ইজতেমা মাঠ
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে
প্রকাশ : ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
জনসাধারণের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারির পর টঙ্গীতে ইজতেমা মাঠের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ইজতেমার মাঠ দখলকে কেন্দ্র করে জুবায়ের ও মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারীদের সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি। বর্তমানে ইজতেমা মাঠ ফাঁকা হয়ে গেছে। মাঠ এখন প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে সেখানে রয়েছেন জোবায়েরপন্থি ৫০০ মুসল্লি। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ইজতেমা মাঠ এলাকায় সরেজমিন দেখা যায়, মাঠের আশপাশে সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন পর্যাপ্তসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। তবে শামিয়ানা ও বাঁশের খুঁটি সরানোর কাজ করছেন কিছুসংখ্যক মানুষ। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপির) টঙ্গী জোনের উপকমিশনার এনএম নাসিরুদ্দিন বলেন, ‘ইজতেমা মাঠে দুই পক্ষের সংঘর্ষের পর মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে এবং মহানগর পুলিশ কমিশনার জারি করা গণবিজ্ঞপ্তির পর পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে অবস্থান নেওয়ায় সাদপন্থি মুসল্লিরা মাঠ ছেড়ে দেন। ময়দানের নিরাপত্তায় অতিরিক্ত পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বিজিবি ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন। এখন মাঠ পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দুই পক্ষের সভা শেষে মাঠে থাকা মালামাল পাহারা দেয়ার জন্য জোবায়ের অনুসারীদের ৫০০ লোক থাকার সিদ্ধান্ত হয়। তারা সে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মাঠে অবস্থান করছেন। তবে পুলিশের নির্দেশনা কার্যকর রয়েছে। মাঠ ও আশপাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা আছেন। বহিরাগত কাউকে মাঠে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। নির্দেশনা দেয়ার পর মুসল্লিরা মাঠ ছেড়ে চলে গেছেন। কিছুসংখ্যক মুসল্লি মাঠের খুঁটি ও শামিয়ানা সরানোর কাজ করছেন। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আগের মতোই নিরাপত্তাবলয় তৈরি করে রেখেছেন। দুই পক্ষের সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনায় এখনও কোনো মামলা হয়নি।’ গত বুধবার দুপুরে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) কমিশনার ড. নাজমুল করিম স্বাক্ষরিত গণবিজ্ঞপ্তি জারির পরে থেকে ইজতেমা মাঠে জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ হয়। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত ইজতেমা মাঠসহ আশপাশের তিন কিলোমিটার এলাকার মধ্যে দুই বা ততধিক ব্যক্তি একত্রে ঘোরাফেরা, জমায়েত বা মিছিল-সমাবেশ করতে পারবেন না। কোনও ধরনের অস্ত্রশস্ত্র, ছুরি, লাঠি, বিস্ফোরক দ্রব্য বা এ জাতীয় কোনো পদার্থ বহন করতে পারবেন না। কোনো প্রকার লাউডস্পিকার বা এ জাতীয় কোনো যন্ত্র দ্বারা উচ্চস্বরে শব্দ করতে পারবেন না। আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ফলে টঙ্গী স্টেশন রোড থেকে কামারপাড়া সড়কটি সর্বসাধারণ ও যানবাহন চলাচল আজও বন্ধ রাখা হয়েছে। মাঠে থাকা মুসল্লিরা বলেন, ‘আমরা মাঠের জিম্মাদার এবং মাওলানা জোবায়ের অনুসারী।’ মাওলানা সাদ অনুসারীরা মাঠ খালি করে দেওয়ার পর গতকাল রাতের বিভিন্ন সময় তারা ইজতেমা মাঠে এসেছেন। তাদের কেউ ঢাকা, কেউ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের তাবলিগ জামাতের সাথি। তাদের দাবি, তারা বড়দের নির্দেশনা অনুযায়ী মাঠে এসেছেন, মাঠের বিভিন্ন মালামাল পাহারা দিচ্ছেন। তারা বলেন, ‘আমরা বর্তমানে বিভিন্ন জামাতের মোট ৫০০ সাথি মাঠে অবস্থান করছি। বড়দের নির্দেশনা অনুযায়ী মালামাল পাহারা দিতে গতকাল রাতে মাঠে প্রবেশ করেছি।’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আগামীকাল শুক্রবার থেকে ইজতেমা মাঠে পাঁচ দিনের জোড় পালন করতে চেয়েছিলেন মাওলানা সাদের অনুসারী মুসল্লিরা। কিন্তু জোবায়ের অনুসারীরা তাদের মাঠে জোড় পালন করতে দেবেন না বলে জানান। এ নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে বিরোধ চলছিল। এর মধ্যে মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে মাঠ নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তবে মাওলানা সাদ অনুসারীদের গণমাধ্যম সমন্বয়ক সায়েম বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইজতেমা মাঠ প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে থাকার কথা। কিন্তু এর মধ্যেই সরকার তাদের (জোবায়েরপন্থি) মাঠ বুঝিয়ে দিয়েছে। পাহারার নামে ঠিকই তারা মাঠে অবস্থান করছেন। এটা বৈষম্য।’
