সুসংবাদ প্রতিদিন

১০ হাজার বস্তায় আদা চাষ কোটি টাকা বিক্রির আশা

প্রকাশ : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ইসমাইল হোসেন, সখীপুর (টাঙ্গাইল)

টাঙ্গাইলের সখীপুরে রেমিট্যান্স যোদ্ধা আজিজুল ইসলাম প্রবাসে থেকেও তিনি দেশের কৃষিতে বেশ সফল হয়েছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে নেদারল্যান্ডে পরিবার নিয়ে আছেন। প্রবাস থেকে দেশে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। প্রবাস জীবনের পাশাপাশি আজিজুল ইসলাম দুই বছর আগে ইউটিউবে ভিডিও দেখে বাড়ির আঙিনায় বস্তায় আদা চাষ শুরু করেন। প্রথম অবস্থায় শখের বসে পরীক্ষামূলকভাবে ৬০০ বস্তায় চাষ করে সফলতা পেয়ে এবছর তিনি বাণিজ্যিকভাবে ১০ হাজার বস্তায় আদা চাষ করেছেন। এ কাজে দেশে তার স্ত্রী উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করছেন। সরজমিনে উপজেলার যাদবপুর ইউনিয়নে বহুরিয়া মধ্যপাড়া এলাকায় প্রবাসী আজিজুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির পাশের বাঁশঝাড়, কাঁঠালগাছ এবং পরিত্যক্ত আমবাগানের নিচ দিয়ে ছায়াযুক্ত জায়গাতেই সারি সারি বস্তায় আদা চাষ করা হয়েছে। এরইমধ্যে আদা গাছ বড় হয়েছে, ফলনও আসতে শুরু করেছে। এ চাষাবাদ দেখে এলাকার অন্যান্য কৃষকেরাও বস্তায় আদা চাষে ঝুঁকছে। তাদের এ বস্তায় আদা চাষ দেখতে প্রতিদিনই দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসছে মানুষ। প্রবাসী আজিজুল ইসলাম মুঠোফোনে জানান, আমার বাবা ছিল কৃষক। ছোটবেলা থেকেই বাবার সঙ্গে বিভিন্ন কৃষিপণ্য উৎপাদন করে বড় হয়েছি। চার দশকেরও বেশী সময় পরিবারসহ প্রবাসে থাকলেও দেশকে ভুলতে পারিনি, দেশের মাটি ও কৃষিকে ভুলতে পারিনি।

প্রবাসে বসে ইউটিউবে বস্তায় আদা চাষের ভিডিও দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে দুই বছর আগে আমরা প্রথম অবস্থায় ৬০০ বস্তায় আদা চাষ করেছিলাম। ফলনও হয়েছিল ভালো। হিসেব করে দেখলাম এটি খুব ভালো একটি চাষাবাদ এবং লাভজনক। তাই এবছর খাগড়াছড়ি জেলা থেকে ৩০ মণ আদা এনেছিলাম, আর আমার গত বছরের ৪ মণ আদা বীজ হিসেবে রোপন করেছি। আমি বাণিজ্যিকভাবে প্রায় এক একর জমিতে ১০ হাজার বস্তায় আদা চাষ করেছি এবং আমার ৫০ শতাংশ বড়ই বাগানে সাথী ফসল হিসেবে মাটিতে আদা চাষ করেছি। সব মিলিয়ে আমার প্রায় ১৫ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। আল্লাহ্ যদি রহমত করে প্রায় কোটি টাকার আদা বিক্রির আশা করছি। এ কাজে আমার স্ত্রী আমাকে ব্যাপকভাবে সহযোগিতায় করেছে। আজিজুল আরও জানান, বস্তায় আদা চাষের খরচ অনেক কম। বাড়ির উঠান, অনাবাদী কিংবা পরিত্যক্ত ছায়াযুক্ত জায়গাতেও চাষ করা যায়।

প্রথমে বেলে, দোআঁশ মাটির সাথে বিটি বালু, কচুরিপানা, ছাই, গোবর, ভূষি, খৈল, রাসায়নিক সার ইত্যাদি মিশিয়ে এক মাস ঢেকে রেখেছিলাম। পরে আবার মাটি মিশ্রণ করে বস্তায় ভরে, আদা শোধন করে প্রতি বস্তায় ৫০-৬০ গ্রাম করে আদা রোপণ করেছি। মাটির তুলনায় বস্তায় সুবিধা অনেক বেশি। বস্তায় চাষ করলে আদার কন্দ পচা রোগ খুব কম হয়। আর হলেও আক্রান্ত বস্তাটি দ্রুত অন্যত্র সরিয়ে ফেলা যায়। ভবিষ্যতে আরো বড় পরিসরে নতুন এ পদ্ধতিতে আদা চাষ করার ইচ্ছে রয়েছে বলে যোগ করেন তিনি। প্রবাসী আজিজুলের স্ত্রী শামীমা ইসলামও তার স্বামীর সঙ্গে নেদারল্যান্ড রয়েছেন। মুঠোফোনে তিনি বলেন, আমার বাবা এবং শ্বশুর দুজনেই খুব ভাল কৃষক ছিলেন। তাই আমি বুঝি কৃষকের কষ্ট। আমার স্বামীকে সহযোগিতা করতে আমি নিজের হাতে ১০ হাজার বস্তায় আদা রোপণ করেছি।

আমরা যখন শুরু করি, তখন অনেকে অনেক কিছু বলেছে। কিন্তু তবুও আমরা থেমে থাকিনি। আমাদের এই কৃষি উদ্যোগে অনেকের কাজের সুযোগ তৈরি হয়েছে। এখন সবাই আমাদের প্রশংসা করছেন। আমরা স্বামী-স্ত্রী প্রবাসে থাকলেও দেশে এসেছিলাম, তখন শ্রমিক নিয়ে বস্তায় আদা বপণ করে গেছি। আবার কিছু দিন পরে দেশে আসবো আদার ফলন তুলতে। ওখানে লোক রেখে এসেছি, প্রতিদিনই ভিডিও ফোনের মাধ্যমে আদা চাষের দেখভাল ও পরামর্শ দিচ্ছি। প্রবাস থেকেও দেশের মাটিতে সবুজ, সজীব আদা গাছগুলো দেখে মন-প্রাণ ভরে যায়। সখীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিয়ন্তা বর্মন জানান, ‘সখীপুর উপজেলা আদা চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। চলতি বছরে প্রায় ১৯০ হেক্টর জমিতে আদা আবাদ হয়েছে এবং বস্তায় আদা চাষ হয়েছে ২০-২২ হাজার বস্তা। ফলন ভালো হলে, কৃষকরা বস্তা প্রতি দেড় থেকে দুই কেজি আদা পেতে পারে। উপজেলায় অনেক কৃষক বস্তায় আদা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের আদা চাষে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে থাকে।