সুসংবাদ প্রতিদিন
তাড়াইলে বিষমুক্ত সবজি চাষে সাফল্য
প্রকাশ : ১০ আগস্ট ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
রুহুল আমিন, তাড়াইল (কিশোরগঞ্জ)

কিশোরগঞ্জের তাড়াইলের শেখ আলিউর রহমানের কীটনাশকমুক্ত লাউসহ বিভিন্ন প্রকারের সবজি চাষ এলাকায় দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। গত শুক্রবার উপজেলার তাড়াইল-সাচাইল সদর ইউনিয়নের শামুকজানী গ্রামে গিয়ে জানা যায়, তাহের উদ্দিনের ছেলে শেখ আলিউর রহমান। কীটনাশকবিহীন বিভিন্ন প্রকারের নিরাপদ সবজি উৎপাদনে উদ্যোগী হয়ে ৫০ শতাংশ পতিত জমিতে চাষাবাদ করে পিতাপুত্র তারা আজ সফল উদ্যোক্তা। নির্বিষ সবজি উৎপাদনকারী সফল কৃষক শেখ আলিউর রহমান এলাকায় অন্যান্য কৃষকদের কাছে দিনদিন অনুপ্রেরণা হয়ে উঠছেন। তার চোখে শুধু মাঠভরা সবুজ সবজিখেত। মানুষকে নির্বিষ-নিরাপদ শাকসবজি খাওয়ানোই তার একমাত্র লক্ষ্য ও প্রচেষ্টা। এলাকার সচেতন মহল বলেন, বাজারে সবজি-ফলমূলে কীটনাশক এখন নীরব ঘাতক হয়ে উঠেছে। কোনো উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়েই সবাইকে বাজারের সবজি ফলমূল খেতে হচ্ছে। কিন্তু এসব ফল বা সবজিতে কীটনাশকের ব্যবহার কেমন তা কেউ জানে না। অনিয়ন্ত্রিত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে এসব ফল বা সবজি উপকারের বদলে মানুষের শরীরে ক্ষতিকর রাসায়নিক ছড়িয়ে দিচ্ছে।
শেখ আলিউর রহমান বলেন, ২০ শতাংশ পতিত জমিতে ডায়না জাতের লাউ চাষ করেছি, ২০ শতাংশ জমিতে ঢ্যাঁড়শ চাষ করেছি এবং ১০ শতাংশ জমিতে শিম চাষ করেছি। দৃঢ মনোবল আর কঠোর পরিশ্রমে বিভিন্ন প্রকারের দিগন্ত জোড়া কীটনাশকমুক্ত সবুজ সবজিখেত গড়ে তুলেছি। তিনি আরো বলেন, কৃষি বিভাগ থেকে নিরাপদ সবজি উৎপাদনের কলাকৌশল শেখানোসহ সব ধরনের পরামর্শ-সহায়তা দিচ্ছেন। লাউ, ঢ্যাঁড়শ, শিম, কচুরলতা, লেবু, পেঁপে, কাকরোল, চিচিঙ্গা, করল্লা, ধুন্দল, তিতাকরলা, কাঁকরোল, টম্যাটো, বেগুন ইত্যাদি সবজি ছাড়াও আছে লেবুবাগান। লাউখেতের মাচায় দুলছে লাউ আর লাউ। আশা করছি ৫/৬ লাখ টাকা বিক্রি করতে পারব। সবজির পাশাপাশি পেয়ারা, কলা, কুল (বড়ই) চাষেরও পরিকল্পনা নিয়েছেন তিনি।
উপজেলার তাড়াইল-সাচাইল সদর ইউনিয়নের শামুকজানী গ্রামের অসীম ভৌমিক বলেন, কয়েক বছরের পরিশ্রমে শেখ আলিউর রহমান দেখা পেয়েছেন সাফল্যের। এখন দূর-দূরান্ত হতে প্রতিদিনই উৎসুক লোকজন তাদের বিভিন্ন প্রকারের সবজি বাগান দেখতে আসেন। তিনি আরও বলেন, তাদের সবজির কদর বেশি হওয়ার কারণ একটাই, নির্বিষ, নিরাপদ সবজি। তারা খেতে বিষ বা ক্ষতিকর কীটনাশক ওষুধ প্রয়োগ করেন না। রাসায়নিক সারের ব্যবহারও কম করেন। জৈব পদ্ধতিতে চাষাবাদে সহজেই যে পোকামাকড় দমন করা যায় এখানে না এলে বিশ্বাস করতাম না। তাড়াইল উপজেলা কৃষি উপসহকারী কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, শেখ আলিউর রহমান নিরাপদ ফসল উৎপাদনের জন্য পেরোমোন জৈব পদ্ধতি এবং জৈব সার ব্যবহার করা হয়। এই দুটি বালাই দমন পদ্ধতির কারণে কীটনাশক ছাডাই পোকামাকড় দমন করা সহজ হচ্ছে। জৈব পদ্ধতিতে খরচও কম। তিনি আরও জানান, তার প্রজেক্টে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় লাউ। কীটনাশক ছাড়াও যে জৈব পদ্ধতিতে বালাই দমন করে নিরাপদ ফসল উৎপাদন করা যায় কৃষকরা এখানে এসে শিখছেন। তাড়াইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ বিকাশ রায় বলেন, সফল তরুণ উদ্যোক্তা শেখ আলিউর রহমান আরও বেশি অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের জন্য প্রশিক্ষণে পাঠানোর উদ্যোগ রয়েছে কৃষি বিভাগের। এদিকে বিষ বা কীটনাশক প্রয়োগ না করে জৈব প্রযুক্তির মাধ্যমে নিরাপদ সবজি চাষের কলাকৌশল দেখে প্রতিবেশীরা উৎসাহী হয়ে ওঠছেন। তিনি আরও বলেন, সরকার নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে বেশ জোর দিয়েছে। এ অবস্থায় বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি উৎপাদনের সফলতা সারা দেশের জন্য একটি সুসংবাদ।
