত্রের জন্য লড়ে যাচ্ছেন। খালেদা জিয়া জাতির অভিভাবক হয়েছেন। তিনি নিজে কখনও জন্মদিন পালন করতেন না, আমরা আয়োজন করতাম।’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সঞ্চালনায় নয়া পল্টনের মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিএনপি নেতা ফজলুল হক মিলন, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মীর সরাফত আলী সপু, সাইফুল আলম নিরব, আসাদুল করীম শাহিন, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, মহানরগর দক্ষিণ বিএনপির রফিকুল আলম মজনু, যুবদলের নুরুল ইসলাম নয়নসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতারা ছিলেন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়া হলেন দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক। তার দেখানো পথ ধরেই দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নেতৃত্ব দিয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতন ঘটাতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করেন। স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানির সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক রাজিক আহসানের পরিচালনায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল। এ সময় ইয়াসিন আলী, ডা. জাহিদুল কবিরসহ স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
খালেদা জিয়ার জন্মদিনে ছাত্রদল নেতার সৌজন্যে টিএসসিতে বেঞ্চ স্থাপন : আপসহীন দেশনেত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ৮১তম জন্মবার্ষিকীকে স্মরণীয় করে রাখতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি প্রাঙ্গণে স্থাপন করা হলো তিনটি বেঞ্চ। এ উদ্যোগের পেছনে ছিলেন ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের ১নং জয়েন্ট সেক্রেটারি মমিনুল ইসলাম জিসান। প্রাণবন্ত আড্ডা ও মতবিনিময়ের কেন্দ্র হিসেবে খ্যাত টিএসসি শিক্ষার্থীদের মিলনকেন্দ্র। প্রতিদিন অসংখ্য তরুণ-তরুণী এখানে মেতে ওঠেন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আলোচনায়। শিক্ষার্থীদের এই অবসর মুহূর্তগুলোকে আরও স্বাচ্ছন্দ্যময় করতে এবং বন্ধুত্ব ও সহমর্মিতার আবহকে আরও দৃঢ় করতে এই বেঞ্চ স্থাপন করা হয়।
উদ্যোগ প্রসঙ্গে মমিনুল ইসলাম জিসান বলেন, টিএসসি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণকেন্দ্র। এখানে আসা শিক্ষার্থীরা যেন স্বস্তিতে সময় কাটাতে পারে এই ভাবনা থেকেই এই ছোট্ট প্রয়াস। আমরা চাই, এই বেঞ্চ হোক নানান মত ও পথের মিলনের প্রতীক, মুক্তচিন্তার আশ্রয়। এই উপলক্ষে আমরা আমাদের আপসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করি।
