ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ফ্লাইট মিস করছেন অনেক যাত্রী

বৃষ্টির কারণে রাজধানী জুড়ে তীব্র যানজট

বৃষ্টির কারণে রাজধানী জুড়ে তীব্র যানজট

গত তিন দিন ধরে ঢাকা ও গাজীপুরসহ আশপাশের এলাকাজুড়ে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। কখনো গুঁড়ি গুঁড়ি আবার কখনো মুষলধারে। এই ভারি ও হাল্কা বৃষ্টিতে গতকালও গাজীপুরের টঙ্গী-চেরাগআলী এলাকায় যান চলাচল প্রায় স্থবির হয়ে পড়ে দেখা যায় যানজট। সেই যানজটে রাজধানী উল্লেখযোগ্য স্থানেও স্থবিরতা দেখা যায়। এ সময় ঢাকার দক্ষিণাংশ থেকে উত্তরা-বিমানবন্দর ও ঢাকা-ময়মনসিং মহাসড়কে যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখা যায়। ফলে বিমানবন্দর সড়কে এসে মিশেছে এমন সড়কগুলোতে যানচলাচল প্রায় স্থবির হয়ে যানজট তৈরি হয়। তাৎক্ষণিক কোনো সমাধান না হওয়ায় সকাল থেকে ভোগান্তিতে পড়েন কর্মজীবীসহ সব শ্রেণিপেশার মানুষ। এ সমস্যায় বেশি ভোগান্তিতে পড়েন বৃদ্ধ ও শিশুরা।

গতকাল বুধবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গাজীপুরের সমস্যার কারণে সৃষ্ট যানজটে উত্তরা-এয়ারপোর্ট রোড হয়ে রাজধানীর মূল অংশে আসা চারটি সড়ক স্থবির হয়ে পড়ে। একদিকে বনানী-মহাখালী হয়ে সাতরাস্তা ও মগবাজার অপরদিকে জাহাঙ্গীর গেট হয়ে ফার্মগেট পর‌্যান্ত পৌঁছে যায় যানজট। এছাড়া উত্তরা থেকে যানজট কুড়িল বিশ্বরোড হয়ে ইসিবি চত্ত্বর থেকে মিরপুর-১০ নম্বর পর‌্যান্ত ঠেকেছে। একইভাবে উত্তরা থেকে কুড়িল বিশ্বরোড হয়ে বাড্ডা-রামপুরা ছাড়িয়ে যায় যানজট।

সড়কে গাড়ির চাপ ও যানজট নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে হয় ট্রাফিক পুলিশকে। তারা জানিয়েছেন, বৃষ্টির কারণে পুরো শহরে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে বিমানবন্দর সড়ক তথা মহাখালী থেকে উত্তরার আব্দুল্লাহপুর, মালিবাগ থেকে খিলক্ষেত, মহাখালী থেকে বিজয় সরণি, মিরপুর-১০ থেকে বিজয় সরণি, কারওয়ান বাজার হয়ে শাহবাগ পর‌্যান্ত যানজটের মাত্রা ছিল বেশি। গাবতলী থেকে বেলা ১০টায় বাড্ডার নতুনবাজার অফিসের উদ্দেশে রওনা দেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী জহিরুল ইসলাম। দুপুর ১টা নাগাদ তিনি আটকে ছিলেন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে বিমানবন্দর সড়কে। প্রায় ৪ ঘণ্টা পর তিনি অফিসে পৌঁছান বলে জানান বিকালে। সকাল ৮টায় পল্টন থেকে উত্তরাগামী বাসে ওঠেন জামাল উদ্দিন। দুপুর ১টায় গন্তব্যে পৌঁছান তিনি। তিনি বলেন, পাঁচ ঘণ্টা সময় লেগেছে অন্য সময়ের এক ঘণ্টার রাস্তায়। গাড়ি যেন হেঁটেছে, চলেই না।

এ বিষয়ে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা বলছেন, সকাল থেকে বৃষ্টির কারণে যান চলাচল ধীরগতি ছিল। এছাড়া ঢাকার প্রবেশ পথগুলোতে যান চলাচলে বেশ ধীরগতি থাকায় রাজধানীতে যানজট তৈরি হয়েছে। বিমানবন্দর এলাকায় তীব্র যানজটের কারণে সব রাস্তায় গতকালও গাড়ি ধীরগতিতে চলেছে।

এদিকে যানজটের কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে ভুক্তভোগীদের। তারা জানাচ্ছেন, সকাল থেকে সৃষ্ট এই যানজটে থেমে থেমেও গাড়ি চলছিল না। এক জায়গায় ১-২ ঘণ্টা ধরে গাড়ি সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। কয়েকজন লিখেছেন সকাল ৮টায় কারওয়ান বাজার থেকে বাসে উঠে প্রায় ৩ ঘণ্টায় এয়ারপোর্ট রোডে পৌঁছে সেখানে স্থির হয়ে আছেন।

মো. আনোয়ার নামে একজন তার পোস্টে লিখেছেন, প্রায় ১ ঘণ্টার ওপরে শুধু হোটেল রেডিসন ব্লু-এর সামনে আটকে ছিলেন। পরে কিছুক্ষণ বাস চলে এয়ারপোর্ট রোডে পৌঁছালে আবারও স্থবিরতা শুরু হয়ে যায়।

রাকিব হক নামে আরেক ভুক্তভোগী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে বলেন, টঙ্গী যাব বলে সকাল ১০টায় বাসে উঠেছি ইসিবি চত্ত্বর থেকে। কিন্তু কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে প্রায় ১ ঘণ্টা ধরে গাড়ি আটকে আছি। কোনোভাবেই গাড়ি এগোতে পারছে না। হেঁটে যাব এই অবস্থাও নেই বৃষ্টির কারণে।

অন্যদিকে যানজটের কারণ নিয়ে কর্তব্যরত ট্রাফিক কর্মকর্তা বলছেন, গাজীপুরের সমস্যার কারণে পুরো রাজধানীবাসী ভোগান্তিতে পড়েছে। এর ফলে রাস্তায় যানজট নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হচ্ছে।

যানজট নিয়ে ডিএমপির গুলশান ট্রাফিক বিভাগের মহাখালী জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মো. আশফাক বলেন, গাজীপুরের সমস্যার কারণে সৃষ্ট যানজট বনানী পার হয়ে গেছে। আগের দিনের মতো গতকাল রাস্তায় যানজট পরিস্থিতি ছিল ভয়াবহ। মাঝেমধ্যে থেমে থেমে একটু যানবাহন চললেও সকাল থেকে এখন পর‌্যান্ত অধিকাংশ সময়ই রাস্তা স্থবির হয়ে রয়েছে।

উত্তরা ট্রাফিক বিভাগের বিমানবন্দর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) সাখাওয়াত হোসেন সেন্টু বলেন, মঙ্গলবারের মতোই অবস্থা চলছে। উত্তরার দিকে কোনো গাড়ি এগোতে পারছে না। ফলে বিমানবন্দর এলাকায় একদম ভয়ংকর যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। গাজীপুরের সমস্যার সরাসরি চাপ এসে বিমানবন্দর রোডে পড়ছে।

যানজটে বিমানযাত্রীদের ফ্লাইট মিস : তীব্র যানজটে বিদেশগামী অসংখ্য যাত্রী ফ্লাইট মিস করছেন। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গতকাল বুধবার ও তার আগের দিন এমন ঘটনা ঘটেছে।

যাত্রীদের অভিযোগ, যানজটের কারণে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সময় হাতে নিয়ে বের হয়েও নির্ধারিত সময়ে বিমানবন্দরে পৌঁছানো যাচ্ছে না। ৩০ মিনিটের পথ যেতে সময় লাগছে চার-পাঁচ ঘণ্টা। এমন পরিস্থিতিতে অনেক যাত্রী বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গন্তব্যের ফ্লাইট মিস করছেন। এতে তাদের মোটা অঙ্কের টাকা গচ্চা যাচ্ছে। যানজট নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিদেশগামী যাত্রীরা।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ বলছে, বিমানবন্দর এলাকা থেকে উত্তরা ও গাজীপুর অংশে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ চলছে। এই কাজের জন্য নিচের সড়কে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে উত্তরা ও আব্দুল্লাপুর অংশে অনেকগুলো বড় গর্ত রয়েছে। বৃষ্টির পানি জমে এসব গর্তে যানবাহনের চাকা আটকে যাচ্ছে। ফলে সড়কে তীব্র যানজট তৈরি হয়েছে। ট্রাফিক পুলিশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সাধ্যমতো চেষ্টা করছে।

যানজটের কারণে গতকাল সকালে ফ্লাইট মিস করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন শিমন রায়হান নামে এক আইনজীবী। তিনি লিখেন, ‘রাস্তায় উন্নয়নের চাপ! প্রথম ফ্লাইট মিসের স্বাদ গ্রহণ করলাম। রাজধানীর কোনো সড়কে যানজট কেমন প্রযুক্তির সহায়তায় তা জানতে মোবাইল অ্যাপস ‘মি অন দ্য ম্যাপে’ দেখা যায়, রাজধানীর অধিকাংশ সড়কেই যানজট রয়েছে। এর মধ্যে বনানী থেকে খিলক্ষেত হয়ে উত্তরা, আব্দুল্লাপুর, টঙ্গী, গাজীপুর পর‌্যান্ত সড়কে তীব্র যানজট রয়েছে। গত দুই দিনে যানজটের কারণে কী পরিমাণ যাত্রী ফ্লাইট মিস করেছেন, তা জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিমানবন্দরের এক কর্মকর্তা বলেন, দুই দিন ধরেই যথাযথ সময়ে বিমানবন্দরে উপস্থিত হতে পারছেন না যাত্রীরা। অনেক উড়োজাহাজ যাত্রী রেখেই চলে যাচ্ছে। কিন্তু কী পরিমাণ যাত্রী ফ্লাইট মিস করছেন, তার সঠিক পরিসংখ্যান তিনি দিতে পারেননি। কারণ, কেউ নিজের কারণে ফ্লাইট মিস করলে এ বিষয়ে বিমানবন্দরে লিখিত অভিযোগ দেয়ার সুযোগ নেই।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত