‘গুমে ভারতীয় সম্পৃক্ততা মিলেছে’
প্রকাশ : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আলোকিত ডেস্ক

বাংলাদেশে গুমের শিকার ব্যক্তিদের ভারতীয় কারাগারে আটক করে তাদের বিরুদ্ধে পাসপোর্টবিহীন অনুপ্রবেশের অভিযোগ করা হতো। কারো কারো বিরুদ্ধে জঙ্গি মামলা দিয়েছে। বিএনপির সালাউদ্দিন এবং সুখরঞ্জন বালির মতো আরো বেশ কিছু কেস রয়েছে, তাতে স্পষ্ট বাংলাদেশ এবং ভারত যৌথভাবে এই কাজগুলো করেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশি নাগরিককে ভারতে পাঠিয়ে দিয়ে সেখানে আটক রাখা হতো। বা ভারত থেকে হ্যান্ডওভার করে দিত, পরে তাদের রাস্তায় মেরে ফেলা হতো। এই সব ঘটনা যারা দেখেছেন বা যুক্ত ছিলেন তাদের বক্তব্যে এ সব চলে এসেছে।
পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুমের তদন্ত শেষে এমন ভয়াবহ বর্ণনা দিয়েছেন গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের সদস্য নূর খান লিটন। সম্প্রতি তিনি একটি বেসরকারি টেলিভিশনে দেয়া সাক্ষাৎকারে এ সব তথ্য জানান।
এছাড়া সম্প্রতি প্রকাশিত কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, গুম শুধু বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়, বরং আন্তর্জাতিক চক্রান্তের অংশ। সুখরঞ্জন বালি ও বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদকে গুমের পর ভারতে স্থানান্তরের ঘটনা উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে। সুখরঞ্জন বালিকে সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে অপহরণের পর ভারতীয় কারগারে পাওয়া যায়। যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের কমিশনকে জানিয়েছেন, তাকে যে গোপন বন্দিশালায় রাখা হয়েছিল, সেই সেলের বাইরে কাউকে হিন্দিতে বলতে শুনেছেন, ‘তাকে কখন ধরা হয়েছে? তিনি কোনো তথ্য দিয়েছেন? এখন পর্যন্ত কী জিজ্ঞাসাবাদ হয়েছে?’
কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, র্যাবের গোয়েন্দা শাখার যারা অভিযানে সক্রিয় ছিল তারা জানিয়েছে, ভারত ও বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী বন্দিবিনিময় করত। বাংলাদেশের গুমের ঘটনা যে আন্তর্জাতিক ও সুসংগঠিত চক্রের অংশ এ সব ঘটনা তারই বহিঃপ্রকাশ। বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদকে ২০১৫ সালে রাজধানীর উত্তরা থেকে তুলে নেয়ার পর ভারতে পাওয়া এর উদাহরণ। তার অভিজ্ঞতা থেকে জানা গেছে, তাকে যে নির্জন স্থানে রাখা হয়েছিল সেখানে টিএফআই (টাস্ক ফোর্স অব ইন্টারোগেশন) লেখা কম্বল ছিল, সেই সময়ে র্যাব সদর দপ্তরের তত্ত্বাবধানে টিএফআই পরিচালিত হতো।
প্রতিবেদনে বলা হয়, তদন্ত কমিশন পরিদর্শনে নিশ্চিত হয়েছে র্যাবের গোয়েন্দা শাখা টিএফআইয়ে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করে। তবে বন্দিশালার ভেতরের অবকাঠামোতে পরিবর্তন আনা হয়েছে কিছুদিন আগে। সালাহউদ্দিন আহমেদ কমিশনকে জানিয়েছেন, তাকে ভারতীয় কর্মকর্তাদের কাছে তুলে দেয়া হয়েছিল। যে সন্দেহভাজন বাংলাদেশি কর্মকর্তা সেখানে ছিলেন, তিনি পরিচয় লুকাতে ‘যম টুপি’ পরা ছিলেন, যা দুই দেশের সরকারের উচ্চপর্যায়ের এবং নিরাপত্তা বাহিনীর যোগাযোগকে নির্দেশ করে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, একজন সৈনিক তদন্ত কমিশনকে জানিয়েছেন, তিনি ‘বন্দি বিনিময়ের’ সময়ে ২০১১ সালে দুই দফা তামাবিল সীমান্তে ছিলেন। দুই দফায় তিনজন ‘বন্দিকে’ আনা হয়। ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর সাদা পোশাকধারী সদস্যরা ছিলেন। দুজন ‘বন্দিকে’ রাস্তার পাশে হত্যা করা হয়। জীবিত আরেক বন্দিকে র্যাবের আরেকটি দলের কাছে তুলে দেয়া হয়। র্যাবও দুজন ‘বন্দিকে’ একই প্রক্রিয়ায় ভারতীয়দের কাছে তুলে দিয়েছিল। প্রতিবেদনে তদন্ত কমিশন সুপারিশ করেছে, বাংলাদেশি কেউ ভারতে গুম রয়েছে কী না তা পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সর্বোচ্চ জোর দিয়ে দেখতে পারে।
গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের সদস্য নূর খান লিটন বলেন, এই গুম শুধু র্যাব করেনি। সিটিটিসি করেছে, ডিজিএফআই করেছে, ডিবি করেছে। আমরা আমাদের একটি রিপোর্টে স্পষ্ট করে বলেছি, একটি বাহিনী গুম করত, তাকে আরেকটি বাহিনীর হাতে তুলে দিত। আবার তারা জিজ্ঞাসাবাদ করে আরেকটা বাহিনীর কাছে দিত। তারা হত্যা করতো বা দীর্ঘদিন আটকিয়ে রাখতো অথবা তাদের কাউকে কাউকে ভারতে পাঠিয়ে দিত।
