সুসংবাদ প্রতিদিন

তামাকের বিকল্পে স্কোয়াশ চাষ

প্রকাশ : ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  এএইচএম আরিফ, কুষ্টিয়া

স্কোয়াশ। সবজিটির আদি নিবাস উত্তর ইতালিতে। যা জুকিনি নামেও পরিচিত। দেখতে বড় শসার মতো হলেও খেতে অনেকটা কুমড়ার মতো। ভিটামিন এ, সি, ই ও ভিটামিন বি-৬ সমৃদ্ধ সবজি স্কোয়াশ। ভিনদেশি এ সবজিতে রয়েছে নানাবিধ উপকারী উপাদান। আমাদের দেশে এ সবজি এখনো তেমন একটা পরিচিত হয়ে ওঠেনি। দেশের বড় বড় শহরের সুপার শপ আর অভিজাত রেস্টুরেন্টগুলোতে সুস্বাদু এ সবজিটি ব্যবহার হয়ে থাকলেও গ্রামাঞ্চলে এর ব্যবহার খুব একটা চোখে পড়ে না। এটি কীভাবে খেতে হয়, এর পুষ্টিগুণ কী, এসব সম্পর্কেও তেমন একটা জানেন না গ্রামীণ জনপদের অনেক মানুষ। এক সময় অনেকটা শখের বসে অনেকে চাষাবাদ শুরু করলেও স্থানীয় কৃষি অফিস থেকে বিস্তারিত জেনে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলায় তামাক চাষের বিকল্প ফসল হিসেবে এবং সবজির দাম ভালো হওয়ায় অনেক তরুণ ও বেকার যুবক আধুনিক পদ্ধতিতে স্কোয়াশ চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। এ বছর দেশের আবহাওয়া ভালো হওয়ায় দেশে প্রচলিত প্রায় সব ধরনের শীতকালীন সবজির উৎপাদন বেড়েছে। স্কোয়াশ শীতকালীন সবজি হওয়ায় চাষের উপযোগী আমাদের দেশেও বাণিজ্যিকভাবে এ সবজির চাষাবাদ হচ্ছে। তবে স্থানীয় বাজারে এ সবজির চাহিদা কম থাকা এবং কৃষকদের সঙ্গে সরাসরি ক্রেতাদের যোগাযোগ না থাকায় অনেকটা লোকসান গুণছেন স্কোয়াশ চাষিরা। কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার সদরপুর এলাকার কৃষক হাসানুল হক। ইন্টারনেটের মাধ্যমে তার ফুপাতো ভাই এ সবজির চাষাবাদ সম্পর্কে জেনে গত বছর চাষ করে বেশ সাফল্য পেয়েছিলেন। তার দেখাদেখি হাসানুলও লেখাপড়ার পাশাপাশি স্কোয়াশ চাষ শুরু করেন। যোগাযোগ করেন মিরপুর উপজেলা কৃষি অফিসে। সেখান থেকে সবজি চাষ সম্পর্কে জেনে উদ্বুদ্ধ হয়ে তামাকের বিকল্প ফসল হিসেবে চাষ করেন স্কোয়াশ। করোনাকালে কলেজ বন্ধ থাকায় বাড়িতে অবসর সময় না কাটিয়ে তিনি ৫০ শতাংশ জমি বর্গা নিয়ে চাষ করেন এ নতুন সবজি। এলাকায় প্রথম এ সবজি চাষ শুরু করেছেন তিনি। অনেকে তাকে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন, আবার অনেক কৃষক ধিক্কারও দিয়েছেন। অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই বিদেশি এ সবজি চাষ শুরু করেন। আশার আলো জাগিয়ে এলাকায় তাক লাগিয়ে দিয়েছে তার স্কোয়াশ। অল্প সময়ে আশানুরূপ ফল পেয়েছেন তিনি।

তরুণ কৃষক হাসানুল হক বলেন, নিজে বাড়িতে জৈব সার উৎপাদন করে জমিতে প্রয়োগ করি। এতে আমার রাসায়নিক সার কম লাগার পাশাপাশি বেশ ভালো ফলন হয়। বীজ রোপণের মাত্র ৫৫ দিনেই আমার স্কোয়াশ গাছ থেকে প্রথম ফল সংগ্রহ করি। ৫০ শতাংশ জমিতে আমার জমি বর্গা, জমি প্রস্তুত, সার, মালচিং সব মিলিয়ে ৩০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। মোট দুই হাজার ৫০০ থেকে ৭০০ টাকার মতো গাছ রয়েছে। প্রতিটি গাছেই প্রচুর ফুল এবং ফল ধরেছে। প্রত্যেকটি গাছে চার-পাঁচটা করে স্কোয়াশ রয়েছে। দাম যদি ১৫-২০ টাকা কেজিও পেতাম, তাহলে দেড় থেকে দুই লাখ টাকার ওপরে স্কোয়াশ বিক্রি করতে পারতাম। তবে এ বছর কোনো সবজিরই দাম নেই। আর স্কোয়াশ তো নতুন সবজি। গ্রামের মানুষ অনেকেই কুমড়া মনে করে, নিতে চায় না। কীভাবে খেতে হয় তাও সঠিকভাবে জানে না। তাই স্থানীয় বাজারে এর চাহিদা অনেক কম। এ পর্যন্ত মাত্র ১০-১২ হাজার টাকার স্কোয়াশ বিক্রি করেছি। হাসানুল বলেন, বর্তমানে দাম নেই বললেই চলে। সর্বশেষ দুই দিন আগে স্কোয়াশ বাজারে বিক্রি করেছি কেজিতে না, দেড় থেকে দুই কেজি ওজনের স্কোয়াশ পিস হিসেবে পাইকারি চার-পাঁচ টাকা করে। এমন দাম হলে সবজি চাষাবাদ কমে যাবে। উৎপাদিত সবজি কেনার ব্যবস্থা করা হলে স্কোয়াশ চাষ আরো বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাদ্দাম হোসেন জানান, স্কোয়াশ একটি বিদেশি সবজি। তবে আমাদের অঞ্চলের আবহাওয়া স্কোয়াশ চাষের জন্য উপযোগী। আমরা এ নতুন সবজি চাষ সম্প্রসারণের চেষ্টা করছি। কৃষকদের এসব লাভজনক ফসল উৎপাদনে পরামর্শ দিয়ে উদ্বুদ্ধ করছি।

মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, স্কোয়াশ সবজি হিসেবে খুবই সুস্বাদু এবং পুষ্টিসমৃদ্ধ। এছাড়া এটি খুবই কম সময়ের ফসল। গতবছর মিরপুর উপজেলার কয়েকজন কৃষক স্কোয়াশ চাষ করে বেশ ভালো সাফল্য পেয়েছিলেন। এ বছরও কয়েকজন কৃষক স্কোয়াশ চাষ করেছেন। আমরা তাদের আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতিতে নিরাপদ সবজি উৎপাদনে সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিচ্ছি।

জেলা বাজার কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম বলেন, আমরা নিয়মিত বাজার মনিটর করছি। যেসব সবজির স্থানীয় বাজারে চাহিদা কম বা দাম কম, জেলার বাইরে কোথাও যদি সেটির দাম ভালো হয়, আমরা সেখানে পাঠানোর ব্যবস্থা করছি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) রঞ্জন কুমার প্রামাণিক জানান, আমরা লাভজনক এবং নিরাপদ সবজি উৎপাদনে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি। কৃষিটাকে বাণিজ্যিক এবং লাভজনক করার চেষ্টা করছি। স্কোয়াশ বিদেশি সবজি হলেও আমাদের অঞ্চলে এটির প্রসার ঘটানো সম্ভব।