ঢাকা সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

স্বাস্থ্য খাতের সংস্কার

সর্বজনীন প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় অগ্রাধিকার প্রয়োজন

সর্বজনীন প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় অগ্রাধিকার প্রয়োজন

প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে অবশ্যই স্বাস্থ্য খাতের সংস্কারের কেন্দ্রবিন্দুতে রাখতে হবে এবং সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য বিমা চালু করা প্রয়োজন। এর পাশাপাশি মাধ্যমিক ও জরুরি স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করাও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। গতকাল ব্র্যাক সেন্টার মিলনায়তনে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। ‘ইউএইচসি ডে ২০২৪’ উপলক্ষে ইউএইচসি (ইউনিভার্সেল হেলথ কাভারেজ) ফোরাম ও ব্র্যাক যৌথভাবে এই সংলাপের আয়োজন করে। বিভিন্ন ক্ষেত্রের পেশাজীবীদের সমন্বয়ে গঠিত ইউএইচসি ফোরাম সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন নিয়ে কাজ করছে। সংলাপে বক্তারা বলেছেন, সরকারি হাসপাতালগুলোকে আর্থিক স্বায়ত্তশাসন দেয়া প্রয়োজন- যাতে তারা জনবল ও বেতন-ভাতাসহ সব বিষয় সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে পারে। নিজস্ব তহবিল থেকে চিকিৎসা খরচ যোগানো সাধারণ মানুষের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এটি কমিয়ে আনার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। স্বাস্থ্য খাতের সামগ্রিক অগ্রগতির জন্য এনজিও, বেসরকারি সংস্থা এবং সামাজিক সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বীকৃতি দিয়ে একই ছাতার নিচে সমন্বিতভাবে কাজ করা প্রয়োজন। সর্বোপরি সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবাকে যথাযথ গুরুত্ব দিতে হবে। স্বাস্থ্য খাতে প্রয়োজনীয় সংস্কারের পদক্ষেপ নির্ধারণ এবং মাঠ পর্যায়ের বাস্তবতার আলোকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ চিহ্নিত করার উদ্দেশে ‘রিফর্ম পাথওয়েজ ফর হেলথ সেক্টর’ শীর্ষক নীতিনির্ধারণী সংলাপ অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। আলোচনায় নীতিনির্ধারক, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, নাগরিক সমাজ, উন্নয়ন সহযোগী এবং ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা দেশের স্বাস্থ্য খাতের বর্তমান অবস্থা মূল্যায়ন করেন এবং বাস্তবায়নযোগ্য সংস্কার পরিকল্পনাগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব ডা. মো. সারোয়ার বারী অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। ইউএইচসি ফোরামের আহ্বায়ক এবং ব্র্যাকের চেয়ারপারসন ড. হোসেন জিল্লুর রহমান স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন এবং সমাপনী অধিবেশনে আলোচনার সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব হেলথ ইকোনমিকসের অধ্যাপক ও স্বাস্থ্য সংস্কার জোটের আহ্বায়ক ড. সৈয়দ এ হামিদ, স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক ডা. আবুল কালাম আজাদ, স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. লিয়াকত আলী, ডা. নায়লা জেড খান এবং ব্র্যাকের স্বাস্থ্য কর্মসূচি এবং মানবিক সংকট ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির ঊর্ধ্বতন পরিচালক ড. মো. আকরামুল ইসলাম প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্য খাতে এনজিও এবং বেসরকারি সংস্থার মূল্যবান অবদানগুলোর স্বীকৃতি দিতে হবে এবং তাদের প্রচেষ্টাকে সহায়তা করতে হবে, যাতে আমরা সমন্বিতভাবে কাজ করতে পারি। একে অপরকে দোষারোপ না করে সমন্বিত পদক্ষেপে মনোনিবেশ করা জরুরি। একসঙ্গে কাজ করে আমরা আমাদের অভিন্ন লক্ষ্যগুলো অর্জন করতে পারবো। চিকিৎসা শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব ডা. মো. সারোয়ার বারী বলেন, দারিদ্র্য কমানো, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং জলবায়ু সহনশীলতার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য খাত ভূমিকা রাখতে পারে। পরিবর্তনের এই সময়ে আমাদের আরো সাহসী সংস্কারের দিকে এগিয়ে যেতে হবে বা ‘বড় চিন্তা’ করতে হবে। তবে মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরে অর্থবহ পরিবর্তনের জন্য প্রায়ই বাইরে থেকে একটি ‘পুশ’ (ধাক্কা) প্রয়োজন হয়। এটি নাগরিক সমাজ, স্বাস্থ্য খাত বিশেষজ্ঞ, এনজিও এবং অন্য অংশীদারদের কাছ থেকে আসতে পারে। ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্যসেবাকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে অগ্রাধিকারমূলক খাত হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে সেবা গ্রহণে প্রবেশাধিকার, সেবাপ্রদানের গুণগত মান, সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ এবং রোগ প্রতিরোধমূলক প্রচার ও প্রসার। রোগী-কেন্দ্রিক মানসম্মত সেবাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং একই সঙ্গে স্বাস্থ্যখাতে অর্থায়ন, মানবসম্পদ এবং সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাতকে শক্তিশালী করতে হবে। আমাদের এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে হবে। এর পাশাপাশি স্বাস্থ্য খাত সংস্কারের রূপরেখা চিহ্নিত করতে হবে এবং সেই রূপরেখা বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জগুলো অতিক্রম করতে হবে। অধ্যাপক ড. সৈয়দ এ হামিদ বলেন, সবার জন্য স্বাস্থ্য বিমা নিশ্চিত করতে হলে সরকারকে ভর্তুকি ছাড়াও প্রিমিয়াম সংগ্রহের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। একই সঙ্গে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনার সংস্কার এবং অর্থ বরাদ্দের নিয়মে পরিবর্তন আনতে হবে। বিশেষত স্থানীয় পর্যায়ে স্বাস্থ্যখাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর এই কাজের পুনরাবৃত্তি রোধ করতে এই সেবাগুলোকে একটি ছাতার নিচে নিয়ে আসতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত