সুসংবাদ প্রতিদিন
ফুলের নার্সারিতে বাড়ছে কর্মসংস্থান
প্রকাশ : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
মোশারফ হোসাইন, নকলা (শেরপুর)

মেধা, শ্রম আর ইচ্ছা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে যে কোনো কাজেই সফলতা অর্জন সম্ভব। এমনি এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন শেরপুরের নকলা উপজেলার নকলা পৌরসভার ধুকুড়িয়া এলাকার নার্সারি ব্যবসায়ী মোক্তার হোসেন। শখের বসে প্রথমে বাড়ির আঙিনায় ফুলের নার্সারি করলেও এখন বাণিজ্যিকভাবে ফুল ও ফলের চারার নার্সারি করে তিনি স্বাবলম্বী হয়েছেন। হয়ে উঠেছেন একজন সফল নার্সারির মালিক। সংসারে ফিরে এসেছে সচ্ছলতা। এখন বছরে তার সঞ্চয় হয় লাখ টাকা। তার দেখাদেখি উপজেলায় দিন দিন এই ব্যবসায়ীর সংখ্যা ও পরিমাণ বাড়ছে। মোক্তার হোসেনের সফলতা দেখে নার্সারিতে বিনিয়োগ করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে উপজেলার অর্ধশত পরিবার। ভ্যানে করে ফুল, ফলের চারা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন আরো অন্তত ত্রিশ পরিবার। রাজধানী ঢাকাসহ পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে যাচ্ছে এখনকার নার্সারির চারা ও ফুল। যদিও সহজ লভ্য নয় এমন কিছু উন্নত জাতের ফুল ও ফলের চারা অন্য জেলা থেকে তাদের আনতে হয়। উপজেলার ছোট বড় সব বাজারেই তাদের নার্সারির চারা ও ফুল বেচাকেনা হয়। ফুল এবং ফুল-ফলের চারা বিক্রেতাদের অনেকেই জানান, সারা বছর যতটা না ফুল ও ফুলের চারা বিক্রি হয়, তারচেয়ে অনেক বেশি বিক্রি হয় ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে শুরু করে ফেব্রুয়ারি ২১ তারিখ পর্যন্ত। তাছাড়া বিশেষ দিনগুলোতেও তাদের ফুলই উপজেলাবাসীর একমাত্র ভরসা। সরজমিন দেখা গেছে, উপজেলার ধুকুড়িয়া, রামপুর, কবুতরমারী, বাউসা, কায়দা, মোজার, পুলাদেশি ও মাউড়াসহ বেশ কিছু গ্রামের অন্তত শতাধিক পরিবার এই পেশায় জড়িয়ে জীবীকা নির্বাহ করছেন। কেউ পানি দিচ্ছেন, কেউ আগাছা দমন বা কীটনাশক দিচ্ছেন, কেউবা বিভিন্ন চারা ভ্যানে সাজিয়ে গ্রাম গঞ্জে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করছেন। মোক্তার হোসেন জানান, ভ্যানে করে ফুল ও গাচের চারা বিক্রি করে দৈনিক ৫০০ টাকা থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত তাদের। আয় হয়। ভ্যানের পাশে দাঁড়িয়ে কেউ চারা বিক্রি করছেন, আবার কেউ পছন্দের চারাগাছ কিনতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সবাই যেন নিজেদের বাড়িকে লাল সবুজে সাজাতে ব্যস্ত।
তিনি জানান, উপজেলার অধিকাংশ নার্সারিতে গোলাপ, গাদা, মৌচান্দা, মাদবী লতা, জুঁই, চামেলী, শিউলী, কামিনি ফুলসহ বিভিন্ন জাতের গাছের বিক্রি করা হয়। তবে মোক্তার হোসেনের নার্সারিতে বিভিন্ন জাতের গোলাপ, গাদা, ডাবল ও সিংগেল স্টার, বার্ডিং হার্ট, বাগান বিলাশ, ক্রিশমাশ, দোপাটি, চন্দ্রমল্লিকা, ডাবল ও সিংগেল রঙ্গন, মৌচান্দা, মাদবী লতা, জুঁই, চামেলী, শিউলী, কামিনি, কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, সেঞ্চুরী, গন্ধরাজ, বিভিন্ন জাতে জবা, সেলবিয়া, জিনিয়া, কসমস, ক্যাবিস্ট, মিনি ও বড় টগর, ক্যালেন্ডুলা, ডালিয়া, হাসনা হেনা, চায়না ও ভারত থেকে আনা অ্যানকাসহ নানা প্রজাতির ফুল ও ফুলের চারা এবং সাথী চারা হিসেবে উন্নত জাতের বিভিন্ন প্রকার আম, পেপে, কাঁঠাল, লিচু, থাই পেয়ারা, ডালিম, জাম্বুরা, মেহেদীর চারা তৈরি ও বিক্রি করা হয়। গাছের জাত বিবেচনায় প্রতিটি চারা ২০ টাকা থেকে ২, ৫০০ টাকা করে বিক্রি করেন তিনি। ফলের চারা থেকেও বাড়তি টাকা আয় হয়। এ আয় দিয়ে মোক্তারের মত অনেকেই বাড়ি করেছেন, কিনেছেন জমি। ছেলে মেয়ের পড়া লেখার খরচসহ সংসারের অন্যান্য খরচ এই নার্সারি থেকেই পাচ্ছেন তারা। ভ্যানে করে ফুলের চারা বিক্রেতা সাদির, চানু, মোক্তারসহ কয়েকজন জানান, প্রতিদিন বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে ভ্যানেকরে ফুলের চারা বিক্রি করেন তারা। তারা বলেন, শিক্ষার্থীরা ফুলের চারা বা ফুল বেশি কিনেন। তবে বর্ষা মৌসুমে কাঠ ও বিভিন্ন জাতের ফলের গাছ বেশি বিক্রি হয়। এসময় সব শ্রেণির মানুষ গাছের চারা কিনেন। তারা জানান, ফুল হাতে শিশু কিশোর ও ছাত্রদের হাসিমাখা মুখ এবং সুজলা সুফলা গ্রামীণ সৌন্দর্য তাদের ভালো লাগে। তার চেয়ে বেশি ভালো লাগে যখন কেউ বলেন আপনার কাছ থেকে চারা নিয়ে লাগানো গাছে ফলন এসেছে। উপজেলা নার্সারি মালিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ মোক্তার হোসেন জানান, ২০১৩ সালে এক বীজ কোম্পানির মাধ্যমে উপজেলার ৫ জন নার্সারীর মালিক যশোরে নার্সারি বিষয়ে ৩ দিনের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। তাতে ভালো সুফলও পেয়েছেন তারা। প্রশিক্ষণ লব্ধ জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে নার্সারি ব্যবসা করে আজ তারা সবাই স্বাবলম্বী। উপজেলা নার্সারি মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম জানান, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারলে, নার্সারি ব্যবসার মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য রাক্ষার পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হতো। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক ইমান আলী বলেন, আমাদের নার্সারির চারাতেই উপজেলার অধিকাংশ কাঠ ও ফলের বাগান গড়ে উঠেছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাহরিয়ার মুরসালিন মেহেদী বলেন, নার্সারির উন্নয়ন এবং সম্প্রসারণে কৃষি বিভাগ থেকে নিয়মিত ও প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা নিয়মিত দেয়া হচ্ছে। তিনি জানান, নকলা উপজেলায় ছোট বড় প্রায় অর্ধশত নার্সারি রয়েছে। এতে নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। নকলা উপজেলার নার্সারির মালিকরা আজ সবাই স্বাবলম্বী।
