চাপ কমছে চট্টগ্রাম বন্দরে
এখন মোট ৫০ ধরনের পণ্য ডিপোর মাধ্যমে নিতে পারবেন আমদানিকারকরা। এতে বন্দরের ওপর চাপ কিছুটা হলেও কমবে
প্রকাশ : ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
তামীম রহমান, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম বন্দর হারহামেশাই পণ্য লোড আনলোডিং নিয়ে ব্যস্ত। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন কনটেইনার ভিড়ছে বন্দরের জেটিতে। সেগুলো আনলোড করতে না করতেই আবার নতুন কনটেইনার এসে হাজির। এভাবেই চক্রাকারে পণ্য লোড আনলোডের প্রক্রিয়া চলামন আছে। কখনও কখনও কনটেইনার বেশি হয়ে গেলে সেগুলো খালাসে বেগ পেতে হয় বন্দর কর্তৃপক্ষকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, কনটেইনার ডেলিভারির কাজটি পুরোপুরি বাইরে নিয়ে যেতে চায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এজন্য এনবিআর কাছে অনুমতি চাওয়া হয়েছে। তবে আশার কথা হচ্ছে নতুন করে আরও ১২ ধরনের আমদানি পণ্য বেসরকারি ডিপো থেকে ডেলিভারির অনুমতি দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এতদিন ৩৮টি আমদানিপণ্য চট্টগ্রাম বন্দরের পরিবর্তে আশপাশে গড়ে ওঠা ১৯টি বেসরকারি ডিপো থেকে নেওয়া যেত। এখন মোট ৫০ ধরনের পণ্য ডিপোর মাধ্যমে নিতে পারবেন আমদানিকারকরা। এতে বন্দরের ওপর চাপ কিছুটা হলেও কমবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে ডিপো মালিকরা বলছেন, এনবিআরের অনুমতি পেলে তারা শতভাগ আমদানি পণ্যই হ্যান্ডলিং করতে প্রস্তুত। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, কনটেইনার ডেলিভারির কাজটি পুরোপুরি বাইরে নিয়ে যেতে চায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এজন্য এনবিআরের কাছে অনুমতিও চাওয়া হয়েছে। সর্বশেষ গত ১৮ মার্চ আমদানিকৃত সব পণ্যের এফসিএল (ফুল লোডেড) কনটেইনার অফডকে স্থানান্তরের অনুমতি দিতে এনবিআর চেয়ারম্যান বরবার চিঠি দেয় বন্দর। পরবর্তীতে গত ৮ এপ্রিল আগের ৩৮টির সঙ্গে নতুন করে আরও ১২টি পণ্যের ডিপোতে স্থানান্তর, আনস্টাফিং ও ডেলিভারির অনুমতি দেয় এনবিআর। চটগ্রাম বন্দর ও কাস্টমস হাউসের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ১২ পণ্যের মধ্যে রয়েছে- স্ট্যাপল ফাইবার, ক্যালসিয়াম কানর্বনেট, হুইট ব্রান, কুইক লাইম, পলিস্টাইরিন, প্লুটিং পেপার, ক্যালসিয়াম ফসফেট, এসবেসটস, মিথনাইন, গ্লিসারল, আনরাট অ্যালুমিনিয়াম ও সিনামন। বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোস অ্যাসেসিয়েশন (বিকডা) সচিব রুহুল আমিন শিকদার বলেন, নতুন ১২ পণ্য যুক্ত হওয়ায় প্রতি বছর ৫০ হাজার টিইইউএস (২০ ফুট সমমান) আমদানি কনটেইনার ডিপোতে যাবে। অর্থাৎ বন্দরের ওপর চাপ কিছুটা কমবে। কিন্তু আমরা চাই শতভাগ আমদানি পণ্য হ্যান্ডলিং করতে। সেই প্রস্তুতিও আমাদের আছে। সক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে। আগের ১৯টি বেসরকারি ডিপোর সঙ্গে নতুন দুটি যুক্ত হয়ে বর্তমানে ২১টিতে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া আরও একটি ডিপো পাইপলাইনে আছে। বছরে ২৩ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিং করে ডিপোগুলো। এর মধ্যে আমদানি কনটেইনার তিন লাখ, রপ্তানি সাত লাখ ও খালি কনটেইনার ১৩ লাখ। সূত্র মতে, স্বাভাবিক অবস্থায় বন্দরের ইয়ার্ডে ৩০-৩২ হাজার কনটেইনার থাকে। কিন্তু ঈদের ছুটি ও হরতাল-ধর্মঘটে ডেলিভারি কমে গেলে তা বেড়ে অনেক সময় জট তৈরি হয়। এতে কমে যায় গতিশীলতা। গত ঈদুল ফিতরের ছুটিতেও কনটেইনার বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৪৪ হাজার টিইইউএস। তবে ছুটি শেষে ডেলিভারি বাড়লে তা কমে আসতে থাকে। বর্তমানে কিছু কনটেইনার সরাসরি আমদানিকারকের চত্বরে ও কিছু বেসরকারি ডিপোগুলোতে চলে যায়। বাকি কনটেইনার বন্দরের ভেতরে খুলে (আনস্টাফিং) ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানবোঝাই করে নিয়ে যান আমদানিকারকরা। এতে প্রচুর পরিমাণ পণ্য ইয়ার্ড ও শেডে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। অনেক জায়গার প্রয়োজন হয়। অপরদিকে প্রতিদিন বন্দরের ভেতরে প্রবেশ করে ৪-৫ হাজার পণ্যবাহী গাড়ি। প্রতিটি গড়িতে চালক ও হেলপারসহ দুজন করে কর্মী ধরলেও ৮-১০ হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। এতে তৈরি হয় বিশৃঙ্খল পরিবেশ। পৃথিবীর কোনো উন্নত বন্দরে এভাবে কনটেইনার খুলে পণ্য ডেলিভারি দেওয়া হয় না। উন্নত বন্দরগুলোতে জাহাজ থেকে খালাসের পরপরই কনটেইনার সরাসরি চলে যায় আমদানিকারকের কাছে। প্রসঙ্গত, দেশে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ৯২ শতাংশ চট্টগ্রাম বন্দরকে ঘিরে সমুদ্রপথে পরিচালিত হয়। এ কারণে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের আমদানি-রপ্তানি পরিস্থিতি দেশের সামগ্রিক বাণিজ্যের চিত্র প্রকাশ করে। বাংলাদেশের সমস্ত সমুদ্রবন্দর দিয়ে পরিবহন করা পণ্যবাহী কনটেইনারগুলোর প্রায় ৯৮ শতাংশ এ সমুদ্রবন্দর দিয়ে পরিবহন করা হয়। চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে ধারণক্ষমতা ৫৩ হাজার ৫১৮ টিইইউএস (২০ ফুট দৈর্ঘ্যের একক কনটেইনার)। এখন বন্দরে কনটেইনার জট নেই বললে চলে। স্বাভাবিক রয়েছে। তবে চট্টগ্রাম বন্দরের হ্যান্ডলিং করা কনটেইনারের ৯৫ শতাংশই ফুল কনটেইনার লোড (এফসিএল)। এর মধ্যে ৬৬ শতাংশ আমদানি পণ্যবাহী এফসিএল কনটেইনার বন্দরের ইয়ার্ডে খুলে ডেলিভারি দেওয়া হয়। আর ১৭ শতাংশ পণ্য ডেলিভারি দেওয়া হয় বেসরকারি কনটেইনার ডিপো থেকে, ২০ শতাংশ সরাসরি চলে যায় শিল্প মালিকের কারখানায়। ৩ থেকে ৪ শতাংশ যায় রেলপথে।
