রাশিয়ায় ৮.৮ মাত্রার ভূমিকম্প সুনামি আতঙ্ক ৫২ দেশ-অঞ্চলে
প্রকাশ : ৩১ জুলাই ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আলোকিত ডেস্ক
রাশিয়ার পূর্ব উপকূলীয় এলাকায় ৮ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। স্থানীয় সময় বুধবার সকাল ৮টা ২৫ মিনিটে এ ভূকম্পন অনুভূত হয় বলে জানায় যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস)। যুক্তরাষ্ট্র, জাপানসহ বিভিন্ন দেশের আবহাওয়া সংস্থা ও সুনামি সতর্কতা কেন্দ্রগুলো একযোগে সতর্কতা জারি করেছে। তিনটি ভিন্ন মাত্রার ঢেউয়ের আশঙ্কা অনুযায়ী বিশ্বের ৫২টি দেশ ও অঞ্চল এই সতর্কতার আওতায় এসেছে।
ইউএসজিএস শুরুতে বলেছিল, রিখটার স্কেলে এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৮। পরে তা সংশোধন করে ৮ দশমিক ৭ করা হয়। তারা আবারও সংশোধন করে ৮ দশমিক ৮ করে। সংস্থাটি বলছে, ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল রাশিয়ার রাশিয়ার পেত্রোপাভলোভস্ক-কামচাতস্কি শহর থেকে ১৩৬ কিলোমিটার বা প্রায় ৮৫ মাইল পূর্বে, প্রশান্ত মহাসাগরের তলদেশে। রাশিয়ার উপকূলে এই শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর জাপানের আবহাওয়া সংস্থা সুনামি সতর্কতা জারি করে। সতর্কবার্তায় বলা হয়, জাপানের পূর্ব উপকূলে এক মিটার বা ৩ দশমিক ৩ ফুট উচ্চতার সুনামি আঘাত হানতে পারে।
হালনাগাদ সতর্কবার্তায় বলা হয়, জাপানের হোক্কাইডোর উত্তরাঞ্চলে আজ স্থানীয় সময় সকাল ১০টা থেকে তিন মিটারের বেশি উচ্চতার সুনামি আঘাত হানতে পারে। ধীরে ধীরে তা দক্ষিণে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে ভূমিকম্পের পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের প্রশান্ত মহাসাগরীয় সুনামি সতর্কীকরণ কেন্দ্র দেশটির হাওয়াই অঙ্গরাজ্যের জন্য তাৎক্ষণিক ‘সুনামি নজরদারি’ ঘোষণা করেছে। একই ধরনের সতর্কতা জারি করা হয়েছে তাইওয়ানেও।
এই শক্তিশালী ভূমিকম্পে রাশিয়ায় এখনো হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। দেশটির কামচ্যাটকা উপদ্বীপে গত কয়েক দশকের মধ্যে এটিই সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প। কামচাতস্কার গভর্নর ভ্লাদিমির সোলোদভ টেলিগ্রামে পোস্ট করা এক ভিডিওতে বলেন, আজকের ভূমিকম্পটি বেশ গুরুতর ছিল। এটি গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী। প্রাথমিক তথ্যে কারও হতাহতের খবর মেলেনি। তবে একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গভর্নর আরও জানান, সুনামি সতর্কতা জারির পর স্থানীয় শাখালিন অঞ্চলের ছোট একটি শহর থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে উচ্চতার সুনামির ঝুঁকিতে রয়েছে তিনটি দেশ ও অঞ্চল। এগুলো হচ্ছে রাশিয়া, ইকুয়েডর এবং উত্তর-পশ্চিম হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ। এদিকে, এক থেকে তিন মিটার ঢেউয়ের আশঙ্কায় রয়েছে ১৪টি দেশ ও অঞ্চল। এদের মধ্য রয়েছে চিলি, কোস্টারিকা, ফ্রেঞ্চ পলিনেশিয়া, গুয়াম, হাওয়াই, জাপান, জার্ভিস আইল্যান্ড, জনস্টন অ্যাটল, কিরিবাতি, মিডওয়ে আইল্যান্ড, পালমিরা আইল্যান্ড, পেরু, সামোয়া ও সলোমন দ্বীপপুঞ্জ। খবর লাইভমিন্টের। শূন্য দশমিক ৩ থেকে এক মিটার উচ্চতার ঢেউয়ের সতর্কতায় রয়েছে ৩৫টি দেশ ও অঞ্চল। এসব হচ্ছে, অ্যান্টার্কটিকা, অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, ফিজি, নিউজিল্যান্ড, পাপুয়া নিউ গিনি, তিউনিসিয়া, টোঙ্গা, তুভালু, ভানুয়াতু, কলম্বিয়া, মেক্সিকো, নিকারাগুয়া, এল সালভাদর, কুক আইল্যান্ডস, কেরমাডেক দ্বীপপুঞ্জ, কসরে, মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ, পিটকায়ার্ন, চুক, পোহ্নপেই, নাউরু, নিউ ক্যালেডোনিয়া, নিয়ুয়ে, প্যালাউ, পানামা, উত্তর মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জ, তাইওয়ান, হাওল্যান্ড ও বেকার দ্বীপপুঞ্জ, জন্সটন অ্যাটল, জার্ভিস আইল্যান্ড, ওয়েক আইল্যান্ড, টোকেলাও। ইতোমধ্যে রাশিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলে সুনামির ঢেউ ৩-৪ মিটার পর্যন্ত উঠেছে, এবং উপকূলবর্তী শহরগুলো থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে হাজারো মানুষকে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, ভূমিকম্পের পরবর্তী কয়েক ঘণ্টা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সময়। উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলোতে জনসচেতনতা ও সতর্কতা বজায় রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে। সুনামির সম্ভাব্য ঢেউ যে কোনো সময় আছড়ে পড়তে পারে, তাই সব দেশকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে বলছে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো।
