মেয়ের জন্য ওষুধ আনতে গিয়ে নিহত ফিলিস্তিনি বাস্কেটবল তারকা

প্রকাশ : ২২ আগস্ট ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ক্রীড়া ডেস্ক

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় মানবতাবিরোধী এমন কোনো কাজ নেই, যা করছে না ইসরায়েল। বিমান হামলা, ড্রোন হামলাসহ নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করছে দখলদার বাহিনী। তাতেও যেন খায়েস মিটছে না তাদের। চারদিকের সীমানা বন্ধ করে ত্রাণবাহী গাড়ি ঢুকতে দিচ্ছে না। ক্ষুধার জ্বালায় অনাহারে মারা যাচ্ছে ফিলিস্তিনি শিশু থেকে বৃদ্ধরা। সামান্য কার্যক্রম চালু রাখলেও ত্রাণের জন্য লাইনে দাঁড়ানো অসহায় মানুষদের গুলি করে হত্যা করছে ইসরায়েলিরা। গাজায় ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে ইসরায়েলি সেনার গুলিতে নিহত হয়েছেন ফিলিস্তিন জাতীয় দলের সাবেক তারকা বাস্কেটবল খেলোয়াড় মোহাম্মেদ শালান। গতকাল বৃহস্পতিবার এই তথ্য জানিয়েছে মিডল ইস্ট আই। সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, গাজার খান ইউনিসের কাছে একটি ত্রাণ বিতরণকেন্দ্র থেকে অসুস্থ মেয়ে মরিয়ম ও তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের জন্য খাবার ও ওষুধ আনতে যেয়ে প্রাণ হারান শালান (৪০)। স্থানীয় গণমাধ্যমের তথ্য বলছে- মরিয়ম রক্তে বিষক্রিয়ায় ভুগছিলেন। তার কিডনি সমস্যা আছে। মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত শালান বারবার মেয়ের সুচিকিৎসার জন্য সহায়তা চেয়ে গেছেন। ফিলিস্তিনের ক্রীড়াঙ্গনে পরিচিত মুখ শালান। তাকে ‘আল-জিলজাল’ নামে ডাকা হতো। আরবিতে ওই শব্দের অর্থ ‘ভূমিকম্প’। ফিলিস্তিন জাতীয় দলের পাশাপাশি তিনি খাদামাত আল-বুরেইজ, খাদামাত আল-মাগাজি ও খাদামাত খান ইউনিসসহ বেশ কয়েকটি স্থানীয় দলের পক্ষে খেলেছেন।

২ বছরে ৬৭০ ফিলিস্তিনি ক্রীড়াবিদ নিহত

গত কয়েকদিনের মধ্যেই ইসরায়েলি হামলায় ফিলিস্তিনি ক্রীড়া সম্প্রদায়ের তিন সদস্য নিহত হয়েছেন। এর আগে রাফাহ ইউথ ক্লাবের কর্মকর্তা সালেম আল-শায়ের (২৬) ও আল-সালাহ স্পোর্টস ক্লাবের সাবেক তারকা আহমেদ আল-জাওরানি (৪০)। ফিলিস্তিনের ক্রীড়া কর্মকর্তারা গণমাধ্যমকে জানান, গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যামূলক আগ্রাসন শুরুর পর থেকে অন্তত ৬৭০ ফিলিস্তিনি ক্রীড়াবিদ নিহত হয়েছেন। চলতি মাসের শুরুতে ‘ফিলিস্তিনের পেলে’ হিসেবে পরিচিত ফুটবল তারকা সুলেইমান আল-ওবেইদ ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে নিহত হন। তিনি ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ উদ্যোগে স্থাপিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণকেন্দ্র থেকে খাবার সংগ্রহ করতে যেয়ে নিহত হন। পরবর্তীতে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দল লিভারপুলের তারকা ফরোয়ার্ড মোহাম্মদ সালাহ ওবেইদকে নিয়ে ইউরোপীয় ফুটবল সংস্থা উয়েফার সমাজমাধ্যমের পোস্টের সমালোচনা করেন। ওই পোস্টে ওবেইদের মৃত্যুর কথা বলা হলেও কারণ উল্লেখ করা হয়নি। উয়েফার পোস্টে লেখা ছিল- বিদায় সুলেইমান আল-ওবেইদ, ‘ফিলিস্তিনের পেলে’। তিনি এমন একজন প্রতিভাবান খেলোয়াড়, যিনি ঘোর দুঃসময়েও অসংখ্য শিশুকে আশা জুগিয়েছেন।’ মিসরীয় ফুটবলার সালাহ’র দাবি, সুলেইমানকে স্মরণ করলেও তার মৃত্যু কোথায় কীভাবে হয়েছে, তা এড়িয়ে গেছে উয়েফা। সালাহ উয়েফার সেই পোস্ট শেয়ার করে সংস্থাটির প্রতি প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন। লিখেছেন, ‘আপনারা কি বলতে পারেন তিনি কীভাবে, কোথায় এবং কেন মারা গেছেন?’ বর্তমান সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় আরবিভাষী ফুটবলার সালাহ এরআগেও গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের পক্ষে কথা বলেছেন এবং ‘নিরীহ মানুষ হত্যা বন্ধ করতে বিশ্বনেতাদের একত্রিত হওয়ার’ আহ্বান জানিয়েছিলেন।

জিএইচএফের বিতর্কিত কার্যক্রম

মে মাসের শেষের দিক থেকে অন্য সব ধরনের ত্রাণ কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়ে নেতানিয়াহুর সরকার গাজায় জিএইচএফের মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ প্রক্রিয়া চালু করে। সে সময় থেকে জিএইচএফের ত্রাণকেন্দ্রগুলো থেকে ত্রাণ নিতে এসে ইসরায়েলি সেনার গুলিতে দুই হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। মানবাধিকার সংস্থাগুলো জিএইচএফের কার্যক্রমকে আন্তর্জাতিক অপরাধের সঙ্গে তুলনা করেছে এবং নেতানিয়াহুর সরকারের বিরুদ্ধে ‘ক্ষুধাকে অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ এনেছে।