ঢাকা ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ২৩ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

চট্টগ্রাম কাস্টমসে সার্ভার জটিলতা

ভোগান্তিতে ব্যবসায়ীরা
চট্টগ্রাম কাস্টমসে সার্ভার জটিলতা

চট্টগ্রাম কাস্টমসে সার্ভার সমস্যার কারণে ব্যবসায়ীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। আমদানি-রফতানি পণ্য চালানের নথি দাখিলের জন্য প্রায় প্রতিদিনই চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজে রাজস্ব কর্মকর্তাদের টেবিলে টেবিলে উপচেপড়া ভিড় সিএন্ডএফ এজেন্টদের। আগের দিনের তুলনায় আমদানি পণ্যের শুল্কায়নে বিল অব এন্ট্রি দাখিলের পরিমাণ বাড়লেও শুল্কায়ন কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। গত চারদিন ধরে সার্ভারে ধীরগতির কারণে ভোগান্তি বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে। শুল্কায়ন কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার কারণে যথাসময়ে পণ্য খালাস করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষার পর আইজিএম চেক করতে পারলেও কম্পিউটার থেকে সার্ভার জটিলতার কারণে পণ্য চালানের অ্যাসেসমেন্ট সম্ভব হচ্ছে না। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে তাদের। চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলছে, সার্ভারের আপগ্রেডেশনের কারণে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ত্রুটিবিচ্যুতি হচ্ছে। দ্রুত সেসব সমস্যার সমাধান করা হচ্ছে। জানা গেছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ডের সার্ভার হালনাগাদের পর সৃষ্টি হয়েছে এই সংকট। অনলাইনে দাখিল করা যাচ্ছে না আমদানি পণ্যের মেনিফেস্ট বা আইজিএম। এতে নিবন্ধন না হওয়ায় বহির্নোঙরে রয়েছে খাদ্যশস্য, সার ও এলপিজিবোঝাই বেশ কিছু জাহাজ। এ অবস্থায় চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে জাহাজ প্রবেশে ও কার্গো জাহাজ থেকে পণ্য খালাস নিয়ে উৎকণ্ঠায় পড়েছে শিপিং এজেন্ট ও আমদানিকারকরা। শুল্কায়ন কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় পণ্য ডেলিভারি নেওয়া যাচ্ছে না। ফলে লোকসান গুনতে হচ্ছে আমদানিকারককে। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের অ্যাডিশনাল কমিশনার মুশফিকুর রহমান জানান, শিপিং এজেন্ট, আইজিএম দাখিলের পরে অ্যাসাইকুডা সিস্টেমে অনলাইনে বিল অব এন্ট্রি দাখিল করে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট। অনলাইনে দাখিল করা তথ্যের সঙ্গে কাগুজে নথি যাচাই-বাছাই শেষে আমদানি-রপ্তানি চালানের শুল্কায়ন করেন রাজস্ব কর্মকর্তা। যদিও সার্ভারের সমস্যার কারণে গত তিন দিনে কাজ হয়েছে খুব সীমিত। চট্টগ্রাম কাস্টমস এজেন্টস এসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী রিগ্যান জানান, সার্ভারের সমস্যা যেন বর্তমান সময়ে ব্যবসায়ীদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

চলতি সপ্তাহের পাঁচদিনে আগের সপ্তাহের দুইদিনের কাজও হয়নি। এতে ব্যবসায়ীদের ভোগান্তি পোহানোর পাশাপাশি আর্থিকভাবেও ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। সঠিক সময়ে পণ্য খালাস করতে না পারলে বন্দরের ডেমারেজ গুণতে হবে। এখন এই ক্ষতির দায় কার। সার্ভারের এই সমস্যা আজকে এক-দুইদিনের সমস্যা না। আমরা বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করছি, তারা কেবল শুনে যাচ্ছে আর আমাদের আশ্বস্ত করে যাচ্ছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। আমরা এই সার্ভার সমস্যার স্থায়ী সমাধান চাই। চট্টগ্রাম কাস্টমস সিএন্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের কাস্টমস বিষয়ক সম্পাদক আশরাফুল হক খান বলেন, আপগ্রেড ভার্সনটিকে আরও সহজ ও দ্রুতগতির করতে হবে। সেটি যতক্ষণ পর্যন্ত সম্ভব না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আগের ভার্সনটিকে চালু রাখতে হবে।

এক সময় অ্যাসাইকুডা প্লাস প্লাস ভার্সন থাকলেও গত ২০১৩ সাল থেকে কাস্টমসে অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড পদ্ধতি চালু হয়। এই পদ্ধতিতে আমদানি রপ্তানি কার্যক্রমের প্রায় সবকিছুই অনলাইনের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হচ্ছে। কিন্তু মাঝে মাঝেই সার্ভারের গতি কমে যাওয়া কিংবা বিকল হয়ে যাওয়ার ফলে আমদানিকারকদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। দেখা গেছে, যে কাজ এক মিনিটে হওয়ার কথা সেটি করতে পাঁচ মিনিট লাগছে। চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সার্ভার সমস্যার কারণে বিল অব এন্ট্রি দাখিল করা যায়নি। পরবর্তীতে বিকেলের দিকে কাজের গতি কিছুটা বাড়ে। গত মঙ্গলবার বিল এন্ট্রি দাখিল হয়েছে ৮০০টির মতো। তবে গত বুধবার দাখিল হয়েছে ১ হাজার ৪৯৭টি। যার অধিকাংশই আবার বিকেল ৫টার পর। পাঁচ দিন আগে হালনাগাদ করা হলেও এখনো সচল হয়নি এনবিআরের অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ডের সার্ভার। ফলে অনলাইনে জাহাজ আসার ঘোষণা প্রদান, নিবন্ধন এবং বন্দর জেটিতে জাহাজ প্রবেশ এবং পণ্য খালাসে জটিলতা তৈরি হয়েছে।

মূলত কোনো জাহাজ বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশের এক দিন আগে কাস্টম হাউসের অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে ঘোষণা দিতে হয় শিপিং এজেন্টকে। কিন্তু সার্ভারের সমস্যার কারণে গত দুদিন জাহাজ আসার ঘোষণা ও আইজিএম সাবমিট করা যাচ্ছে না। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে শিপিং এজেন্টরা। সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা বলছে, পণ্য ডেলিভারি না হওয়ায় বাড়ছে পোর্ট ও শিপিং ডেমারেজ। সাম্প্রতিক অচলাবস্থা কাটিয়ে বন্দরে অপারেশনাল কার্যক্রম স্বাভাবিক হলেও এনবিআরের সার্ভারের সমস্যায় বন্দরে আবার জাহাজ ও কনটেইনার জটের আশঙ্কা করছেন ব্যবহারকারীরা।

সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার অ্যাসোসিয়েশনসহ কেউ যথাসময়ে কাজ করতে না পারায় ব্যাহত হচ্ছে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম। তারা জানান, সার্ভার খুবই ধীরগতিতে চলার কারণে কাঙ্ক্ষিত সেবা মিলছে না। এতে বাড়ছে ভোগান্তি। সিস্টেমের আপগ্রেডেশনের কারণে এ সমস্যা জানিয়ে কাস্টমস বলছে, সকাল ও রাতের অফপিক সময়ে কাজ করে সংকট কাটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের সিস্টেম অ্যানালিস্ট মোহাম্মদ হাসান উজ-জামান খান বলেন, সার্ভারটি নিয়ন্ত্রণ করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সমস্যা সমাধানে প্রতিষ্ঠানটি দ্রুততার সঙ্গে কাজ করছে। তবে এক্ষেত্রে এনবিআরের উদাসীনতাকে দায়ী করে বিকল্প রাস্তারও ব্যবস্থা রাখার দাবি ব্যবহারকারীদের। উল্লেখ্য, আমদানি রপ্তানি-বাণিজ্যকে গতিশীল করার লক্ষ্যে ১৯৯৫ সালে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে অটোমেশনের যাত্রা শুরু হয়। ২০১৩ সালে সর্বপ্রথম আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে আন্তর্জাতিক অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেম চালু করে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত