
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবু তাহের মোহাম্মদ মাসুম বলেছেন, মানবিক বাংলাদেশ গঠনে মানুষের তৈরি কোনো আইন বা মতবাদ কার্যকর নয়। দেশকে শান্তি ও ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্রে রূপান্তর করতে হলে আল-কোরআনের নির্দেশনা অনুসরণ ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই। গতকাল শুক্রবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জের শিমরাইল এলাকায় এক নাগরিক সমাবেশে তিনি বলেন, আমরা যে মানবিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই, তা দুনিয়ার কোনো মন্ত্র-তন্ত্র দিয়ে সম্ভব নয়। মানুষের বানানো কোনো আইন, মতবাদ বা দফা দিয়ে এটা হবে না। এটা সম্ভব একমাত্র মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে নাজিল করা মহাগ্রন্থ আল-কোরআনের ফর্মুলা অনুযায়ী চলতে পারলে। কোরআনের ফর্মুলায় না চললে ফেরেশতাও বাংলাদেশে শান্তি নিশ্চিত করতে পারবে না। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা কমিটির আমির মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল এবং সঞ্চালনা করেন সাইফুল ইসলাম রনি।
ঢাকা-৮ আসনে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধের প্রসঙ্গ তুলে আবু তাহের বলেন, নির্বাচনের ঘোষণার পরদিনই রাজপথের একজন লড়াকু সৈনিক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এতে কি আমাদের আন্দোলনের যৌক্তিকতা প্রমাণিত হয়নি? আমরা এটাই আশঙ্কা করেছিলাম। সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের শর্ত হিসেবে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও সাংবিধানিক মর্যাদা আগে নিশ্চিত করতে হবে। তার ভাষায়, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও সাংবিধানিক মর্যাদা আগে নিশ্চিত করতে হবে, তারপর জাতীয় নির্বাচন হবে। নির্বাচন কমিশন ১২ ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। একই দিনে জুলাই সনদের সাংবিধানিক ভিত্তি দিতে গণভোটের আয়োজনের কথাও বলেছেন। আমরা বহুদিন ধরে এই দাবিগুলো করে এসেছি। সব রাজনৈতিক দল এই দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির জন্য সকল রাজনৈতিক দল স্বাক্ষর করেছিল। তারপরও আমরা আট দলের পক্ষ থেকে আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছিলাম। কেউ কেউ বলেছিলেন- এগুলো তো আলোচনার টেবিলে আছে, তাহলে রাজপথে নামলেন কেন?
তিনি আরও বলেন, জুলাই আন্দোলনে হতাহতের ঘটনায় দায়ীদের বিচার না হলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। গণহত্যাকারীদের দোসরদেরও নিষিদ্ধ করতে হবে। তারা যদি সেদিন গৃহপালিত বিরোধী দল না হতো, তাহলে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ এতদিন চলতে পারত না। আমরা তাদের নিষিদ্ধ করার কথা বলেছি। আমরা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের দাবি জানিয়েছি। প্রত্যেক রাজনৈতিক দল নির্বাচনে সমান সুযোগ-সুবিধা পাবে এটা নিশ্চিত করতে হবে। পরমতসহিষ্ণুতা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ রাজনীতি গড়ে তুলতে হবে। কাদা ছোড়াছুড়ি নয়, সন্ত্রাসের ভাষা নয়। এক দল আরেক দলের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার চালিয়ে নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট করবে এগুলো থেকে বের হয়ে একটি সুন্দর, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ এবং উৎসবমুখর নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এসব সমস্যার সমাধান না করেই নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণা করেছে। আমরা এটাকে স্বাগত জানিয়েছি। আমরা এখনো এই সরকারের ওপর বিশ্বাস রাখতে চাই।
অন্তর্বর্তী সরকার ও নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা গতকাল নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছেন। সুতরাং এ চ্যালেঞ্জে আপনাদের বিজয়ী হতে হবে। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে জাতিকে একটি সুন্দর নির্বাচন উপহার দেওয়া এখন আপনাদের নৈতিক, মানবিক ও গণতান্ত্রিক দায়িত্ব।