উত্তাল বঙ্গোপসাগর, বিচ্ছিন্ন সেন্টমার্টিন
প্রকাশ : ২৮ জুলাই ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
কক্সবাজার অফিস

বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ ও অমাবস্যার কারণে সাগর উত্তাল থাকায় টানা চার দিন ধরে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন রুটে ট্রলারসহ সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপটিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে অস্বাভাবিক জোয়ার। স্বাভাবিকের চেয়ে ১ থেকে ৩ ফুট উঁচু জোয়ারের পানিতে দ্বীপের বিভিন্ন এলাকার শতাধিক ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। এতে দ্বীপের ১০ হাজারের বেশি বাসিন্দার মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফয়জুল ইসলাম বলেন, অমাবস্যার কারণে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উচ্চতায় প্লাবিত হচ্ছে। এতে দ্বীপের বেশ কয়েকটি এলাকায় ঘরবাড়িতে নোনা পানি ঢুকে পড়েছে। তিনি বলেন, ‘শক্তিশালী ঢেউয়ের আঘাতে দ্বীপের বিভিন্ন জায়গায় ভাঙন শুরু হয়েছে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ভাঙন আরও বাড়বে।’
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, উত্তর বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের কারণে সাগর উত্তাল রয়েছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্রবন্দরগুলোর ওপর দিয়ে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ (তিন) নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
স্থানীয় বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান বলেন, নৌযান চলাচল বন্ধ থাকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুত ফুরিয়ে আসছে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘দ্রুত টেকনাফ থেকে খাদ্যপণ্য না পৌঁছালে তীব্র সংকট দেখা দেবে। আমরা দ্বীপবাসীর কথা চিন্তা করে জরুরি ভিত্তিতে সি-ট্রাক ও সি-অ্যাম্বুলেন্স চালুর দাবি জানাচ্ছি।’
এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দীন বলেন, ‘বৈরী আবহাওয়ার কারণে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে নৌযান চলাচল পুনরায় শুরু হবে।’
এদিকে সাগরে ঝড়ের মুখে পড়ে ট্রলারসহ কক্সবাজারের টেকনাফের সেন্ট মার্টিনে আশ্রয় নেওয়া ২০ রোহিঙ্গা নাগরিককে ফেরত পাঠানো যায়নি। সাগর উত্তাল থাকায় তাঁদের ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন বিজিবির কর্মকর্তারা। গত শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে ট্রলারটি সেন্ট মার্টিনের উত্তর সৈকতের তীরে ভেড়ে। ট্রলারে থাকা রোহিঙ্গাদের মধ্যে ১৬ জন পুরুষ, ৩ জন নারী ও একজন শিশু রয়েছে। তাঁদের মধ্যে পাঁচজন একই পরিবারের সদস্য।
সীমান্ত-সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির সংঘাত শুরু হয়। টানা ১১ মাসের যুদ্ধের পর ওই বছরের ৮ ডিসেম্বর মংডুসহ রাখাইনের প্রায় ৮০ শতাংশ এলাকা আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। এর ফলে গত ১৮ মাসে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে নতুন করে প্রায় দেড় লাখ রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর।
