নওগাঁয় ৩ কোটি টাকার মধু সংগ্রহ

প্রকাশ : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আব্বাস আলী, নওগাঁ

সরিষার ফুলে ফুলে ভরে আছে নওগাঁর বিস্তীর্ণ প্রান্তর। হলুদ ফুলে সেজেছে মাঠের পর মাঠ। যতদুর চোখ যায় শুধু হলুদ আর হলুদ রঙে মাখামাখি। প্রতি বছর শীতের এই সময়ে সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহে ছুটে আসেন বিভিন্ন জেলার মৌ-খামারিরা। সরিষার খেতকে কাজে লাগিয়ে মৌবাক্স স্থাপন করে কৃত্রিম পদ্ধতিতে মধু সংগ্রহ করছেন মৌ-খামারিরা। এতে একদিকে যেমন ফুলে পরাগায়নে সরিষার আবাদ বাড়ছে অপরদিকে মধু সংগ্রহ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন মৌচাষিরা। এবছর সরিষা ফুল থেকে প্রায় ৩ কোটি টাকার মধু সংগ্রহ হবে। বিভিন্ন মাঠে মাঠে এখন হলুদের সমারোহ। জেলার ১১টি উপহেলার মধ্যে ৯টি উপজেলায় সরিষা চাষ হয়েছে।

এবারও রাজশাহী, দিনাজপুর ও নাটোর জেলা থেকে ৮১ জন মৌ-খামারি এসেছে। তারা সরিষাক্ষেতের পাশে মৌবাক্স স্থাপন করে কৃত্রিম পদ্ধিতে মধু সংগ্রহ করছেন। মৌসুমে অন্তত ৬-৮ বার মধু সংগ্রহ হবে। খাটি মধু পেতে ভিড় করছেন ক্রেতারাও। রাজশাহীর মোহনপুর থানার দর্শনপাড়া গ্রামের মৌচাষী রুমিনুল ইসলাম রুস্তম। তিনি এবছর নওগাঁর মান্দা উপজেলার সোনাপুর গ্রামে ১০০টি মৌবাক্স দিয়ে সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করছেন। এরই মধ্যে প্রায় ১০ লাখ টাকা মধু সংগ্রহ করেছেন। আরো প্রায় ৫ লাখ টাকার মধু সংগ্রহের আশা।

মৌচাষী রুমিনুল ইসলাম রুস্তম বলেন- গত বছর আবহাওয়া খারাপ থাকায় সরিষা ফুল থেকে প্রায় ১০ লাখ টাকার মধু সংগ্রহ হয়েছিল। এ বছর সরিষা ১০০টি বাক্স দিয়ে মধু সংগ্রহ করছি। পাইকারিতে প্রতিকেজি মধু কেজি ২৫০-৩০০ টাকা এবং খুচরা পর্যায়ে ৪০০ টাকা কেজি। এ পর্যন্ত প্রায় ১০ লাখ টাকার সংগ্রহ করতে পেরেছি। এ বছর আবহাওয়া ভালো আছে। আরো প্রায় ৫ লাখ টাকার মধু সংগ্রহ হবে। এছাড়াও মৌমাছি বিক্রি হয়েছে ১ লাখ টাকা। মধু সংগ্রহে যাতায়াত, থাকাণ্ডখাওয়া ও আনুষঙ্গিক মিলিয়ে প্রায় দেড় লাখ টাকা খরচ হবে। এসব মধু বিভিন্ন কোম্পানির কাছে এবং খুচরা বিক্রি করা হয়। জামালপুর থেকে আসা মৌচাষি নুরুল আমিন বলেন- ৬০টি মৌবাক্স দিয়ে মধু সংগ্রহ করছি। দুইবার সংগ্রহ করে ১০ মণ মধু পেয়েছি।

প্রতিমণ মধু পাইকারিতে ১০ হাজার মণ বিক্রি করছি। এ বছর আবহাওয়া ভালো থাকায় মধুর উৎপাদন বেশি হচ্ছে। কারণ কুয়াশার পরিমাণ বেশি হলে মধুতে পানি বেশি হয়। এবার তা হয়নি। উন্নত মানের মধু পাওয়া যাচ্ছে। মৌ-খামারে কাজ করে বাড়তি আয় করছেন শ্রমিকরা। এ মৌসুমে অন্তত ২০০ জন শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে। সোহেল নামে এক মৌশ্রমিক বলেন, সবাই মৌ খামারে কাজ করতে পারে না। অসাবধান হলেই মৌমাছি হুল ফুটিয়ে দেয়। খামারে কাজ করে অভিজ্ঞা হওয়ায় তেমন সমস্যা হয়না। এ মৌসুমে খামারে কাজ করে প্রায় ১০ হাজার টাকা আয় করার আশা। শাহজান নামে এক ক্রেতা বলেন- বাড়ির কাছে জমির পাশ থেকে মধু সংগ্রহ করছে খামারিরা। চোখের সামনে মৌবাক্স থেকে মধু সংগ্রহ করছে। ৩০০ টাকায় এক কেজি মধু কিনেছি। খাটি মধুতো সবসময় পাওয়া যায় না। আবার পাওয়া গেলেও দাম বেশি।

নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন- মৌমাছির মাধ্যমে যে পরাগায়ন হয়ে থাকে তাতে ১০-১৫ শতাংশ সরিষা ফলন বেশি হয়ে থাকে। সরিষার ফলন বৃদ্ধির পাশাপাশি মধু একটি সাথি ফসল হিসেবে পাওয়া যায়। এ বছর জেলায় ৮১ জন মৌ-খামারি প্রায় ৮ হাজার ৪৭৫টি মৌ-বাক্স দিয়ে মধু সংগ্রহ করছে। মধু সংগ্রহ করে বাড়তি আয় করছে মৌসুমি মৌ-খামারিরা। যা জীবিকার একটি মাধ্যম বলা যায়। এ বছর প্রায় ১ লাখ কেজির অধিক মধু সংগ্রহ হবে। যার বাজার মুল্য প্রায় ৩ কোটি টাকা। এছাড়া সরিষা জমির পাশে মৌবাক্স স্থাপনে যেন কোন বাঁধা না আসে এজন্য কৃষকদের সচেতন করা হচ্ছে।