ঢাকা ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ২৪ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আমরা সবাই বাংলাদেশি, আমরা সবাই এক পরিবারের সদস্য

ড. বদিউল আলম মজুমদার
আমরা সবাই বাংলাদেশি, আমরা সবাই এক পরিবারের সদস্য

সুজন সম্পাদক ও দি হাঙ্গার প্রজেক্টের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, ‘গত ৫ আগস্ট এক অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমাদের সামনে এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। এখন আমরা যদি সম্প্রীতির সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে পারি, সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে পারছি, তাহলে বাংলাদেশকে রুখে দেয়ার সাধ্য কার?’

তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে নানা মত ও পথ থাকতে পারে, কিন্তু আমরা প্রথমত মানুষ। আমরা সবাই বাংলাদেশি, আমরা সবাই এক পরিবারের সদস্য। আমরা পরস্পরের মধ্যে নানা বিষয়ে মতান্তর করতে পারি, কিন্তু মনান্তর যেন না করি। আমরা যদি মানুষ পরিচয়কে ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে পারি, তাহলে আমাদের মধ্যে কোনো সমস্যা থাকার কথা নয়।’

তিনি গতকাল ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে ইউকেএইড ও দি হাঙ্গার প্রজেক্ট আয়োজিত এক ‘সম্প্রীতি সংলাপে’ এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মেজর (অব.) রানা মোহাম্মদ সোহেল, সাবেক সংসদ সদস্য; চার্লস রীড, ডিরেক্টর, অপারেশন, এজেন্ট অব চেঞ্জ প্রকল্প ও পলিসি অ্যাডভাইজার, চার্চ অব ইংল্যান্ড; ড. শাহনাজ করীম ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ: এ বাংলাদেশে ফ্রিডম অব রিলিজিওন অর বিলিফ লিডারশিপ ইনিশিয়েটিভ। এছাড়া শিক্ষাবিদ, ধর্মীয় নেতৃত্ব, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি এবং তরুণদের প্রতিনিধিবৃন্দ আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।

সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) রানা মোহাম্মদ সোহেল বলেন, ‘ব্যক্তিগত ও সামাজিক বহু কারণে আমাদের মধ্যে সম্প্রীতি দরকার। কিন্তু আমাদের মধ্যে সম্প্রীতি কেন কমে যাচ্ছে তার কারণগুলো চিহ্নিত করা দরকার। আমি মনে করি, ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানো সামাজিক সম্প্রীতি বিনষ্টের অন্যতম প্রধান কারণ। তবে অজ্ঞতার কারণেই মূলত ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানো হয়। অনেক সময় দেখা যায় তৃতীয় পক্ষের ষড়যন্ত্র, রাজনৈতিক কারণ এবং জমি, মাঠ ও দোকান দখলের জন্য ধর্মকে ব্যবহার করা হয়। তাই ধর্মকে ব্যবহার করে কেউ যাতে স্বার্থসিদ্ধি করতে না পারে সে ব্যাপারে রাষ্ট্রকে দায়িত্ব পালন করতে হবে এবং জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।’ রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে গুণগত পরিবর্তন এলে সামাজিক সামাজিক সম্প্রীতির মাত্রা বৃদ্ধি পাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

চার্লস রিড তার বক্তব্যে বলেন, ‘জাতি, ধর্ম ও বর্ণের কারণে প্রতিদিন বিশ্বব্যাপী লাখো মানুষ সহিংসতা, শত্রুতা ও বৈষম্যের শিকার হয়। এ ধরনের অন্যায় ও অন্যায্য আচরণ থেকে মানুষকে রক্ষার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। এমন অনুধাবন থেকে মানবাধিকার সংরক্ষণ ও ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র বিভাগ বিগত চার বছর ধরে পূর্ব আফ্রিকা, পশ্চিম আফ্রিকা এবং দক্ষিণ এশিয়ায় দি হাঙ্গার প্রজেক্টের সঙ্গে কাজ করছে। এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশে ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ ও তরুণদের যুক্ত করে এবং তাদের নেতৃত্বে সমাজে শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তরুণরা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারণা চালানোসহ নানাবিধ উপায়ে সমাজে সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছেন। বাংলাদেশের উন্নয়নে এ ধরনের কার্যক্রমে যুক্ত থাকতে পেরে ব্রিটিশ হাই কমিশন গর্বিত।’

অনুষ্ঠানে ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ: এ বাংলাদেশে ফ্রিডম অব রিলিজিওন অর বিলিফ লিডারশিপ ইনিশিয়েটিভ’ শীর্ষক প্রকল্পের কার্যক্রমের একটি বিবরণ তুলে ধরেন ড. শাহনাজ করীম। তিনি বলেন, বাংলাদেশে সম্প্রীতির সুদীর্ঘ ঐতিহ্য লালনে নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশ যুক্তরাজ্য সরকারের সহায়তায় ‘এজেন্টস অব চেঞ্জ: এ বাংলাদেশ ফ্রিডম অব রিলিজিওন অর বিলিফ লিডারশিপ ইনিশিয়েটিভ’ শীর্ষক একটি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তারই অংশ হিসেবে দেশের আটটি জেলায় সামাজিক সম্প্রীতি সুরক্ষা এবং ধর্ম ও বিশ্বাসের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে তরুণ স্বেচ্ছাব্রতীদের উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে। কর্মসূচিসমূহে সংশ্লিষ্ট এলাকার রাজনৈতিক, নাগরিক এবং ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ সহায়তা করছেন। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তরুণ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ‘সম্প্রীতি’ কর্মশালা এবং আটটি জেলায় ‘সামাজিক সম্প্রীতি সংলাপ’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় আজ ঢাকায় এই ‘সম্প্রীতি সংলাপ’ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত