কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগ
ন্যাড়া পাহাড়ে সবুজের সমারোহ
প্রকাশ : ২৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
এএইচ সেলিম উল্লাহ, কক্সবাজার

কক্সবাজারের রামুর জোয়ারিয়ানালার এককালের বিরানভূমিতে পরিণত হওয়া পাহাড়গুলো ঢেকে গেছে সবুজে-সমারোহে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য সৃষ্টি ও খাদ্য সংকটে থাকা হাতির সঙ্গে মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনে গড়ে তোলা হচ্ছে বনায়ন। ইতিমধ্যে বনের সুফল পাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও বন্যপ্রাণী। কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগ সূত্র বলছে, সরকারের টেকসই বন ও জীবিকা (সুফল) প্রকল্পের আওতায় গত বর্ষা মৌসুমে রামুর জোয়রিয়ানারা রেঞ্জে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে উখিয়ারঘোনায় ২১২ হেক্টর, দোয়ালের ঝিরিতে ১৫০ হেক্টর এবং ব্যাংডেবার টিটিলাঘাটে ১৫০ হেক্টরসহ মোট ৫১২ হেক্টর বনভূমিতে দ্রুত বর্ধনশীল ১২ লাখ ৮০ হাজার চারা লাগানো হয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা। রোপিত চারা গাছের মধ্যে রয়েছে- চিকরাশি, শিমুল তুলা, কদম, আমলকি, অর্জুন, কাঞ্জলভাদি বকাইন, দাদমর্দন, ওলটকম্বল, কৃষ্ণচূড়া, গামার ও কাঠ বাদাম। বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে চারাগাছগুলো বড় হলে পাহাড়ি এলাকাগুলোর পরিবেশ বদলে যাওয়ার পাশাপাশি বননির্ভর জনগোষ্ঠীর ওপর চাপ কমবে। এরই মধ্যে এই বনায়নকে কেন্দ্র করে হাজারের অধিক দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এককালে রামুর জোয়ারিয়ানালার এই প্রাকৃতিক বনে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ ও বন্যপ্রাণীতে ভরপুর ছিল। কিন্তু বনখেকোদের আধিপত্যের কারণে কয়েক বছরের ব্যবধানে বনভূমি উজাড়, বিলুপ্ত হয়ে যায় বন্যপ্রাণী। এমনকি খাদ্য সংকটে পড়ে লোকালয়ে হাতি ঢুকে পড়ায় ঘটে প্রাণহানির মতো ঘটনা।
সম্প্রতি সরজমিনে দেখা যায়, রোপিত চারাগুলো অত্যন্ত সতেজ ও সবুজ। আলাপকালে স্থানীয়রা জানায়, পাহাড়গুলোতে বাগান সৃজন তৈরি করায় অনেকের কর্মসংস্থান হয়েছে। তাদের প্রতিদিন কাজের জন্য অন্য কোথাও যেতে হচ্ছে না। বাগান সৃজন কাজে নিয়োজিত মাঝি নজির হোসেন, আবু তাহের ও ফরিদ মিয়া জানান, তারাসহ অন্যরা নিজ এলাকায় নার্সারী ও বাগান সৃজন কাজে সুযোগ পাচ্ছেন। যার কারণে সুফল পাচ্ছেন তারা।
স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল কবির বলেন, ‘পাহাড়ে রোপিত চারাগুলো দূর থেকে দেখলে মনে হয় সবুজ অট্টালিকা। অথচ, এই পাহাড়গুলো বিগত সময় অযত্ন, অবহেলায় বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছিল।’
সুফলভোগী আবদুল মোনাফ বলেন, ‘বিগত সময়ে অতিরিক্ত গাছকাটা ও বন উজাড়ের কারণে ৩০ বছর ধরে এই বনভূমি অনাবাদি ছিল। এই বনভূমিতে নতুনভাবে বনায়ন তৈরী হওয়ায় আমরা উপকৃত হচ্ছি।’
জোয়ারিয়ানালা বিটের হেডম্যান বশির আহমদ জানান, সুফল প্রকল্পের নার্সারী ও বনায়ন কাজ চলমান থাকায় স্থানীয় নারী-পুরুষ ব্যাপক উপকৃত হচ্ছেন।
জোয়ারিয়ানালা রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা কেএম কবির উদ্দিন জানান, বনায়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নে শতভাগ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হয়েছে। জিপিএস ম্যাপের সাহায্যে বাগানের সীমানা নির্ধারন করা হয়েছে। যা বিভাগীয়ভাবে একাধিকবার পরিমাপ করে বাগানের পরিমাণ নিশ্চিত করা হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘ভবিষ্যতে সৃজিত বাগানের চারা গাছগুলো সফল বনে পরিনত হবে। পরিবেশ-প্রতিবেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সুফল প্রকল্পের আওতায় ২১০ জন সুফলভোগীকে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ৮০ লাখ টাকা ঋন প্রদান করা হয়েছে। এই টাকা দিয়ে তারা পশু পালন ও কৃষি চাষ করে সাবলম্বী হচ্ছেন। ৭২৬টি ট্রেডে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।’