বিএনপির আলোচনা সভা
দেশে গণতন্ত্র না থাকলে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না
প্রকাশ : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশে যদি নির্বাচিত সরকার না থেকে তাহলে জবাবদিহিতা ও গণতন্ত্র থাকে না। আর যদি গণতন্ত্র না থাকে তাহলে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না। বর্তমান সরকার সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনলেও অর্থনীতিতে সংস্কারের চাকা ঘুরেনি বলে মনে করেন ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানের লেকশোর হোটেলে আয়োজিত ‘সংকট থেকে স্থিতিশীলতা: অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ভিত্তি গণতন্ত্র’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
পলিসি এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান ও অর্থনীতিবিদ এম মাশরুর রিয়াজ বলেন, ‘রাজস্ব, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা শৃঙ্খল ভেঙ্গে পড়েছে। যা ঠিক করতে গেলে তিনটি জিনিস করতে হবে। প্রথমত আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনার প্রয়োজন। সরকারের আমল থেকে রাষ্ট্রের আর্থিক শৃঙ্খলা ভেঙ্গে পড়েছে। বিনিয়োগকারী, গ্লোবাল কমিউনিটি, গ্লোবাল ইকোনমিক পার্টনার, তাদের যে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে তারা ডিল করবে; যেই পলিসির আন্ডারে তারা কাজ করবে সেটার প্রেডিক্টিবিলিটি, কনসেন্টেন্সি সব কিছুর ওপর কনফিডেন্স নির্ভর করবে। এই কনফিডেন্স সাধারণত নির্বাচিত সরকারের আমলে যেভাবে হয়, অনির্বাচিত বা ইন্টেরিয়ামের আমলে সেইভাবে হয় না।’
তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার কিছু ভালো কাজ করেছে। ম্যাক্রোতে কিছু স্থিতিশীলতা তৈরি, সেন্ট্রাল ব্যাংককে তার স্বাধীনতা ফেরত দিয়েছে। সংস্কারের ইচ্ছা ব্যক্ত করেছে। আমরা দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে যেটা শুনেছি তাদের কনসার্ন এবং আমরা দেখছি সরকারের পক্ষ থেকে আউটরিচটা খুব কম। সরকার তাদের এনগেজ করছে কম। এর ফলে আত্মবিশ্বাস আবার আঘাত প্রাপ্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বাণিজ্য-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য সংস্কার, পুরো অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা সংস্কার বহুবছর ধরে বকেয়া হয়ে আছে। কিন্তু আগে তো হয়নি গত ১ বছরে সেই রিফর্মের চাকা আসলে ঘুরেনি। এটা জনগণের ম্যান্ডেট প্রাপ্ত সরকার আসার আগে সেই সংস্কারের যেই শক্তিটা প্রয়োজন হয়, আত্মবিশ্বাস প্রয়োজন হয় সেটা পাওয়া যাবে না। সুতরাং সেই দিক থেকেও আমাদের যে ডেমোক্রেটিক ট্রানজিশন; ইলেকশনের মাধ্যমে সেটা খুব ত্বরান্বিত হওয়া প্রয়োজন।’
এই অর্থনীতিবিদের মতে, জনগণের ম্যান্ডেটসহ নির্বাচিত সরকার সেই গণতন্ত্র, এর সঙ্গে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ওতপ্রোত সম্পর্ক আছে। আটলান্টিক কাউন্সিল, হেরিটেজ ফাউন্ডেশন সবগুলোর প্রতিবেদন দেখাচ্ছে, যে গণতান্ত্রিক পরিবেশের সঙ্গে একটা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি জড়িত। এর যদি কমতে থাকে; সমৃদ্ধি ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার ইনডেক্স যদি দেখে গত ৫ বছরের টা দেখেন, আর এই বছরের টা দেখন দেখবেন—এর পরিবর্তন হয়েছে। এই পরিবর্তনকে সুসংহত করতে গেলে আমাদের গণতন্ত্র কে শক্তিশালী করতে হবে, সেখানে নির্বাচিত সরকার ও নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ।’ বিজিএমইএ’র সভাপতি মাহমুদ আহসান খান বাবু বলেন, ‘গত পনেরো বছরে আমরা দেখেছি, গণতন্ত্র না থাকলে জবাবদিহিতা থাকে না। জবাবদিহিতা না থাকলে বিনিয়োগ হবে না। লুটপাট হবে এবং লুটপাটের সংস্কৃতি চালু হবে। সুতরাং দেশের মানুষের স্বার্থে এবং সত্যিকারের যদি জবাবদিহিতামূলক সরকার আমরা চাই, তাহলে অবশ্যই গণতন্ত্র লাগবে। গণতন্ত্র না থাকলে যে সমস্যাগুলো হয় সেটা আমরা গত ১৫ বছরে দেখেছি। বিজিএমইএ থেকে আমরাও চাই না যে বাংলাদেশ শুধুমাত্র একটি মাত্র পণ্যের ওপর নির্ভরশীল থাকুক। পণ্যের বৈচিত্র্যকরণ যেমন লাগবে, সঙ্গে সঙ্গে বাজার বৈচিত্রকরণও লাগবে। সেটা করতে হলে আমি আশা করবো আগামীতে একটা ভালো নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে যদি জনগণ বিএনপিকে ভোট দেয়, আশা করি তারা একটি শক্তিশালী নীতি করবে। যেটা ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে আসা উনি বলেছেন। কেউ ইনভেস্ট করতে আসার পর নীতিতে যদি ভিন্ন চিত্র পাওয়া যায় তাহলে ফরেন ইনভেস্টমেন্ট আসবে না। আশা করি ভবিষ্যতে যারা দেশ পরিচালনায় আসবেন এই বিষয়গুলা অনুসরণ করবেন। এটা যদি অনুসরণ করা হয় অবশ্যই দেশে বিনিয়োগ আসবে।’
বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ইসরাফিল খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা ঋণ নিয়েছি এবং টাকা ছাপিয়েছি। আমাদের ঋণ ভিত্তিক অর্থনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। দেশে ব্যবসায়ীরা অনেক নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে।
