চট্টগ্রামে চাকরিচ্যুতদের বিক্ষোভ ৪ ঘণ্টা পর ২০ ব্যাংক সচল
প্রকাশ : ১১ আগস্ট ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
চট্টগ্রাম ব্যুরো
দেশের ৬টি বেসরকারি ব্যাংক থেকে চাকরিচ্যুত কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিক্ষোভের মুখে চট্টগ্রামের পটিয়ায় অন্তত ২০টি ব্যাংকের কার্যক্রম চার ঘণ্টা বন্ধ ছিল। এতে বিপাকে পড়েন ব্যাংক ও এটিএম বুথে সেবা নিতে আসা মানুষেরা। গতকাল রোববার সকাল নয়টা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিক্ষোভ শুরু করেন।
বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, গত বছরের আগস্টে সরকার পরিবর্তনের পর বেসরকারি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, আল আরাফাহ্? ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে প্রায় সাত হাজার কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এর অধিকাংশই চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার বাসিন্দা। বেশ কিছু দিন ধরে চাকরিচ্যুত ব্যক্তিরা চাকরি ফিরে পাওয়ার দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। তাদের দাবি, বিনা নোটিশে, বিনা কারণে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল সকাল সাতটায় পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য পটিয়া আদর্শ বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে জড়ো হন চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পরে সেখান থেকে সকাল নয়টার দিকে পটিয়ায় অবস্থিত সব ব্যাংকের শাখার সামনে একযোগে অবস্থান নেন তারা। তাদের বাধার মুখে ব্যাংকগুলোয় ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সেবাগ্রহীতা ঢুকতে পারেননি। এসব ব্যাংকের মধ্যে ৬টি সরকারি ও ১৪টি বেসরকারি রয়েছে।
এ বিষয়ে জনতা ব্যাংকের পটিয়া শাখার ব্যবস্থাপক নাজিম উদ্দিন বলেন, গত শুক্র ও শনিবার ব্যাংক বন্ধ থাকায় রোববার গ্রাহকের চাপ বেশি থাকে। অনেক গ্রাহক সেবা না পেয়ে ফিরে যায়। আবার অনেকেই তাদের ফোন দেন। আন্দোলনকারীরা চার ঘণ্টা অবরোধ করে রাখায় গ্রাহকের সেবা দিতে পারেননি।
আন্দোলনকারীদের একজন শিবলু আলম। তিনি সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের চুয়াডাঙ্গা শাখার ক্যাশ অফিসার ছিলেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, হঠাৎ কোনো কারণ ছাড়াই তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তিনি অসহায় হয়ে পড়েছেন। চাকরি ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত তিনি অন্যদের সঙ্গে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। হঠাৎ ব্যাংকের কার্যক্রম বন্ধে ভোগান্তিতে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দারা। গতকাল বেলা ১১টার দিকে পটিয়া সদরের সোনালী ব্যাংকের শাখার সামনে কথা হয় স্কুলশিক্ষক আবুল কালামের সঙ্গে। তিনি বলেন, তার বেতনের টাকা তোলার জন্য ব্যাংকে আসেন। তবে বন্ধ থাকায় তিনি সেবা নিতে পারেননি। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পৌর সদরের থানার মোড়ের একটি কার্যালয়ে আন্দোলনরতদের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেন পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারহানুর রহমান, চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আসাদুজ্জামান, পটিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান ও পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুজ্জামান। বৈঠকের পর দুপুর ১টার দিকে কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়া হয়।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া নজরুল ইসলাম নামে একজন বলেন, ‘গতকাল সকাল থেকে পটিয়ায় সবকটি ব্যাংক বন্ধ করে চাকরি ফিরে পাওয়ার দাবিতে আমরা আন্দোলন করেছি। পরে প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকের পর কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছি।’ পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নূরুজ্জামান বলেন, বৈঠকে কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছেন তারা। এখন স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সবকিছু চলছে।
জনতা ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘আন্দোলনকারীরা ব্যাংকের প্রধান ফটক খুলে দেওয়ার পর কার্যালয়ে প্রবেশ করেছি আমরা। এরপর ব্যাংকের লেনদেন শুরু হয়।’
