সবজির বাজারে স্বস্তি ফিরছে ডিম-মাংসের বাজার অস্থির
প্রকাশ : ১৭ মে ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

রমজান মাস শেষ হওয়ার পর থেকেই বাড়ছিল সব ধরনের সবজির দাম। চড়া দামে সবজি কিনতে কিনতে ভোক্তাদের নাভিশ্বাস উঠছিল। অবশেষে গ্রীষ্মকালীন সবজির সরবরাহ বাড়ায় বাজারে তার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। গত কয়েক সপ্তাহের তুলনায় বাজারে সবজির দাম নিম্নমুখী। বিভিন্ন সবজি প্রতি কেজিতে প্রায় ১০-২০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। আগের তুলনায় কম দামেই মিলছে ব্রয়লারসহ সবধরনের মুরগি। মাছের বাজার স্থিতিশীল থাকলেও সপ্তাহের ব্যবধানে ডিমের দাম ডজনে প্রায় ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। বেড়েছে গরুর মাংসের দামও। এ ছাড়া বোরো মৌসুম শুরু হওয়ায় কিছুটা কমে বিক্রি হচ্ছে বাজারে নতুন আসা মিনিকেট।
সাপ্তাহিক ছুটির দিন গতকাল শুক্রবার সকালে রাজধানী বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। এদিন সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচা বাজারে গিয়ে দেখা গেছে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকায়, বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়, শসা ৬০ টাকা, করলা ৫০ টাকা, মুলা ৫০ টাকা, বেগুন (লম্বা) ৭০ টাকা, বেগুন (গোল) ৮০ টাকা, পটোল ৬০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৫০ টাকা, টমেটো ৬০ টাকা, কাঁকরোল প্রতি কেজি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বাজারে প্রতি কেজি ধন্দুল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়, চিচিঙ্গা ৫০ টাকা, ঝিঙা ৬০ টাকা, জালি প্রতি পিস ৫০ টাকা, কলা প্রতি হালি ৫০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৪০ টাকা, কঁচুর লতি প্রতি কেজি ৬০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ৭০ টাকা এবং কাঁচামরিচ প্রতি কেজি ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ী আমির হোসেন বলেন, গত কয়েক সপ্তাহের তুলনায় আজকের বাজারে সবজির দাম কিছুটা কম। রোজার ঈদের পর সবজির দাম খুব বাড়তি হয়ে গিয়েছিল, বাজারে সে সময় ৮০ টাকা ১০০ টাকার নিচে বলতে গেলে সবজিই ছিল না। সে তুলনায় আজ বাজার কিছুটা কম। ৫০ থেকে ৬০ টাকার ঘরে বাজারের সবজিগুলো আজ পাওয়া যাচ্ছে। তবে দুই একটি সবজি এখনও ৮০ টাকা, ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পেঁয়াজের দাম কিছুটা বেড়েছে। প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কেজিতে দাম বেড়েছে ৫ টাকা। এ ছাড়া প্রতি কেজি দেশি রসুন ১৪০ টাকা, আমদানি করা রসুন ২২০-২৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে ঊর্ধ্বমুখী দেখা গেছে ডিমের বাজার। প্রতি ডজনে ১০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়ে প্রতি ডজন লাল ডিম ১৩০-১৪০ টাকা ও সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২০-১২৫ টাকায়। আর প্রতি ডজন হাঁসের ডিম ১৮০-২০০ টাকা ও দেশি মুরগির ডিম ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সে তুলনায় পাড়া মহল্লার দোকানগুলোতে ডজন প্রতি আরও ৫-১০ টাকা বেশি গুনতে হচ্ছে। বিক্রেতারা বলছেন, গরমে ডিম নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে সরবরাহ কমায় দাম বাড়ছে।
এদিকে সপ্তাহ ব্যবধানে বাজারে কমেছে সব ধরনের মুরগির দাম। কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত কমে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর কেজিতে ২০ টাকা কমে প্রতিকেজি সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৬০ টাকায়। এছাড়াও আজকের বাজারে দেশি মুরগি ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৬০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ২৬০ টাকায়। আর জাতভেদে প্রতি পিস হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায়। বিক্রেতারা বলছেন, দুই সপ্তাহ আগেও ব্রয়লার মুরগি ১৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। আর মাসখানেক আগে বিক্রি হয়েছে ২০০ থেকে ২২০ টাকায়। তবে হঠাৎ করেই গত কিছুদিন ধরে অস্বাভাবিকভাবে সেই দাম ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায় নেমে এসেছে। অনেকটা যেন ‘পানির দামেই’ মুরগি বিক্রি হচ্ছে। তাই ক্রেতাদের ভিড়ও বেশি। অনেকেই বেশি পরিমাণে কিনে ফ্রিজে সংরক্ষণ করে রাখছেন।
মুরগির দাম কমলেও বাজারে আগের মতোই চড়া রয়েছে গরু ও খাসির মাংসের দাম। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায়। এছাড়া প্রতি কেজি খাসির মাংস ১ হাজার ২৫০ টাকা ও ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১০০ টাকায়।
মাংসের দাম বাড়লেও মাছের দামও অনেকটা স্থিতিশীল রয়েছে। বাজারে প্রতি কেজি রুই ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, কাতল ৩৪০ থেকে ৪০০ টাকা, চিংড়ি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, টেংরা ৬০০-৭০০ টাকা, চাষের শিং ৫০০ টাকা, চাষের মাগুর ৫০০ টাকা, চাষের কৈ ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, কোরাল ৭৫০ টাকা, চাষের পাঙাশ ১৮০ থেকে ২২০ টাকা ও তেলাপিয়া ১৫০ থেকে ২২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি কেজি বোয়াল ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, পোয়া ৪০০ টাকা, আইড় ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, দেশি কৈ ৮০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা ও দেশি শিং ১০০০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রেজাই রাব্বী নামের এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী বলেন, বাজারে এসেছিলাম মাংস নিতে। গরুর মাংসের দাম বাড়তি এবং সেই তুলনায় মুরগির দাম বেশ কম থাকায় মুরগির মাংসই নিয়েছি। গরুর তুলনায় বাচ্চারাও মুরগির মাংসই বেশি পছন্দ করে। তিনি বলেন, কিছুদিন পরই ঈদ আসছে, তাই একটু বেশি করে কিনে নিয়েছি। আমার মতো আরও অনেকেই নিচ্ছে। বলা তো যায় না, ঈদ উপলক্ষ্যে হয়তো আবারও দাম বেড়ে যাবে।
সংবাদমাধ্যমকর্মী তসলিম উদ্দিন বলেন, এক কেজি গরুর মাংস নিয়েছি ৮০০ টাকায়। দাম কিছুটা বেশিই মনে হচ্ছে। কিন্তু কিছু তো করার নেই। দামাদামি করারও কোনো সুযোগ নেই। ব্যবসায়ীদের ভাবখানা এমন যে নিলে নেন, না নিলে বিদায় হোন।
তিনি বলেন, গত ঈদের পর থেকে বাজারে মাছের দামটাও একটু বেশি। তবে অন্যদিনের তুলনায় আজ একটু কম মনে হয়েছে। আবার ব্রয়লার মুরগির দামও দেখলাম দাম অনেকটা কম। মাংস বিক্রেতারা বলছেন, কোরবানির বাজারে ভালো দামের আশায় সারা দেশের মানুষ এখন গরু বিক্রি কমিয়ে দিয়েছেন, যারাও বিক্রি করছেন তাদের কাছ থেকে বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে। পুরনো চালের দাম উচ্চমূল্যে স্থিতিশীল থাকলেও বাজারে নতুন আসা মিনিকেট চাল তুলনামূলক কম দামে বিক্রি হচ্ছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে খুচরা দোকানে ডায়মন্ড, মঞ্জুর, সাগর ও রসিদ প্রভৃতি ব্র্যান্ডের নতুন মিনিকেট চাল ৭৫ থেকে ৭৬ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। মিনিকেটের মধ্যে মোজাম্মেল ব্র্যান্ডের চালের দাম অবশ্য আরেকটু বেশি। প্রতি কেজি মোজাম্মেল চাল এখন ৮২-৮৪ টাকায় বিক্রি হয়। মাসখানেক আগে এই চালের কেজি ১০০ টাকার আশপাশে ছিল। অন্যান্য চালের মধ্যে মানভেদে নাজিরশাইল ৮০ থেকে ৯০ টাকা, ব্রি-২৮ ও ব্রি-২৯ চাল ৫৮ টাকা ও স্বর্ণা ৫৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। বাসমতি চালের দামও আগের তুলনায় কেজিতে ১০ টাকা কমে ৯৫ টাকার আশপাশে বিক্রি হচ্ছে।