প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতার প্রাতিষ্ঠানিকীকরণে স্বতন্ত্র প্রসিকিউশন সার্ভিস গঠন এবং সুপ্রিমকোর্ট সচিবালয় স্থাপনের বিকল্প নেই। গতকাল সুপ্রিমকোর্ট ও ইউএনডিপির যৌথ উদ্যোগে রাজশাহীর গ্র্যান্ড রিভার ভিউ হোটেলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণসহ বিচারসেবা প্রদানে দক্ষতা বৃদ্ধিতে করণীয় শীর্ষক সেমিনারে প্রধান বিচারপতি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মাননীয় বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম।
সেমিনারে রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলায় কর্মরত বিভিন্ন পর্যায়ের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। প্রধান বিচারপতি তার ভাষণে ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন নিশ্চিতকরণে বিচার বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন এবং তার ঘোষিত বিচার বিভাগ সংস্কারের রোডম্যাপ বাস্তবায়নের অগ্রগতির বিবরণ তুলে ধরেন।
বিশেষ করে তিনি সম্প্রতি উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগে জারিকৃত অধ্যাদেশের কথা তুলে ধরেন। এর পাশাপাশি তিনি একটি স্বাধীন প্রসিকিউশন সার্ভিস চালু করা এবং সুপ্রিমকোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করেন। প্রধান বিচারপতি উল্লেখ করেন, দুর্বল তদন্ত ও অপেশাদার প্রসিকিউশন বাংলাদেশে ন্যায়বিচারের অন্যতম অন্তরায়। তিনি প্রসিকিউটরদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বৃদ্ধির উপর গুরুত্ব প্রদান করেন, যাতে তারা ন্যায়বিচার রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেন। প্রধান বিচারপতি সুপ্রিমকোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠার বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করেন। প্রধান বিচারপতি বলেন, পৃথক সচিবালয় বিচার বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতা ও স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে। তিনি বলেন, প্রস্তাবিত সুপ্রিমকোর্ট সচিবালয় বিচারিক নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ ও অবকাঠামো উন্নয়ন এবং বিচারকদের বদলি ও পদোন্নতিতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে। তিনি বলেন, এরই মধ্যে সরকারের নিকট পৃথক সচিবালয় গঠনের জন্য একটি বিশদ প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছে এবং বর্তমানে এটি সক্রিয় বিবেচনাধীন রয়েছে।
তিনি বাংলাদেশে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি আধুনিক বিচারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে তার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। সেমিনারে স্বাগত বক্তব্যে ইউএনডিপির বাংলাদেশ প্রতিনিধি স্টেফান লিলার দেশের বিচার বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক স্বতন্ত্রীকরণে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ঘোষিত বিচার বিভাগ সংস্কারের রোডম্যাপ একটি যুগোপযোগী পদক্ষেপ মর্মে মন্তব্য করেন এবং উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে বাংলাদেশের বিভাগের জন্য ঐতিহাসিক এই মুহূর্তে বিচার বিভাগের আধুনিকায়নে উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে পাশে থাকার আশ্বাস প্রদান করেন।
সেমিনারে বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম প্রধান বিচারপতি কর্তৃক ঘোষিত বিচার বিভাগ সংস্কার রূপরেখা বাস্তবায়নে আইনি সংস্কারের উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি প্রধান বিচারপতি ঘোষিত রোডম্যাপের পরিপূর্ণ বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের বিচারপ্রার্থীগণ বিচার বিভাগের পৃথকীকরণের সুফল ভোগ করতে সক্ষম হবে মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।